‘নামভূমিকায়’ (২৮-৬) নিবন্ধে একপেশে ভাবে চিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর গুণগান করা হয়েছে। চিনফিং জনগণ এবং পার্টির সদস্যদের গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পূর্ণ ভাবে হরণ করেছেন! রাষ্ট্র ও কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে নির্মূল করে আজীবন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাশাপাশি দেশের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান ও চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারির পদটিও নিজের দখলে রেখেছেন। একে স্বৈরাচার ছাড়া আর কী বলে? ক্ষমতা দখলের নিরিখে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিটলার ও মুসোলিনির চেয়ে কতটা আলাদা?
তাঁর শাসনকালে অরুণাচলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল চিন দখল করে রেখেছে। চিনের আর্থিক সাহায্য ও পরোক্ষ উস্কানিতে নেপালের মতো ক্ষুদ্র এবং ভারতবন্ধু দেশও হঠাৎ তাদের মানচিত্রে ভারতের ভূমিকে নিজেদের বলে দাবি করছে। এখন আবার চিন জোর করে লাদাখের কিছু অঞ্চলও দখল করেছে। তাঁর আমলেই চিন অরুণাচলের মানুষদের চিন-এ যাওয়ার আলাদা ভিসা চালু করেছিল। অর্থাৎ চিন প্রকারান্তরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে চাইছে যে, অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়, এটি একটি আলাদা রাষ্ট্র। দক্ষিণ চিন সমুদ্র-তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চিন নয়া উপনিবেশ স্থাপন করেছে। এর মধ্য দিয়ে শি চিনফিং-এর সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রই প্রকট।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
বয়কটের বিপদ
‘উৎকট বয়কট’ (২৩-৬) সময়োচিত সম্পাদকীয় নিবন্ধ। হঠাৎ চিনের দ্রব্য বয়কট করব বললেই করা যায় না। যে দিন আমরা সব পণ্য নিজেরাই ওদের মতো বা আরও ভাল করে তৈরি করতে পারব, সে দিন অবশ্যই চিনা পণ্য ভেঙে ফেলার সাহস দেখাব। আর যাঁরা ভাঙছেন, নিশ্চয়ই তাঁরা অর্থনৈতিক দিক থেকে সচ্ছল। চিনেও আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে, সেগুলো বন্ধ হলে বিপদ বাড়বে। এ ছাড়া আমাদের দেশের সঙ্গে চিনের একাধিক চুক্তি রয়েছে। চিনা দ্রব্য বয়কট করলে বিপদ আছে।
অমরেন্দ্র নাথ ধর
কলকাতা-৫১
ওঁদের কী হবে?
ভারতীয় সেনাদের নৃশংস হত্যার অপরাধে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। দেশের স্বার্থে আমাদের এই বয়কটে অংশ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। কিন্তু এর পরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। যদি চিন সরকার ভারতের এই সিদ্ধান্তকে কঠোর ভাবে মোকাবিলার জন্য ভারতে তাদের পণ্য রফতানি বন্ধ করে দেয় ও ভারত থেকে আমদানিও না করে, তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তার কী প্রভাব পড়বে, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। শুধু যে বেশি দামে অন্যান্য দেশের পণ্য কিনতে হবে তা-ই নয়, আমরা ভারতে তৈরি কোনও জিনিস চিনে রফতানিও করতে পারব না। বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী) যদি চিন ভারতে রফতানি বন্ধ করে দেয়, তা হলে আমাদের কঠিন সময়ের মধ্যে পড়তে হতে পারে।
বিভিন্ন অ্যাপের সঙ্গে আমাদের দেশের আইটি ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষ নিযুক্ত আছেন। যদি সেগুলিও বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে সেই সব কর্মীদের কী হবে? তাঁদের কাজের কোনও ব্যবস্থা হয়েছে কি?
শেষ প্রশ্ন, বিভিন্ন সমাজমাধ্যম (যেমন টিকটক, ভিগো ভিডিয়ো ইত্যাদি) অথবা গেমিং অ্যাপ্লিকেশন-এর মাধ্যমে অনেকে কিছু আয় করত। দেশে এখন বেকারত্বের চরম সীমায় পৌঁছে তাঁরা কী করে রোজগারের বিকল্প রাস্তা খুঁজে পাবেন?
