উদীয়মান দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে হলে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে এবং তার জন্য ‘নকল বুদ্ধি আসল ওষুধ’ বলে দাবি করেছেন ভাস্কর চক্রবর্তী (২৬-৭)। উৎপাদন বাড়বে, দেশ উন্নত হবে; কিন্তু উৎপাদক ও সম্ভাব্য উৎপাদকদের (বেকার জনতা) কী হবে? তার দাওয়াইও, লেখকের মতে, নকল বুদ্ধিই। যন্ত্রের উৎকর্ষ বাড়লে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, কিন্তু যে পরিমাণে নতুন কাজের সৃষ্টি হয়, পুরনো কাজের বিলুপ্তি হয় তার চেয়ে বেশি, অনেক বেশি পরিমাণে। ফলে বেকার সংখ্যা কমে না, বাড়ে, বেড়েই চলে। সবাই মানবেন, এ তাবৎ কাল অবধি আবিষ্কৃত যা কিছুর তুলনায় ‘নকল বুদ্ধি’ যদি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ না-ও হয়, গুণগত ভাবে সবার চেয়ে ভিন্ন নিশ্চয়ই। স্মার্ট ফোনের ফেসবুক ধরনের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ‘নকল বুদ্ধি’কে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি মানুষের ওপর নজরদারি যে করা যায় এবং করাও হয়, তা আজ সর্বজনবিদিত। সে প্রসঙ্গ আপাতত সরিয়ে রাখলেও, কাজ তো চাই, বেকারদের কাজ চাই। ভুখা পেটের মানুষের কী এসে যায় উৎপাদনশীলতা বাড়লে, উদীয়মান থেকে দেশ উন্নত হলে? ‘নকল বুদ্ধি’র দৌলতে সুন্দর পিচাইরা রোজ দু’চার কোটি কামাবেন, আর কাজের অভাবে অগণিত মানুষ অন্নের জন্য হাহাকার করবেন, এ জিনিস দীর্ঘ কাল চলতে পারে না। চলতে পারে, যদি কাজের সময় কমিয়ে দিয়ে উৎপাদকদের আরাম দেওয়া যায়, যেমনটা নিউজ়িল্যান্ডের একটি বেসরকারি কোম্পানি করতে পেরেছে। দৈনিক সেই আট ঘণ্টা কাজ, অথচ উপস্থিতি সপ্তাহে মাত্র চার দিন। বেড়েছে উৎপাদনশীলতা, বেড়েছে কর্মচারীদের জীবনের মান। এ তো গেল উৎপাদকদের কথা, যাদের কাজ আছে তাদের কথা। যাদের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না, সেই বেকারবাহিনীর কী হবে? এ রকম বিকল্প কিছুর হদিস না দিতে পারলে, ভাস্করবাবুদের স্রেফ ‘নকল বুদ্ধি’র জয়গান, বহু মানুষের কাছে নিরোর বেহালাবাদনের মতোই অসহ্য ঠেকবে।
চিত্ত মুখোপাধ্যায়
কাঁটাপুকুর, পূর্ব বর্ধমান
স্কুলের ব্যাগ
2 ‘স্কুলের ব্যাগই ৯ কেজি’ (২৩-৮) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, দয়া করে আইন কী বলছে এ বিষয়ে, তা ছাপবেন না। কারণ, আইন দিয়ে সমাজের সব বিষয়ের সমাধান সম্ভব নয়। বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম। অভিভাবক থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা, সবাই ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। আর নিজের নিজের স্কুলের ক্ষেত্রে সাফাই গেয়ে হাত ধুয়ে ফেলছেন। এ সমস্যার সমাধানের জন্য চাই মানবিকতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং চেনা চিন্তার ছক থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে ভাবা। পরিবেশ বাঁচানোর তাগিদে যেমন কার-পুল এখন অতি জনপ্রিয় এক ভাবনা, একই রকম ভাবে একই বেঞ্চে বসা পাশাপাশি চার জন একটি করে বিষয়ের বই নিয়ে এলে, সারা দিনে তাদের সবাইকে দু’টি বিষয়ের বই বহন করতে হবে, যদি বিদ্যালয়ে আটটি পিরিয়ড হয় ধরে নিই। এতে তাদের মধ্যে নানা মানবিক গুণাবলিরও বিকাশ ঘটা সম্ভব, ফর্ম্যাটিভ ইভালুয়েশনে যেগুলির উপর নজর দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, স্পাইরাল বাইন্ডিং-এ একটি নামী কোম্পানির খাতায় ছ’টি ভাগ আছে। সে রকম খাতার ভাবনাও ফলপ্রসূ হতে পারে। ছ’টি বিষয় সেখানে থাকতেই পারে। সরকার তো এখন স্কুলে স্কুলে খাতা দিচ্ছে। এই ধরনের খাতার পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। তবে আসল কথাটি হল, এ সব নিয়ে ভাবার সময় আমাদের আছে তো? না কি মাঝে মাঝে রুটিনমাফিক কাগুজে হইচইয়ের পর আবার আমরা চুপ করে যাব? এবং নিজের সন্তানের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখটা দেখে চোখের জল চাপব!
না কি বইয়ের ভারে নুয়ে পড়া পিঠকে বাঁচাতে, পরের বছর থেকে কেন্দ্রীয় বোর্ডের বইয়ের পৃষ্ঠা অর্ধেক হবে— এর মতো নির্বোধ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব?
পার্থ প্রতিম চৌধুরী
কোন্নগর, হুগলি
পুলিশের ১০০
জীবনে প্রথম বারের জন্য পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন করার দরকার পড়েছিল। আমার মতো বেশির ভাগ মানুষই বোধ হয় এই নম্বরে এক বার ফোন করলে দ্বিতীয় বার আর করেন না। ফোন করেছিলাম জরুরি কারণে। এক পরিচিত মহিলা ফোন করে বললেন, উলুবেড়িয়ার কাছে এক কলেজে একদল ছাত্র ধর্মঘট করছে, ছাত্র-শিক্ষক কাউকে গেট দিয়ে বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা কলকাতা ও অন্যান্য জায়গা থেকে এসেছে, তারা বাড়ি ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, কারণ খবর পাওয়া যাচ্ছে, সারা রাত হয়তো কলেজে কাটাতে হবে। আবার ছাত্রীরা ক্লাসরুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, কারণ ছাত্ররা সারা দিন ধর্মঘট করে পরিশ্রান্ত হয়ে জামাকাপড় ছেড়ে ক্লাসরুমেই হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়েছে। অর্থাৎ, ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে, আবার কলেজ থেকে বাড়ি ফেরারও উপায় নেই।
সেই বিষয়ে পুলিশি সহায়তা আকাঙ্ক্ষা করেই ১০০-য় ফোন করেছিলাম। দু’এক কথা বলার পর ও-প্রান্ত থেকে বিরক্ত স্বর শুনতে পেলাম, ‘‘আরে দাদা, এটা ইমার্জেন্সি নম্বর।’’ তবু কোনও ক্রমে পুরো ঘটনা বলার পর শুনলাম, ‘‘লোকাল থানা কি ঘটনাটা জানে?’’ সেটা আমি এখান থেকে কী ভাবে জানব বলুন তো? তখন পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বাঃ, আপনি কোনও তথ্য না নিয়েই লালবাজারে ফোন করেছেন! লোকাল থানা না জানলে আমরা কী করব?’’ বললাম, কোনও বিপদে পড়লে তো এখানেই ফোন করার কথা। এ বার কী করণীয় সেটা আপনারা করুন। উত্তর: ‘‘লালবাজার থেকে কি উলুবেড়িয়ায় ফোর্স যাবে? আপনি লোকাল থানার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’
বিপদে মানুষকে আরও কিছুটা বিভ্রান্ত করা ছাড়া এই নম্বরটির আর প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
অগ্নিভ মুখোপাধ্যায়
বেহালা
অন্য তর্জমা
‘‘‘প্যারিসকে নাৎসিমুক্ত করলেন ‘পাপা’’’(রবিবাসরীয়, ১৯-৮) নিবন্ধে দেবাশিস ঘড়াই লিখেছেন, “কে ভুলতে পারে ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসের সেই শব্দগুলো: ‘মানুষকে পরাস্ত করা যায় কিন্তু হারানো যায় না’।’’ ‘পরাস্ত’ আর ‘হারানো’ দুই শব্দের অর্থই defeated। তাই এ ক্ষেত্রে হেমিংওয়ে লিখিত বিখ্যাত বাক্য— A man can be destroyed but not defeated— এ ভাবে তর্জমা করা ভাল: ‘‘মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাস্ত করা যায় না।’’
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি
একটা ভুল
আমি একটি ইনশিয়োরেন্স পলিসির জন্য এজেন্টকে একটি চেক দিই, কিন্তু চেকে সই করতে ভুলে যাই। সেই জন্য আমার ব্যাঙ্ক আমায় ২৩৪ টাকা জরিমানা করে। আবার, একই ভুলের জন্য, আমার ইনশিয়োরেন্স কোম্পানিও আমায় ৩০০ টাকা জরিমানা করে। আমার মতো সাধারণ মানুষের ভুলের মাসুল (২৩৪+৩০০) টাকা! প্রশ্ন হল, একটাই ভুলের জন্য দু’বার জরিমানা আদায় করা যায় কি?
অমিতাভ ঘোষ
নৈহাটি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।