চিকিৎসক শিশির বসু।
কাতার কড়চা, ১০-২) প্রতিবেদনে শিশির বসুর বিভিন্ন কৃতিত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে— যা বাঙালি তথা ভারতীয়দের কাছে অতি গর্বের বিষয়। উল্লেখ থাকলে ভাল হত, শিশির বসুর মানসিকতা এবং মানবিকতা এক অনন্য মাত্রা লাভ করেছিল এক জন সফল শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবেও।
তাঁর এলগিন রোডের চেম্বারে, ৯-৪-১৯৯৭ তারিখে, উত্তরবঙ্গ থেকে (তখন সেখানে থাকতাম) আমাদের সন্তানকে দেখানোর জন্য, আমরা স্বামী-স্ত্রী হাজির হই। প্রথমেই তিনি আমাদের সঙ্গে পরিচয়পর্ব সেরে নেন। সন্তানের সুবিধে অসুবিধের কথা জেনে, তাকে পরীক্ষা করার পর প্রেসক্রিপশন লিখতে যাবেন, ঠিক সেই সময়ে মাননীয়া কৃষ্ণা বসু, চেম্বারে মার্টিন পাফ আর নেতাজি-কন্যা অনিতা পাফকে নিয়ে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে ঢুকলেন। মার্টিন পাফ জার্মানি ফিরে যাচ্ছেন, বিদায়ী সাক্ষাৎ সারতে এসেছেন। বেরোনোর সময় আমাদের সঙ্গেও করমর্দন করলেন পাফ দম্পতি। আমরা তো আপ্লুত।
ওঁরা বেরিয়ে যাওয়ার পর, ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশনের উপর কলম ধরে, রসিকতা করে বলতে শুরু করলেন: আপনাদের অনেক টাকা, অনেক আম বাগান, তাই না? ট্রেনভাড়া, ডাক্তারের ফিজ়, হোটেলে থাকা-খাওয়া— এত সব খরচ করে একদম একটা সুস্থ নীরোগ ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে! ওর কোনও অসুখই নেই। কোনও চিন্তা করবেন না। কোনও ওষুধ খেতে হবে না।’’
কোনও ওষুধ না লেখায়আমরা যে সামান্য ক্ষুণ্ণ, তা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তাই সামান্য একটা হজমের ওষুধ লিখে দিলেন, যার দাম মাত্র ১২ টাকা।
আর প্রেসক্রিপশনের পিছনের পাতায় বিভিন্ন সময়ে খাওয়ার তালিকা করে দিলেন, যা আমার সন্তানকে ওষুধ ছাড়াই ভাল থাকতে সাহায্য করেছিল।
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
মহানুভব
2 ১৯৭০ সালের একটি ঘটনা লিখি। আমি সদ্য এমস দিল্লি থেকে এমএস পাশ করে কলকাতায় ফিরেছি। স্বর্গীয় ডা. অমিতাভ রায় (কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি-র অধ্যাপক)-এর ছাত্র এবং হাউস সার্জন ছিলাম। ফিরে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, তিনি প্রশ্ন করলেন, হাতে কোনও কাজ আছে কি না। নেই শুনে বললেন, উনি দু’মাসের জন্য বিদেশ যাবেন, আমি ওঁর চেম্বারে বসতে পারি, দুটো শর্তে। কেউ ফোন করলে বলতে হবে উনি নেই, ওঁর অবর্তমানে আমি রোগী দেখছি এবং তাঁর ফি তখন ৫০ টাকা ছিল, সেটাই আমাকে দিতে হবে। আমি প্রস্তাব লুফে নিলাম। চেম্বারে যাই আসি, বেশির ভাগ রোগীই ওঁর অবর্তমানে আমাকে দেখাতে চাইতেন না। দু’এক জন রোগী দেখতাম, আর বাকি সময়টা ওঁর চেম্বারে বসা এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আড্ডা মারতাম। তাঁরও সে-সময় বেশি রোগী হত না।
এক দিন বিকেলে একটা ফোন এল, ‘‘আমি ডাক্তার শিশির বোস বলছি, অমিতাভ আছে?’’ বললাম, উনি নেই, ওঁর জায়গায় আমি রোগী দেখছি। নিজের পরিচয় দিলাম। উনি বললেন, ‘‘আমি আসছি, তুমি অপেক্ষা করো।’’ মিনিট পনেরোর মধ্যে এলেন, কানে ব্যথার জন্য আমাকে দেখালেন এবং ওষুধ কী কী খেতে হবে জেনে আমাকে একটি ৫০ টাকার নোট এগিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ‘‘স্যর, আপনি ডাক্তার, আপনার কাছে কী করে ফিজ় নেব?’’ উনি বললেন, ‘‘রোগী তো আর নেই দেখছি, কী করে চলে তোমার? এটা রাখো’’, বলে জোর করে আমাকে ফিজ় দিলেন। তাঁর মহানুভবতার কথা আজও ভুলতে পারিনি।
গৌতম দাশগুপ্ত
জামশেদপুর
রাজেন্দ্রমোহন
গত ২৫ জানুয়ারি ২০২০ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন ষাটের দশকের এক উজ্জ্বল ফুটবল নক্ষত্র, রাজেন্দ্রমোহন। ১৯৬৩ সালে পঞ্জাব থেকে বছর একুশের টুকটুকে ফর্সা সুদর্শন এক তরুণ খেলতে আসেন কলকাতায়। নাম রাজেন্দ্রমোহন খুল্লব। কোনও বড় দলে নয়, বিএনআর-এর মতো এক মাঝারি সারির দলে। অল্পখ্যাত হলেও সেই সময় বিএনআর ছিল যথেষ্ট সমীহ করার মতো দল। বড় দলকে প্রায় সময়ই নাজেহাল করে দিত। প্রথম বছরেই সেই তরুণ ফুটবল সৌন্দর্যের জাদুতে কলকাতার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের মন জয় করে নেন। এমনকি তিন প্রধানের সদস্য সমর্থকেরাও তাঁর গুণমুগ্ধ হয়ে যান। প্রথম বছরেই বিএনআরের হয়ে শিল্ড ও রোভার্স জয় করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। রোভার্স ফাইনালে রাজেন্দ্রমোহনের গোলেই মোহনবাগান পরাজিত হয়েছিল। ১৯৬৬ সালটা ছিল তাঁর ফুটবল-জীবনের স্মরণীয় বছর। ওই মরসুমে কলকাতা লিগে তিনি চার-চারটি হ্যাটট্রিক করেন। পেয়েছিলেন ওই বছর বিএনআরের অধিনায়কত্বেরও সম্মান। লিগে বিএনআর ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিল ২-০ গোলে, তাঁর পা থেকে এসেছিল একটি গোল। লিগে সে বছর গোল করেছিলেন ২৭টা। হয়তো পেতেন সর্বোচ্চ গোলদাতারও সম্মান। কিন্তু মারডেকা টুর্নামেন্ট ভারতীয় দলে ডাক পাওয়ায় সে সম্মান থেকে তিনি বঞ্চিত হন। তখনও লিগে বিএনআরের আরও তিনটি ম্যাচ বাকি ছিল। খেলতেন রাইট ইন সাইডে। করেছেন বহু দর্শনীয় গোল। প্রতিনিধিত্ব করেছেন দেশ এবং রেলের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে। মারডেকা টুর্নামেন্টে (১৯৬৬) হংকংয়ের বিরুদ্ধে তাঁর একটি দর্শনীয় গোলও আছে। ১৯৬৫-তে রাশিয়া শুভেচ্ছা সফরে ভারতে এলে দু’টি গোল খায়, দু’টি গোলই ছিল তাঁর। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিএনআরে খেলেছেন। তিন প্রধান থেকে বার বার ডাক পেয়েও বিএনআর ছাড়েননি। ১৯৬৭ সালে ইস্টবেঙ্গলে এক বার সই করেও, পরে তা প্রত্যাহার করে আবার বিএনআরেই ফিরে আসেন। চাকরি করেছেন প্রথম বিএনআর, পরে হিন্দুস্তান কপারের দায়িত্বশীল অফিসার পদে। ফুটবলার হিসেবে যে সম্মান ও স্বীকৃতি প্রাপ্য ছিল, পাননি। সেই কারণে তাঁর মনে বেদনা ও অভিমান পুঞ্জীভূত ছিল।
সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
অনুভা
‘মোহনবাগানের গ্যালারির মেয়ে... অনুভা গুপ্ত’ (পত্রিকা, ৮-২) নিবন্ধ প্রসঙ্গে এই লেখা। আলাদা থাকলেও অনুভা রবি ঘোষের জীবনের অঙ্গ ছিলেন, বোঝা যায়, রবি ঘোষের এই লেখা থেকে: ‘‘...এই করতে করতে ’৭২ সাল এসে গেল। আবার আমার জীবনে ঘনিয়ে এল ঝড়। শোকের ঝড়। জানুয়ারিতে অনুভা চলে গেল। এপ্রিলে মা। সেপ্টেম্বরে দিদি। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। একা, শুধু একা।...অনুভা মারা যাবার পর দশ বছর আমি এক্কেবারে একা ছিলাম। তখন আমার জীবনে কোন ছন্দ ছিল না। মদ্যপান ভীষণ বেড়ে গিয়েছিল।...’’
অনুভার সঙ্গে হিট জুটি ছিল বিকাশ রায়ের। শুরু ‘অনন্যা’ ছবিতে, কানন দেবীর মেয়ের ভূমিকায় ছিলেন অনুভা, তাঁর প্রেমিকের ভূমিকায় বিকাশ। এই জুটির শেষ অভিনয় ‘ছদ্মবেশী’ ছবিতে।
অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়, ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে নবীন উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। নায়ক-নায়িকা রূপে বিকাশ-অনুভার নামও উঠে এসেছিল।
শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৮
মান্না নয়
‘মোহনবাগানের গ্যালারির...’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুভা গুপ্ত অভিনীত ‘কবি’ ছবির ‘এই খেদ মোর মনে’ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন মান্না দে। এটি তথ্যগত ভুল। এই গান গেয়েছিলেন রবীন মজুমদার। এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি, উত্তরা পূরবী উজ্জ্বলায়। পরবর্তী কালে ১৯৭৫ সালে সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তৈরি হওয়া ‘কবি’ ছবিতে, ওই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন মান্না দে। লিপ দিয়েছিলেন দেবরাজ রায়। অনুভা গুপ্ত কমিক চরিত্রেও যে রীতিমতো পারদর্শী ছিলেন, ‘ছদ্মবেশী’ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর অভিনীত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘ছায়াসূর্য’, ‘শুভা ও দেবতার গ্রাস’ (পরিচালক পার্থপ্রতিম চৌধুরী), ‘মা’ (পরিচালক চিত্ত বসু), ‘আলোর পিপাসা’ (পরিচালক তরুণ মজুমদার), ‘উত্তর পুরুষ’ (পরিচালক চিত্রকর)।
হীরালাল শীল
কলকাতা-১২