সইদ আনোয়ার
বর্ধমান
সাইবার-হানা
মহারাষ্ট্রের সাইবার সিকিয়োরিটি সেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত কয়েক দিনে ৪০ হাজারেরও বেশি বার চিনের হ্যাকাররা আমাদের দেশের পরিকাঠামো, ব্যাঙ্কিং এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আক্রমণের চেষ্টা করেছে। সুতরাং, যুদ্ধ শুধুমাত্র সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নেই। হ্যাকারদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সরকার থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই এত দিন মোটের উপর উদাসীন ছিল। মোবাইলে তথ্য সুরক্ষিত রাখতে কী করণীয়, সে বিষয়ে আমজনতাকে সচেতন ও সতর্ক করতে আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি পদক্ষেপও করা হয়েছে কি?
কয়েক দিন আগে টিভিতে একটি আলোচনায় এক জন বক্তার কথা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। তিনি বললেন, আমাদের দেশে ব্যবহার করা বেশির ভাগ সফটওয়্যার চিনে বানানো। এ ক্ষেত্রে চিনারা সত্যিই ‘আত্মনির্ভর’। আরও বলেন, স্মার্টফোনে প্রি-ইনস্টলড অ্যাপসের তথ্যভান্ডার ওদের কাছেই আছে। এই মুহূর্তে, ভারতের কোটি কোটি মানুষের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে এবং তাতে অধিকাংশের ব্যাঙ্কের তথ্য ভরা। দৈনন্দিন জীবনেও আমরা নানা সময় স্মার্টফোনেই ক্যাশলেস টাকা ব্যয়-বিনিময় সেরে নিই। করোনা কালে এই প্রবণতা বহু গুণ বেড়েছে। ভয় হচ্ছে, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র স্বপ্ন দেশের মানুষের জীবনে আর এক দুর্দিন বয়ে নিয়ে আসবে না তো?
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
বৈঠকি অ্যাপ
দীর্ঘ লকডাউনে বেশির ভাগ পরিষেবা ক্ষেত্রের কর্মীরা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর মাধ্যমে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের সাহায্য করেছে জ়ুম, স্কাইপ, ওয়েবেক্স-এর মতো অ্যাপ। মার্চ মাসের পর থেকে স্কাইপ-এর জনপ্রিয়তাকে টপকে ‘জ়ুম’ অ্যাপটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু শীঘ্রই এর মাধ্যমে চিনকে তথ্য পাচারের অভিযোগ ওঠে। তড়িঘড়ি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জ়ুম অ্যাপ নিরাপদ নয় বলে ঘোষণা করে। প্রসঙ্গত, চিন নিজেই এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করে রেখেছিল নিজের দেশে। তাইওয়ানও সরকারি ক্ষেত্রে জ়ুম অ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারত কবে তার নিজস্ব ভিডিয়ো কনফারেন্সিং অ্যাপ প্রস্তুত করবে?
সায়ন্তন টাট
জাঙ্গিপাড়া, হুগলি
আত্মসমর্পণ কেন
শহিদ সেনাদের উদ্দেশে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। কিন্তু প্রশ্ন জাগছে, কেন এই অসহায় আত্মসমর্পণ? সে দিন যে চিনা সৈন্যরা কাঁটাতার আর পেরেক লাগানো লাঠি নিয়ে ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল, ভারতীয় সেনা গুলি চালালে ফের সীমানা লঙ্ঘনের আগে দশ বার ভাবতে হত তাদের। যুদ্ধ কাম্য নয় কখনওই, কিন্তু নিজের ভূখণ্ড বাঁচাতে যুদ্ধ দরকার হলে তা করতে হত। এ ভারত শত্রুর চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে পারে, প্রয়োজনে আঘাতও হানতে পারে— এ বার্তা পৌঁছে যেত শত্রু শিবিরে।
স্বপন চক্রবর্তী
চাঙলাং, অরুণাচল প্রদেশ
এত দিন পর?
কেন্দ্রের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের মতে, ভারতের সুরক্ষা, সংহতি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আইনের ৬৯ক ধারায় ভারতে চিনা অ্যাপগুলির প্রয়োগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল (‘নিষিদ্ধ টিকটক-সহ ৫৯’, ৩০-৬ )।
বহু আগে থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, এমনকি সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন সংগঠন এই চিনা অ্যাপগুলি বন্ধের কথা বলে আসছে। দীর্ঘ দিন এই অ্যাপগুলো ব্যবহারের ফলে অনেক গোপন তথ্য চিনের সংগ্রহে চলে গিয়েছে। তার পর এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। সীমান্তে প্রচুর ভারতীয় সেনা শহিদ না হলে এই সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করত কি না, তাতে সন্দেহ রয়েছে।
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-৫৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।