Pluralism

সম্পাদক সমীপেষু: সম্প্রীতির আশা

সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা লেখা থাকলেও তা এত কাল ধরে শুধুমাত্র বিশুষ্ক আর বিমূর্ত কিছু বাক্যের জন্যই বহাল থাকেনি। আজও তা অটুট, কেননা মানুষ সংবেদনশীল, সচেতন ভাবে শান্তির পক্ষে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৪:২১
Share:

তাজুদ্দিন আহ্‌মদের প্রবন্ধ ‘আশঙ্কিত, কিন্তু সংযত’ (১৩-৭) মননশীল এবং প্রাসঙ্গিক। ভারতীয় সমাজের এক বড় বৈশিষ্ট্য তার বহুত্ববাদিতা। বহুত্ববাদী সমাজের সেই ভূমিকা পালনে মানুষ যদি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সামাজিক শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে প্রাথমিক ভাবে সচেতন না হয়ে ওঠেন, তার ছাপ পড়ে শাসন ও বিচারব্যবস্থার উপরে। সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা লেখা থাকলেও তা এত কাল ধরে শুধুমাত্র বিশুষ্ক আর বিমূর্ত কিছু বাক্যের জন্যই বহাল থাকেনি। আজও তা অটুট, কেননা মানুষ সংবেদনশীল, সচেতন ভাবে শান্তির পক্ষে। সমাজের মানবিক রূপও প্রতিনিয়তই প্রতিফলিত হয় মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামাজিক কর্তব্য পালনের মাধ্যমে। তারই সাম্প্রতিক প্রতিফলন ঘটেছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে এবং তার কিছু পরে উপনির্বাচনের ফলাফল চিত্রে।

Advertisement

অমর্ত্য সেনের মতো নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে আমরা তাঁর বিভিন্ন লেখায় এবং কথায় দেখেছি বরাবরই ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ বজায় রাখার জন্য নানা ভাবে সমাজকে তাঁর ভাবনার কথা বলতে, এবং সেই সঙ্গে আমাদের সমাজের ইতিহাস ও বর্তমান কর্তব্য সম্পর্কে দিক নির্দেশ করতে। এ বারের ভোটে যে বিজেপিকে একটা জায়গায় আটকে দেওয়া গেছে এবং তার ফলে হিন্দুত্ববাদীদের হিন্দু রাষ্ট্র করে ফেলার অ্যাজেন্ডা ঘা খেয়েছে, সেই বিষয়েও তিনি তাঁর স্বস্তির কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন। তবে বিজেপির আসনসংখ্যা আরও কম হলে আমরা ধর্ম নিরপেক্ষতার নিরঙ্কুশ জয় হয়েছে বলে ভাবতে পারতাম। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলটি উগ্র পরধর্ম অসহিষ্ণুতাকে পাথেয় করে যে লক্ষ্য অর্জনে নেমেছে, তা আগামী দিনে তার সহযোগী কিছু সংগঠনের মাধ্যমে যে আড়ালে চালিয়ে যাবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু আশা, আগামী দিনে আরও বেশি করে মানুষ ভারতের শান্তি আর সামাজিক উন্নতির স্বার্থে সম্প্রীতি ও সদ্ভাব বজায় রাখবেন। সেটা নির্ভর করছে সামাজিক স্তরে অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে আরও বেশি করে মেলামেশা ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান গড়ে তোলার মধ্যে। বড়দিনের ছুটিতে, পুজোতে সমাজ যে ভাবে মেতে ওঠে, ইদের দিনেও যেন সেই ছবি অটুট থাকে। মানুষের সঙ্গে মানুষের যত বেশি মেলামেশা থাকবে, ভুল বোঝাবুঝি তত দূরে থাকবে। কোনও বিভেদকামী শক্তি সঙ্কীর্ণ স্বার্থে সামাজিক শান্তি ও উন্নয়ন ব্যাহত হতে দেবে না।

শান্তি প্রামাণিক, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

Advertisement

কর্তব্য

‘আশঙ্কিত, কিন্তু সংযত’ শীর্ষক প্রবন্ধে ‘সংযত’ শব্দটিতে বাস্তব পরিস্থিতির যথাযথ মূল্যায়ন এবং ভারসাম্যের অভাব পরিলক্ষিত হল। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য, এ দেশের মুসলমান সম্প্রদায় নানা ভাবে বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং অত্যাচারিত হলেও, তাঁদের প্রতিবাদ মাত্রাছাড়া হয়নি, তাঁরা সংযত থেকেছেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসস্তূপের উপর রামমন্দির নির্মাণ, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি ইত্যাদি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন‌।

সংবিধান, আইন এবং বিচারব‍্যবস্থার প্রতি মান‍্যতা এক জন ভারতীয় নাগরিকের প্রাথমিক কর্তব্য। ওই সমস্ত ঘটনায় ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত ব‍্যক্তির প্রতিবাদ বা সংযত আচরণ আইন মোতাবেক কাজ, মহত্ত্ব নয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংসে বিজেপি ব‍্যতীত প্রায় সব রাজনৈতিক দলই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল। মুসলমানদের মতোই অ-মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও যে গভীর ভাবে মর্মাহত এবং ব‍্যথিত হয়েছিলেন, তা ওই সময়ের সংবাদপত্র ঘাঁটলে জানা যায়। অন‍্য দিকে, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমাজকর্মীরা বিলকিস বানোর পাশে ছিলেন বলেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পেরেছেন।

