সম্পাদক সমীপেষু: তন্দ্রা বর্মন চলে গেলেন

১৯৬২ সালে অজয় করের ‘অতল জলের আহ্বান’ ছবিতে তাঁর অভিনয় স্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর বিপরীতে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share:

১৯ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট অভিনেত্রী তন্দ্রা বর্মন। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালে ৩১ অগস্ট। অভিনয় তো পারতেনই, ভাল নাচতেও পারতেন। বাবা নরেন্দ্রনাথ বর্মনের বন্ধু হেমেন্দ্র মিত্রের ‘দুই তীর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান। কিন্তু ছবিটি মহরতের পর বন্ধ হয়ে যায়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অপরাজিত’ ছবিতেও সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ অবধি হয়ে ওঠেনি। এর পর ১৯৫৮ সালে অভিনয় করেন নীরেন লাহিড়ী পরিচালিত ‘তানসেন’ ছবিতে। তাঁর এক আত্মীয় প্রযোজক গোবিন্দ বর্মন নিজের ‘ভিজে বেড়াল’ ছবিতে তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এই ছবিটিও মুক্তি পায়নি। কিন্তু এই ছবিতে অভিনয়ের সময় বিকাশ রায়ের নজরে আসেন। তখন নতুন ছবির জন্য নতুন মুখের খোঁজ করছিলেন বিকাশ রায়। ১৯৬১ সালে বিকাশ রায় পরিচালিত ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ ছবিতে তন্দ্রা নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

Advertisement

১৯৬২ সালে অজয় করের ‘অতল জলের আহ্বান’ ছবিতে তাঁর অভিনয় স্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর বিপরীতে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে এই ছবিতে তাঁর লিপে সুজাতা চক্রবর্তীর গাওয়া ‘ভুল সবই ভুল’ গানটি আজও বিখ্যাত। ১৯৬৩ সালে বিনু বর্ধন পরিচালিত ‘এক টুকরো আগুন’ ছবিতে বিশ্বজিতের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘ওগো মোর প্রিয় বন্ধু’ গানটি তাঁর লিপে খুবই জনপ্রিয় হয়। ওই বছরেই অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অসীম পাল পরিচালিত ‘দুই বাড়ি’ ছবিতে। মঙ্গল চক্রবর্তী পরিচালিত ‘ন্যায়দণ্ড’ ছবিতেও অভিনয় করেন। প্রচুর ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও, চরিত্র মনের মতো হয়নি বলে, অনেক ছবি করেননি। শোনা যায়, তপন সিংহের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ ছবিটিরও প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে অভিনয় করেছিলেন অসিতবরণের সঙ্গে ‘সেবা’ ছবিতে। ১৯৭০ সালে উত্তমকুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘মঞ্জুরী অপেরা’ ছবিতে, অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

সাফল্যের মধ্যগগনে থাকা সত্ত্বেও অভিনয়জীবন ছেড়ে দেন সংসারের জন্য। শেষ অভিনয় করেছিলেন ১৯৭৯ সালে অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘আমি রতন’ ছবিতে। দু-একটি টেলিফিল্মেও অভিনয় করেন।

Advertisement

শেষের দিকে কিছুটা অভিমানী হয়ে প্রচারমাধ্যম থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতেন। তাঁর নিঃশব্দে চলে যাওয়াটা একটা ট্র্যাজেডি। যেন ‘অতল জলের আহ্বান’ ছবির গানের মতনই— ‘ভুল সবই ভুল/ এই জীবনের পাতায় পাতায় / যা লেখা সে ভুল/ ভুল সবই ভুল/ এই শ্রাবণে মোর ফাগুন যদি/ দেয় দেখা সে ভুল’।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

কলকাতা-১০৫

খামখেয়ালি

‘অক্লান্তকণ্ঠ এক সংগীত-সন্ন্যাসী...’ (পত্রিকা, ২৪-২) শীর্ষক নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘‘১৮৯৬ সালে রবীন্দ্রনাথ গড়েছিলেন ‘খামখেয়ালী সভা’, সদস্য ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল, মহারাজা জগদীন্দ্রনারায়ণ রায়...’’ এই তথ্যটির সূত্র অবশ্যই অতুলপ্রসাদ সেনের লেখা ‘আমার কয়েকটি রবীন্দ্র-স্মৃতি’ প্রবন্ধ। কিন্তু এটি পুরোপুরি ঠিক তথ্য নয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর স্মৃতিচারণা গ্রন্থ ‘ঘরোয়া’য় ‘খামখেয়ালী সভা’র সূচনার তারিখটি বলেছেন ২৪ মাঘ ১৩০৩ বঙ্গাব্দ। রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিতে লিখেছেন, ‘২৪ মাঘ ১৩০৩/জোড়াসাঁকো-খামখেয়ালী সভার সূচনা। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাবমত এই সভার প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়’ (‘রবীন্দ্রভবন সংগ্রহ নির্মীয়মাণ তালিকা’র দ্বিতীয় খণ্ড)। রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল ‘রবিজীবনী’র চতুর্থ খণ্ডে লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথের প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠিত খামখেয়ালি সভার প্রথম অধিবেশন হয় ২৪ মাঘ ১৩০৩ (শুক্রবার ৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭) তারিখে।’

