নামের আগ্রাসন
• ১৮৮৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ মুঘলসরাই জংশন স্টেশনটি নির্মিত হয়েছিল, নামকরণ করে শাসক ইংরেজ। দীনদয়ালের শতবর্ষে তাঁর মন্ত্রশিষ্য ও স্বচ্ছ ভারতের স্রষ্টা ইতিহাস পালটে দিয়ে এই স্টেশনটির নাম রাখতে চলেছেন দীনদয়ালের নামে (‘হে অতীত স্তব্ধ...’, ১৭-৯)।
হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বিজেপির কোনও গোপন অ্যাজেন্ডা নয়। অসহিষ্ণুতা, খাদ্য সন্ত্রাস, ভিন্ন মতের কণ্ঠরোধ, সিনেমা সেট ভাঙচুর ইত্যাদি পরম্পরায় যুক্ত হয় ইসলামিক নাম মুছে ফেলার চেষ্টা। অবশ্য নাম বদলের রীতি নতুন নয়। ইতিপূর্বে ঔপনিবেশিক চিহ্ন মুছে ফেলার তাগিদে মুম্বই (বোম্বাই), বিশাখাপত্তনম (ওয়ালটেয়ার), চেন্নাই (মাদ্রাজ), পুদুচেরি (পন্ডিচেরি) ইত্যাদি আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা নির্বিচারে যে ভাবে মুসলমানি নাম মুছে ফেলতে চাইছে, তা এক কথায় আগ্রাসন।
দীনদয়াল উপাধ্যায়, গোয়ালকর, সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ নামক কয়েক জন তাত্ত্বিক গুরু ছাড়া বিজেপি-র কোনও অতীত গৌরব নেই বলে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ। অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেস বিজেপিকে টেক্কা দিয়েছে। তাই গাঁধী, জওহরলাল, ইন্দিরা, রাজীব নামাঙ্কিত বহুবিধ সরকারি প্রকল্প থেকে কংগ্রেসি নাম মুছে ফেলার যে প্রক্রিয়া শুরু, যে কায়দায় সর্দার পটেলকে কংগ্রেস থেকে ছিনতাই করা হয়েছে, চরকা থেকে গাঁধীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে দিল্লির আওরঙ্গজেব রোড বা মুঘলসরাই-এর নাম বদল কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন হল, মুর্শিদাবাদ, হায়দরাবাদ, গাজিয়াবাদ নামক স্থান, হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, মোগলাই পরোটা বা শাহি তুফদার নামক খানাগুলির তবে নব নামকরণ কী হবে?
সরিৎশেখর দাস
চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
বিসর্জন-কাজিয়া
• শারদীয় উৎসবের সূচনায় আগমনী গানের সুর, বীরেন ভদ্রের স্বর ছাপিয়ে শরতের আকাশ-বাতাস মুখরিত হল দলনেতাদের কর্কশ কাজিয়ায়। সভা-সমিতিতে, মাঠে-ঘাটে, চায়ের দোকানে, মিডিয়ার যুক্তি-তর্কের আসরে, নবান্নে-আদালতে দেখা গেল বিসর্জন নিয়ে টানাপড়েন। ট্রাকে-লরিতে দেবীর প্যান্ডাল প্রবেশের হৃদয় উথালপাথাল করা দৃশ্যের পরিবর্তে টিভি-কাগজাদি মাধ্যমে বারে বারে দেখতে থাকলাম গঙ্গায় মাতৃবিসর্জনের বুকভাঙা দৃশ্য। উৎসবের আনন্দের বিসর্জন হল রাজনীতির কর্দমাক্ত নর্দমায়। মাগো, আমরা যেমন ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ধর্মকর্ম করি, তুমি কি তেমনই রাজনীতি নিরপেক্ষ হয়ে সন্তান পালন করতে পারো না?
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
ওরাও শ্রমিকই
• ‘খুদে সেলেবদের পুজোর প্ল্যান’ (‘আনন্দ প্লাস’, ২২-৯) পড়লাম। এই খুদে অভিনেতাদের সকলেই কমবেশি আমাদের চেনা। টেলিভিশনের পরদায় আমরা তাদের অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হই। অভিনীত চরিত্রগুলির নানা কীর্তিকলাপ রোজ দেখতে-দেখতে এক ধরনের মানসিক বন্ধনও তৈরি হয়। সংবাদপত্রের সুবাদেই আমরা বিভিন্ন সময় এই সব খুদের কাজের বহর সম্পর্কেও অবহিত হতে পারি।
দৈনন্দিন ধারাবাহিকগুলিতে যারা মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে, তাদের কাজের সময় বড়দেরই সমান। এক জন শিশুশিল্পী যদি রোজ ছয় থেকে আট ঘণ্টা স্টুডিয়ো বা আউটডোরে কাজ করে কঠোর নিয়মানুবর্তিতায়, তারা কি তখন আর নিছক শিল্পী থাকে, শিশুশ্রমিক হয়ে যায় না? অন্যান্য রিয়েলিটি শো-গুলিতেও শিশুদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে। তারা কাজ করে যথেষ্ট পারিশ্রমিকও পায়। তা হলে, চায়ের দোকানের বা গৃহস্থালির শিশুশ্রমিকদের সঙ্গে এদের তফাত কোথায়? শুনেছি, এখন নাকি পশুপাখিদের দিয়েও অভিনয় করানোয় নিষেধাজ্ঞা আছে। কেবল এদের ক্ষেত্রে নেই।
সংবাদপত্রে ফলাও করে লেখা হয়, শিশুশিল্পীরা স্টুডিয়োয় কাজের ফাঁকে কতটা পড়াশোনা করে। বাস্তবে কি তা সম্ভব? একটি শিশুর প্রাত্যহিক শারীরিক-মানসিক শ্রমের পরে পড়াশোনার মতো শক্তি থাকতে পারে? এই দৈনন্দিন শ্রম ও সময় ব্যয় তাদের কোথায়, কত দূরে নিয়ে যাবে!