সংসদে জঙ্গি হামলার ঘটনার মতোই গোধরা কাণ্ডও গণমাধ‍্যমে গুরুত্ব পেয়েছে। সংবাদপত্রে জোড়হস্তে প্রাণভিক্ষায় ক্রন্দনরত কুতুবউদ্দিনের ছবি বহু হিন্দুর হৃদয়কেও বিদীর্ণ করেছে। ব‍্যক্তিবিশেষ এবং একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে আশ্রয়দানে এগিয়ে এসেছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, মুম্বই বিস্ফোরণ এবং একাধিক দেবস্থানে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে হিন্দুরা কি তা হলে অসংযত ছিলেন? লোকসভা নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে, বহু ভাষাভাষী এবং ধর্মের দেশ ভারতে ‘মুসলিম-বিদ্বেষ’ রাজনীতি দীর্ঘস্থায়ী ফলদায়ী নয়। মানুষ সংযত, সংহত এবং সঙ্ঘবদ্ধ থাকলে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

১০০ গ্রাম

ভারতের প্রথম মহিলা কুস্তিগির হিসাবে অলিম্পিক্সের ফাইনালে উঠে পদক সুনিশ্চিত করে ইতিহাস গড়েছিলেন বিনেশ ফোগত। আশা ছিল দেশের প্রথম কুস্তিগির হিসাবে স্বর্ণপদক জিতবেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের লিখন অন্য রকম ছিল। নিয়মের বেড়াজালে জড়িয়ে সামান্য ১০০ গ্রাম ওজনের জন্য ফাইনালে ‘ডিসকোয়ালিফায়েড’ হয়ে সমস্ত স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল বিনেশ ফোগতের। তাঁর সঙ্গেই হৃদয়ভঙ্গ হল গোটা দেশেরও। যদিও বরাবরের মতোই নাছোড়বান্দা মানসিকতার অধিকারী বিনেশ এ বারেও শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েননি। শোনা যাচ্ছে, সারা রাত না খেয়ে, না ঘুমিয়ে ওয়ার্কআউট করা থেকে শুরু করে চুল ছেঁটে ফেলা, দেহ থেকে রক্ত বার করে দেওয়া— কোনও প্রচেষ্টাতেই কসুর করেননি তিনি। কিন্তু শেষ অবধি বিনেশ আর অলিম্পিক্স পদকের মাঝে ওই ১০০ গ্রাম ওজনই বাধা হয়ে থেকে গিয়েছে। পদক হাতছাড়া হয়ে মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত বিনেশকে শেষ পর্যন্ত অসুস্থ ‌হয়ে প্যারিসের হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়েছে। তবে ‘দঙ্গল’-এর রানি ম্যাটের লড়াইয়ে দেশকে পদক এনে দিতে না পারলেও তাঁর পদকের লক্ষ্যে যাত্রা এবং লড়াইকে নতমস্তকে কুর্নিশ করতেই হবে।

প্রকৃতপক্ষে শুধু প্যারিসের রিংয়ে নয়, বিনেশের লড়াইটা তো চলছিল গত কয়েক বছর ধরেই। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার তৎকালীন সভাপতি তথা প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে ওঠা মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন বিনেশ। ঝড়, জল উপেক্ষা করে দিল্লির যন্তর মন্তরে সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের সঙ্গে প্রতিবাদ আন্দোলন করে গিয়েছেন মাসের পর মাস। প্রশাসনের রক্তচক্ষু, পুলিশের লাঠির বাড়িও টলাতে পারেনি তাঁর আত্মপ্রত্যয়। এই বিতর্ক-আন্দোলন প্রভাব ফেলেছিল অলিম্পিক্সের প্রস্তুতিতেও। এমনকি নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের ৫৩ কেজি বিভাগের পরিবর্তে ৫০ কেজি বিভাগে নামতে এক প্রকার বাধ্য করা হয় তাঁকে। তবু এত কিছুর পরও দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে প্যারিসের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন ‘দেশ কি বেটি’। প্যারিসের রিংয়েও সেমিফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত ছিলেন সম্পূর্ণ অপ্রতিরোধ্য; স্বর্ণপদকের একমাত্র দাবিদার। কিন্তু ভাগ্য তাঁর সঙ্গ দিল না! মাত্র ‘১০০ গ্রাম’ ওজনই বিনেশ-সহ গোটা দেশের স্বপ্ন চুরমার করে দিল।

তবে কুস্তির রিংয়েই হোক বা রিংয়ের বাইরে, বিনেশের লড়াই বরাবরের মতো স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে।

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

অ-স্বাভাবিক নয়

বিনেশের কুস্তিতে বাতিল হওয়া নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। অথচ বাস্তব যে, উপরের ওজন বিভাগ থেকে নীচের ওজনের বিভাগে গেলে, কুস্তির মতো ওজন-নির্ভর ক্রীড়ায় প্রথমে সাফল্য পেলেও তা ধরে রাখা যায় না। অলিম্পিক্স বা এই ধরনের আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় ‘ওয়েট কাটার’দের সাফল্য খুব বেশি নেই। হয়তো, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনার কারণে ‘ওয়েট কাটিং’ অবৈধ ঘোষিত হতে পারে। সুতরাং, এই অবস্থা অ-স্বাভাবিক নয়।

অতনু ভট্টাচার্য, কলকাতা-২

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement