Kangana Ranaut

ইন্ডাস্ট্রির কুলীন তাচ্ছিল্যই কি তাঁকে বেপরোয়া করে তুলল ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার জন্য?

যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও ৩৩ বছর বয়সি কঙ্গনা রানাউতকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল যে কিছুতেই ডাকছে না, তার কারণটা কি, যা ভাবা হচ্ছে সেটাই?

Advertisement

শিলাদিত্য সেন

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:০৬
Share:

মনে হচ্ছে একটা কথা। যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও ৩৩ বছর বয়সি কঙ্গনা রানাউতকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল যে কিছুতেই ডাকছে না, তার কারণটা কি, যা ভাবা হচ্ছে সেটাই? অর্থাৎ, কঙ্গনা দীর্ঘ কাল ধরে যে স্বজনপোষণের অভিযোগ করছিলেন বলিউড ওরফে বম্বের হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে, সেই একই কারণে কি তিনি ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন বিজেপি সরকারের হাতে? তাঁর প্রতি এখন ‘নেপোটিজ়ম’ করছে স্বয়ং রাষ্ট্র, থুড়ি রাষ্ট্রের শাসক সরকার? দক্ষিণী অভিনেত্রী নাগমা তো প্রশ্নই তুলেছেন: “কঙ্গনাকে ডাকা হচ্ছে না কেন?”

Advertisement

গত এক মাস ধরে খবরের শিরোনামে তাঁর নিরন্তর অধিষ্ঠান। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-ই তাঁকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কেন এই নিরাপত্তার বহর, জানা নেই। দেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী-মৌলবাদীদের খপ্পর থেকে বাঁচাতে নিরন্তর লড়ে চলেছেন কঙ্গনা, এমনটা এখনও খবরে আসেনি— অথচ দেশবাসীর দেওয়া রাজস্ব বিপুল ভাবে খরচ হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তার জন্য, অর্থনীতির এই মহা দুঃসময়েও।

হয়তো দেশের কেন্দ্রীয় সরকার যে তাঁর স্বজন, তা জানেন বলেই কঙ্গনা সহজে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে এতটুকু পাত্তা না দিয়ে সোজা পৌঁছে যেতে পারেন রাজ্যপালের কাছে— বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন-এর বিরুদ্ধে তাঁর অফিস ভাঙার অভিযোগ জানাতে। সাধারণত কেউ সরব হলে, বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে মুখ খুললে, ধরে নিতে হয় যে প্রতিবাদী তিনি। অসহনীয় কোনও অবস্থা বদলানোর জন্যেই তিনি আগল ভেঙে কথা বলছেন। কঙ্গনাও তেমনই দাবি করছেন। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদী ইমেজ-এর দাবিটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত তিন বছরের হিসেব বলছে, যখনই যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন স্বাভাবিক জীবনে শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি তৈরি করেছে, কঙ্গনা সরকারের হয়ে যুুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি সরকারের বিপক্ষে কোনও প্রতিবাদের পক্ষেই তাঁর যুক্তিবাদীসত্তার প্রকাশ দেখা যায়নি। এতে স্বভাবতই তাঁর যুক্তির ভিতটি ঠিক কেমন, তার একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব।

Advertisement

তবে কিনা, এই ‘যুক্তি’ধারা তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে স্বস্তি এনে দিয়েছে অনেকটাই। অভিনেত্রী-জীবনের প্রথম পর্বে অশান্তি যেন তাঁর পিছু ছাড়ত না। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। নিজের পরিবারের সঙ্গেও পুরনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলেছেন তিনি, বোনকে কাছে এনে রেখে তাঁকেও কাজের সঙ্গী করে তুলেছেন। আগে নিজেকে সংখ্যালঘুর দলভুক্ত করতেন, বলতেন তিনি মাইনরিটির মধ্যে পড়েন তো, তাই তাঁকে এত অবহেলা করা হয়। তাতে বড্ড বেশি সমস্যায় পড়তে হত তাঁকে। এখন সে ভাবনা নেই। এখন তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে যান না। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা চিঠি লিখলে, তিনি আবার পাল্টা পত্রাঘাতও করেন। সম্প্রতি কিছু পুরস্কার পেয়েছেন— দুর্জনে বলছে, সরকারের এই বেসরকারি মুখপাত্র হয়ে ওঠার জন্যই, সরকার তাঁকে দ্রুত পদ্ম-সম্মানে ভূষিত করল এ বছর।

এই ‘সরকারি’ পর্বের আগে কেমন ছিলেন কঙ্গনা? কম বয়সে অভিনয় করতে এসেছিলেন, প্রথম ছবি ‘গ্যাংস্টার’-এর জন্য প্রশংসা, পুরস্কারও পেয়েছিলেন, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, ‘ফ্যাশন’... একের পর এক ছবিতে তাঁর সাফল্য একুশ শতকের প্রথম দশকটা জুড়ে দেখা গিয়েছিল। দ্বিতীয় দশকে ‘কুইন’, ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’, ‘সিমরান’-এ তাঁর অনবদ্য অভিনয় যেমন মুগ্ধ করল দর্শককে, তেমনই জাতীয় পুরস্কারও জুটল সেরা অভিনেত্রীর।

পড়াশোনায় ভাল ছিলেন, তবু প্রথাগত কেরিয়ার ছেড়ে, অনেকটাই নিজের মতো করে বাঁচার জন্য প্রথমে মডেলিং, তার পর থিয়েটার, সবশেষে সিনেমায় এসেছিলেন। হিমাচলপ্রদেশের মেয়ে, যৌথ পরিবারের সরল জীবনে বেড়ে উঠলে কী হবে, জেদি একগুঁয়ে, দরকার পড়লে বিদ্রোহী হয়ে উঠতে একটুও পিছপা হতেন না কঙ্গনা, নিজেই বলেছেন: “বাবা যদি ভাইয়ের জন্যে প্লাস্টিকের বন্দুক আর আমার জন্যে পুতুল নিয়ে আসত, আমি নিতাম না। জিজ্ঞেস করতাম, কেন এ ভাবে আলাদা করছ?”

বলিউডে আসার পর তাঁকে কোথাও ‘আলাদা’ করে দেওয়া হচ্ছে, এটাই সবচেয়ে বেশি মনে হত তাঁর, নিজেকে ‘আউটসাইডার’ ভাবতে শুরু করলেন। ভাল ইংরেজি বলতে না পারা, বাড়তি কথা বলা, বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, এ সব নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা কথা বলতে শুরু করলেন। এবং, ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন হয়েই থাকে, লড়াইটা হয়ে দাঁড়াল একক ব্যক্তি বনাম বিপুল ক্ষমতাশালী সমষ্টির। কঙ্গনা সেই রণাঙ্গন ছেড়ে পালাননি। পরিচালক কর্ণ জোহরকে তাঁরই অনুষ্ঠানের সেটে বসে শুনিয়ে দিয়েছিলেন স্বজনপোষণের অভিযোগ। আঙুল তুলেছেন তাবড় পরিচালক থেকে খ্যাতনামা সমালোচকের দিকে। বিতর্কে জড়িয়েছিলেন হৃতিক রোশনের সঙ্গে।

তাঁদের ‘কুলীন’ তাচ্ছিল্যই কি আসলে কঙ্গনাকে এতটা বেপরোয়া করে তুলল?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement