মূল্যায়ন ঠিক হোক
এই সমাজে শিক্ষকদের মূল্যায়ন প্রয়োজন। আর শুধু শিক্ষকদেরই বা কেন, ডাক্তার মোক্তার কবি শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক গায়ক নায়ক যে যেখানে আছে সবার মূল্যায়ন প্রযোজন (‘ স্যর-দিদিমণিদের পাশ নম্বর দেবে কে’, ২৮-৯)। আসলে পুরো সমাজটাকেই নম্বর দেওয়া দরকার। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাই আমরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ করছি। সরকারি টাকায় সংসার প্রতিপালন করছি। জনগণের অধিকার আছে আমাদের সকলের থেকে তার দাবি আদায়ের। কে পাশ কে ফেল জানার। শিক্ষকদের দায়িত্ব আছে জনগণকে তা বুঝিয়ে দেওয়ার।
মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু হলে সবাই খুব উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন, সেটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। তবে, সবাই নিশ্চয়ই চাইবেন, মূল্যায়ন যথাযথ হোক। মানে, শিক্ষক যদি জানেন এই নম্বর দেওয়ার উদ্দেশ্য হল তাঁকে ফাঁকিবাজ প্রমাণ করা, তাঁর বেতনে কোপ বসানো বা তাঁর বিরুদ্ধ মানুষের হাতে তাঁকে আক্রমণের অস্ত্র তুলে দেওয়া, কিছু লোককে তাঁর পিছনে লাগিয়ে দেওয়া, তাঁকে হেনস্থা করা, তা হলে ভয় ধরবে, বিরোধিতা আসবে। তা যদি না হয়, মূল্যায়ন যদি নিরপেক্ষ হয়, নীচ থেকে উপর, সব জায়গায় সমান ভাবে দলমত বাদ রেখে কাজ করেন, সবাই তাঁর নিজের অধিকার মতো কাজের স্বাধীনতা পান, তা হলে শিক্ষকরা হয়তো একেই তাঁদের উন্নতির ধাপ বলে ভাবতে পারবেন। ভাল কাজ করতে উৎসাহিত হবেন।
এ ভাবেই তো সব সিস্টেম চলে। প্রাথমিক শিক্ষকদের ভাবনাগুলি নিয়ে প্রতীচি ট্রাস্টের করা ‘কলমচারি’ নামের একটি সংকলনের কথা আমাদের অনেকেরই জানা। সেখানে শিক্ষকদের ভাবনাগুলি পড়লে অবাক হতে হয়। আবার এ-ও মনে হয়, আশ্চর্য হওয়ার কী আছে, এঁরাই তো সেরা ভাবনাটা ভাববেন। এঁদের স্বীকৃতি দেওয়াটাই তো সমাজের কাজ।
তবে মনে রাখা উচিত, যে কোনও মূল্যায়নের একেবারে নির্ভুল একটি ফ্রেম তৈরি করা কিন্তু সহজ কাজ নয়। আগে নিয়ম ছিল পরীক্ষার খাতায় ভুলগুলি খুঁজে বের করে লাল কালি দিয়ে ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে কেটে দেওয়া আর নম্বর দেওয়ার প্রকরণটিকে পড়ুয়ার ভুল চিহ্নিত করবার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, আমরা তো এ ভাবেও ভাবতে পারি যে, পড়ুয়াদের মূল্যায়নের জন্য লাল কালির ব্যবহার তুলে দেওয়া উচিত। খাতায় পরীক্ষক কিছু কাটতে পারবেন না। পরীক্ষক নেতিবাচকতার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলে পড়ুয়ার উপর তার কী প্রভাব হয়— সেটাও আমাদের জেনে নেওয়া দরকার, তা হলেই তো বেশ ‘পরীক্ষামূলক’ হতে পারে ব্যাপারটা।
অনেকে বলবেন, এতে সব শূন্য পাবে। কেউ কিছু লিখতেই পারে না। বেশ, তা-ই যদি হয়, পরের বার আমাদের কাজ হবে দশ নম্বর যাতে পায় তার জন্য পড়ুয়াদের তৈরি করা। যে ছেলে বা মেয়েটি কিছু লিখতে পারে না, সবটাই তার অপদার্থতা বা তার প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া-দোষ নাও হতে পারে। হতেই পারে সে সামাজিক ভাবে পারিবারিক ভাবে আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত। তার জন্য একশো নম্বরের টার্গেটটা কমিয়ে ধাপে ধাপে তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তার ভুলগুলিকে আবর্জনার মতো সরিয়ে দিলে সে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
আমাদের অক্ষমতা অপারগতা আমাদের যতটা লজ্জিত করে তা অন্যদের করে না। শিক্ষকের কাজ শুধু তার লজ্জার ভার লাঘব করা। আর যে কাজটা সময় ধরে এই স্কুল স্তরে করা যায় পরে আর সেই অবকাশ মেলে না।
মূল্যায়নের প্রশ্নে শিক্ষকদের বেলাতেও গল্পটা একই। কিন্তু তার লজ্জার ভার লাঘব করবে কে?
অরণ্যজিৎ সামন্ত। কলকাতা-৩৬
ডাইনি বলে কিছু নেই
একটা খবর (‘কুসংস্কার চলবে না...’, ১৫-৯) পড়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। গোঘাট থানা এলাকায় এক মহিলাকে ‘ডাইন’ বলা হচ্ছিল। কারণ, গ্রামের একটি মেয়ে রোজ রাতে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখত, আর সেখানে ওই ডাইন, ফুলমণিকেও স্বপ্নে দেখত। মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষরা ফুলমণিকে মারতে লাগল। হঠাৎ দেবদূতের মতো চারটে লোক এসে মার থামাল। তারা বলল, এ কুসংস্কার। সব জড়ো হওয়া মানুষ শুনল এবং মেনেও নিল। এই প্রতিবাদকে ধন্যবাদ জানাই। মনে অসীম সাহস এবং দৃঢ়তা থাকলে এই প্রতিবাদ করা যায়।
অলি বন্দ্যোপাধ্যায়, নদীকূল, নিমতা