ঊর্মিলা দাশগুপ্ত
কলকাতা-১১৮
কাওয়াসাকি
• পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিরল অসুখটি সম্পর্কে লিখেছেন, তাতে যাঁদের সন্তানরা কাওয়াসাকি রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তাঁরা কেবলমাত্র বিভ্রান্তই হবেন না, আতঙ্কগ্রস্তও হবেন (‘১১ বছরেই হৃদরোগ...’, ২০-৯)। পত্র লেখকদ্বয় অসুখটিকে নিয়ে বিগত ১০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ ও একাধিক গবেষণাপত্রও প্রকাশিত করেছেন।
লেখা হয়েছে, ‘এটি এক ধরনের সংক্রমণ’। না, কাওয়াসাকি রোগ কোনও সংক্রমণ বা ইনফেকশন নয়, এর প্রকৃত কারণ আজও অধরা। তবে এটা একটা অটোইনফ্লামেটরি ভাসকুলিটিজ, যেখানে শরীর শরীরের বিরুদ্ধে লড়ে। ধমনীতে প্রদাহ এবং ধমনী ফুলে যাওয়া, বিশেষত হার্ট-এর ধমনী, এই অসুখের অন্যতম বিশেষত্ব এবং তা কোনও মতেই হার্ট অ্যাটাকের সমতুল্য নয়। হার্ট অ্যাটাক বলতে আমরা কী বুঝি? বিজ্ঞানী পরিভাষায় যার নাম হল অ্যাকিউট মায়োকর্ডিয়াল ইনফার্কশন, যাতে কিনা হার্টের ধমনী ব্লক হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই হার্ট অ্যাটাক এক বিপজ্জনক অসুখ, যাতে মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে। হার্ট অ্যাটাক কাওয়াসাকির একটা বিরল থেকে বিরলতম জটিলতা, যেটা সচরাচর যখন অসুখটি প্রকাশ পায় তখন দেখা যায় না। ঠিক ভাবে চিকিৎসা না করলে পরবর্তী কালে হার্টের ধমনী ব্লক হয়ে এটা হতে পারে। এই অসুখে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর হার্টের ধমনীতে প্রদাহ হয়ে, ধমনী ফুলে যায়, চিকিৎসা করলে সেটা ঠিকও হয়ে যায়। তার মানে এই নয় যে, ৩০ শতাংশের হার্ট অ্যাটাক হয়। দুটি সম্পূর্ণ রূপে ভিন্ন জিনিস। আমরা বিগত ১০ বছরে প্রায় ২৪০টি কাওয়াসাকি অসুখ খুঁজে পেয়েছি, যা কিনা দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম সিরিজ। তাই পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভিস্টকে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়োলজিস্ট বলে সম্বোধন করে মাসে ৫০টি কাওয়াসাকি খুঁজে পাওয়ার কথা যা বলা হয়েছে, তা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।
প্রিয়ঙ্কর পাল, প্রভাস প্রসূন গিরি
পেডিয়াট্রিক রিউমাটোলজি ক্লিনিক ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ, কলকাতা
প্রতিবেদকের উত্তর: প্রতিবেদনে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, কাওয়াসাকির থেকে অনেক শিশুরই ধমনী ফুলে রক্ত সংবহন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক হয়। এমন কখনই লেখা হয়নি যে, কাওয়াসাকি ডিজিজ মানেই হার্ট অ্যাটাক।
চিকিৎসকদ্বয় আরও দাবি করছেন যে, এই রোগের ফলে অনেকের ধমনী ফুলে গেলেও হার্ট অ্যাটাক হয় না। কিন্তু প্রতিবেদনটি লেখার সময় এই রোগ নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন, এমন অন্তত ৬ জন শিশু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এবং তাঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, কাওয়াসাকি-আক্রান্ত ৩০ শতাংশ শিশু রোগীর এই রোগের জেরে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। প্রিয়ঙ্কর এবং প্রসূনবাবু এমন দাবিও করেছেন যে, তাঁরা গত ১০ বছরে ২৪০টি কাওয়াসাকি রোগী খুঁজে পেয়েছেন বলে অন্য কোনও চিকিৎসক তার থেকে বেশি রোগী পেতে পারেন না! সেটি নাকি ‘অলীক কল্পনা!’ তাঁরাই সবচেয়ে বেশি রোগী পাবেন, সেটা কে ঠিক করল?
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
ভ্রম সংশোধন
• ‘বাসি রুটির...’ শীর্ষক লেখায় সতীশ শাহ-র বদলে সতীশ কৌশিকের নাম গিয়েছে (‘আনন্দ প্লাস’, ২-১০)। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।