লেখক অতুলপ্রসাদ সেনের মতোই নাটোরের রাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়কে ভুল করে জগদিন্দ্রনারায়ণ রায় বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘পঞ্চভূত’ প্রবন্ধের বইটি নাটোরের রাজাকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন, ‘মহারাজ শ্রীজগদিন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর সুহৃদ্বরকরকমলেষু।’

পীযূষ রায়

বেহালা

মন্দির ধ্বংস

‘মুঘল কাশীর ইতিবৃত্ত’ (২৫-২) নিবন্ধের লেখক যদি আওরঙ্গজেব কর্তৃক বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের প্রকৃত কারণটি স্পষ্ট উল্লেখ করতেন, পাঠকগণ আরও সমৃদ্ধ হতেন। দুঃখের বিষয়, আমাদের পাঠ্য ইতিহাসেও ঘটনাটি উল্লিখিত হয় না।

বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের মূল কারণ হল: আওরঙ্গজেবের বাংলা অভিযানের সময় বহু হিন্দু রাজা তাঁর সহযাত্রী হন। কাশীতে শিবির স্থাপন করা হলে, হিন্দু রাজাদের রানিরা গঙ্গাস্নান সেরে পুজো দিতে যান। পুজো দিয়ে ফেরার পথে দেখা যায়, কচ্ছের রানিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাশী তোলপাড় করে শেষে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় বিশ্বনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে, ধর্ষিত অবস্থায়। ক্ষুব্ধ হিন্দু রাজারা এই ঘটনার প্রতিকার চান। ইতিহাসবিদ বি এন পান্ডে তাঁর ‘ইসলাম ও ভারতীয় সংস্কৃতি’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘... (আওরঙ্গজেব) রাণীর খোঁজে পাঠালেন কর্মচারীদের। শেষ পর্যন্ত তাঁরা... নিখোঁজ রাণীকে দেখতে পেলেন ধর্ষিতা আর ক্রন্দনরতা অবস্থায়। ভূতল কক্ষটি ছিল প্রভু বিশ্বনাথ দেবের ঠিক নিচেই। রাজারা সোচ্চার প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন। ...আওরঙ্গজেব আদেশ দিলেন, পবিত্র বিশ্বনাথ যেহেতু কলুষিত হয়েছে, অতএব প্রভু বিশ্বনাথকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হোক। মন্দির ভূমিসাৎ হোক। আর মোহান্তকে বন্দী করে শাস্তি দেওয়া হোক।’ (পৃ ৪৮-৪৯)।

পট্টভি সীতারামাইয়াও প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে এই তথ্য তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন (সীতারামাইয়া, ফেদার্স অ্যান্ড স্টোনস, পৃ ১৭৭-৭৮)। আরও দেখুন মণিশংকর আইয়ার-এর ‘কনফেশনস অব আ সেকুলার ফান্ডামেন্টালিস্ট’, পৃ ৬৫। আওরঙ্গজেব মন্দির ভেঙে ওই স্থানেই মসজিদ নির্মাণ করেন— এ অপবাদ বানানো, মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ভিন্ন সময়ে এবং ভিন্ন জমিতে।

বেনারস ছিল হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান। সেখানকার অধিকাংশ মন্দির আওরঙ্গজেবের সমগ্র রাজত্বকাল জুড়ে (১৬৫৮-১৭০৭) অক্ষত ছিল, শুধু কয়েকটি মন্দির না ধ্বংস করে উপায় ছিল না। তা ছাড়া মরাঠা ও রাজপুতদের ক্ষমতা-প্রতিপত্তিতে বিদ্রোহীদের সাহস ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলে দেশের নানা স্থানে যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র ও বিপ্লববাদের সূত্রপাত হয়। হিন্দুদের বড় বড় মন্দিরসমূহ রাজদ্রোহিতা ও ষড়যন্ত্রের প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে পড়ছিল। যুদ্ধের সময় অধিকাংশ স্থানে তারা দেবমন্দিরে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করত।

বেনারস, উদয়পুর ও জোধপুরে রাষ্ট্রবিপ্লব ও বিদ্রোহ হওয়াতেই আওরঙ্গজেব সৈন্যচালনা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতেই হিন্দুদের কিছু মন্দির ধ্বংস হয়েছিল। শ্রীরাম শর্মা বলেন, বেনারসের হিন্দুরা ১৬৬৭ সালে একটি নির্মীয়মাণ মসজিদ ধ্বংস করে। এমনকী তারা মিস্ত্রিদেরও আহত করে। এ জন্য মুসলমানেরা বেনারসের কিছু মন্দির ধ্বংস করে (শ্রীরাম শর্মা, ‘দ্য রিলিজিয়াস পলিসি অব দ্য মুঘল এম্পাররস’, পৃ ১৩১)।

আমিনুল ইসলাম

ঢেকুয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

ভ্রম সংশোধন

এই পত্রিকার কিছু সংস্করণে বিশ্বভারতী সংক্রান্ত সংবাদে (‘অনিয়ম মেটান...’, ২৪-৩) বিশ্বভারতীর উপাচার্যের নাম সবুজকলি দত্ত লেখা হয়েছে। হবে সবুজকলি সেন। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement