জমি অধিগ্রহণ
‘সুরবদল, জনস্বার্থেই জমি নিতে রাজি মমতা’ (৬-৭) পড়ে জানা গেল, রাজ্য সরকারের জমি অধিগ্রহণে আর আপত্তি নেই, যদি জমিদাতারা স্বেচ্ছায় জমি দিতে রাজি থাকেন। সরকারি আমলারা আরও জানিয়েছেন, জমির মালিকরা যাতে ‘‘ঠিকঠাক ক্ষতিপূরণ’’ পান, তা দেখা হবে। গরিব চাষির ক্ষেত্রে ‘‘ঠিকঠাক ক্ষতিপূরণ’’ কী হওয়া উচিত, সেটা বিশ্লেষণ করতেই এই চিঠি।
এ অনুমান অসঙ্গত নয় যে, দক্ষিণবঙ্গে যাঁদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হবে, তাঁদের অধিকাংশই অতি সামান্য জমির মালিক। এর পরোক্ষ প্রমাণ হল সিঙ্গুর। সেখানে প্রায় ১,০০০ একর জমি পেতে ১৩,০০০-এরও বেশি জমিদাতার শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। সিঙ্গুরের মোট ২৬৮৯ জন অনিচ্ছুক কৃষকের মধ্যে প্রায় ৮০%-এর জমির পরিমাণ এক একরের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ বা আধ বিঘার (তেত্রিশ শতকে বিঘা ধরলে) মতো। এই সামান্য পরিমাণ জমি থেকে তাঁদের কয়েক মাসের মাত্র খোরাকের সংস্থান হয়। বছরের অধিকাংশ সময়ের জন্য এঁরা কৃষি বা অন্য কোনও কাজে শ্রমিক হিসাবে খেটে রুজির ব্যবস্থা করেন। তবুও রাজ্য জুড়ে এই ধরনের প্রান্তিক চাষিরা সর্বস্ব পণ করে এই সামান্য জমিটুকু ধরে রাখতে আগ্রহী। এর কারণ শুধুই জমির মালিকানার প্রতি কৃষিভিত্তিক সমাজের পরম্পরাগত টান নয়; এর পিছনে আর্থ-সামাজিক যুক্তিসম্মত বাস্তব কারণও রয়েছে।
জীবনের একাধিক সঙ্কটে ওই জমিই চাষিকে রক্ষা করে। যেমন মেয়ের বিয়ে, পরিবারের কারও ব্যয়বহুল চিকিৎসা, কিংবা ছেলের ব্যবসার জন্য বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার প্রয়োজন হলে, প্রান্তিক চাষি তাঁর ওই সামান্য জমির এক অংশ বা পুরোটা বিক্রি করে অথবা বন্ধক দিয়ে টাকার সংস্থান করেন। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র ওই জমিটুকুর দাম লক্ষাধিক টাকা। অর্থাৎ এই জমিটুকু চাষিকে এক আপৎকালীন নিরাপত্তা দেয়। এ বিষয়ে দক্ষিণবঙ্গের চারটি জেলার কিছু দরিদ্র চাষির বক্তব্য সম্মিলিত ভাবে এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে—
‘‘জমি বেচা বোকামি, কারণ সময়ের সঙ্গে টাকার দাম কমে, কিন্তু জমির দাম বাড়ে। তা ছাড়া জমি বেচে হাতে টাকা এলে হাত চুলকাবে ওই টাকা খরচ করবার জন্য। লাখপতি হয়েছি, জানামাত্র কুড়ি বছরের ছেলে বায়না ধরবে সেকেন্ড হ্যান্ড মোটর সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। বৌ বলবে শাড়ি-গয়না দাও। আমারও ইচ্ছা হবে, রঙিন টিভি কিনি। প্রতিবেশী-বন্ধু এসে বলবে, ঘরের চালাটা ভেঙে পড়েছে, সারাব, টাকা ধার দাও। আমি টাকা পেলে সব চেয়ে বিপদ হবে আমার সদ্য বিবাহিত মেয়েটার। তার বিয়ের সময় পণের পুরো টাকা, গয়না দিতে পারিনি। বেয়াইয়ের হাতে ধরে বলেছি, পরে দেব। এ জন্য মেয়েকে উঠতে-বসতে গঞ্জনা শুনতে হয়। টাকা পেয়ে বেয়াইকে পণের বাকি টাকা না দিলে ওরা তো মেয়েটার গায়ে হাত তুলবে। কী জানি, পুড়িয়েও মারতে পারে। সব মিলিয়ে ওই টাকা বাঁধভাঙা জলের মতো হুহু করে বেরিয়ে যাবে।’’
এই সব সত্ত্বেও বাজারদরের চেয়ে অনেকটা বেশি টাকা দিয়ে হয়তো গরিব চাষির জমি কিনে নেওয়া যায়, কিন্তু বিক্রি-পরবর্তী তাঁর দুর্দশা লাঘব করা যায় না। চাষি যত গরিব, যত স্বল্পশিক্ষিত, হাতে টাকা ধরে রাখায় তিনি তত বেশি অপারগ। অর্থাৎ আজ যে গরিব চাষিরা উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিচ্ছেন, তাঁরা ধীরে ধীরে আরও গরিব হয়ে যেতে পারেন। অথচ একই অঞ্চলে জমি দিতে হল না যাঁকে, তিনি উন্নয়নজনিত জমির মূল্যবৃদ্ধির সুফল ভোগ করবেন। এই কারণে যাঁরা জমি দিচ্ছেন পরে তাঁরাই প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারেন। ভাঙড়ের সমস্যার আংশিক কারণ হয়তো এটাই।
কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নের জন্য জমি তো নিতেই হবে। তা হলে উপায়? সম্ভবত একটিই। অনিচ্ছুক চাষিকে জমির বিনিময়ে এককালীন টাকা না দিয়ে সরকার স্বীকৃত ‘ল্যান্ড বন্ড’ দেওয়া। প্রদত্ত বন্ডের দাম জমির দামের সমান হবে। ওই বন্ড হাতে থাকলে, চাষি চাষ থেকে তাঁর বাৎসরিক আয়ের সমপরিমাণ বা কিছু বেশি টাকা প্রতি বছর পাবেন ডিভিডেন্ড হিসাবে। ভবিষ্যতে ওই অঞ্চলে যে হারে জমির দাম বাড়বে, সেই হারেই বন্ডের দামও বাড়বে। অর্থাৎ জমিদাতা আজ জমি দিলেও, ভবিষ্যতে স্থানীয় জমির মূল্যবৃদ্ধির সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন না। ধরা যাক, এক একর অর্থাৎ একশো ডেসিমেল জমির জন্য একশোটি বন্ড চাষিকে দেওয়া হল। তিনি তাঁর আর্থিক সঙ্কটে প্রয়োজনমাফিক এক বা একাধিক বন্ড সরকারকে ফেরত দিয়ে জমির তৎকালীন দাম নিয়ে নিতে পারবেন। ওই বন্ড সরকারি ব্যাঙ্কে বন্ধক রেখে চাষিকে ন্যায্য সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আজও বহু ক্ষেত্রে এই চাষিরা বাৎসরিক শতকরা পঞ্চাশ বা ষাট টাকা হারে ঋণ নিতে বাধ্য হন।
ল্যান্ড বন্ড ব্যবস্থার আরও কতকগুলি সুবিধা: এক) সরকারকে জমির দাম এখনই মেটাতে হচ্ছে না। দুই) ভবিষ্যতে জমিদাতাদের কখনওই এক সঙ্গে বন্ড ভাঙানোর প্রয়োজন হবে না। সরকার বন্ডের দাম মেটাতে বিশ বা ত্রিশ বছর সময় পেতে পারে। তিন) এই ব্যবস্থাপনায় শিল্পের জন্য জমি নিলে, জমিদাতারা চাইবেন শিল্পায়ন তথা উন্নয়ন সফল হোক, কারণ তা হলেই তো তাঁদের বন্ডের দাম বাড়বে। এই শেষোক্ত পাওনাটাই পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ল্যান্ড বন্ড পদ্ধতির অধিগ্রহণ থেকে সব চেয়ে বড় পাওনা হতে পারে। শিল্প সংস্থার কাছে বার্তা যাবে যে, জমিদাতারা এই রাজ্যে শিল্প গড়তে আসা শিল্প সংস্থার শুভাকাঙ্ক্ষী।
অতীতে আয়ারল্যান্ড, ব্রাজ়িল, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি দেশ নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ল্যান্ড বন্ডের বিনিময়ে জমি অধিগ্রহণ করেছে। এ দেশে সম্প্রতি কেরল সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে এই পদ্ধতির জমি অধিগ্রহণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা-চিন্তা আরম্ভ করেছে। রাজ্যে শিল্পায়নের স্বার্থে রাজ্য সরকার কি এই ল্যান্ড বন্ড ব্যবস্থাকে পরীক্ষামূলক ভাবে হলেও গ্রহণ করতে পারে না?
মানসেন্দু কুণ্ডু
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আসলে হয়নি
‘বচসায় মেয়র ও মেয়র পারিষদ’ সংবাদে (১৩-৭) আমার সহকর্মী, মেয়র পারিষদ (আলো) সুধীর সাহা ও আমাকে জড়িয়ে ১২ জুলাই মেয়র পরিষদের বৈঠক সংক্রান্ত যে কথাগুলি প্রকাশিত হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিধাননগরের মতো নতুন একটি পুরসভার ভাবমূর্তিকে জনসমক্ষে হেয় করাই এই খবরের উদ্দেশ্য ছিল মনে হয়। আর যে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, সেটি নিয়ে এক জন সাংবাদিক এ রকম খবর করলেন কী করে? আবারও বলছি, বৈঠকে কোনও ‘বাদানুবাদ’ হয়নি, সবটাই সাংবাদিকের কল্পিত ঘটনা। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে খবর করার আগে সংবাদপত্রের আরও সতর্কতা অবলম্বন কাম্য।
সব্যসাচী দত্ত
মেয়র, বিধাননগর পুরসভা
প্রতিবেদকের উত্তর: বিধাননগর পুরসভায় ১৩ জুলাই মেয়র পরিষদের বৈঠকে এলইডি আলো লাগানো নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার খবর পাই। সেই খবর সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য মেলার পরে, মেয়রের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়। তিনি এমন কোনও বাগ্বিতণ্ডা হয়নি বলে দাবি করেছেন। মেয়রের জবাবও প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা কিংবা কোনও কল্পিত প্রতিবেদন প্রকাশের অভিপ্রায় ছিল না। পাশাপাশি, আদালতের বিচার্য বিষয় সম্পর্কে মেয়রের বক্তব্য বোধগম্য হল না। কেননা, বৈঠকে কী প্রসঙ্গে মতান্তর হয়, শুধু সেই প্রেক্ষিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
•‘অনাস্থা প্রস্তাবে যে যার যুদ্ধে’ (পৃ ১, ১৯-৭) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, কংগ্রেসের ছ’জন সাংসদ পাঁচ দিনের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন। এটি ঠিক নয়। প্রকৃত তথ্য হল, লোকসভা থেকে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের পাঁচ সাংসদ ইস্তফা দিয়েছেন। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।