Child

ন্যায্যতার দাবি

এই প্রশ্নের উত্তরে দ্য ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (প্রোটেকশন অব রাইটস) বিল, ২০১৬-র কথা আসিবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

একটি মর্মান্তিক মৃত্যুসংবাদ। ঝাড়গ্রামে এক সদ্যোজাত শিশু মারা গেল তাহাকে লইয়া বৃহন্নলাদের নাচের পর। পুলিশ তিন বৃহন্নলাকে গ্রেফতার করিয়াছে। তাহাদের বিচার হউক। শিশুমৃত্যুতে তাহাদের দোষ প্রমাণ হইলে যথোপযুক্ত শাস্তিও হউক। কিন্তু, শুধু তাহাদেরই বিচার হইলে তাহা নিতান্ত আংশিক বিচার হইয়াই থাকিয়া যায় না কি? গৃহস্থের ঘরে শিশু জন্মাইবার পরই বৃহন্নলারা আসিয়া বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করেন; গৃহস্থ সেই দাবি পূরণে অসমর্থ বা অসম্মত হইলে বহু ক্ষেত্রেই বিপুলতর অসভ্যতাও করেন, যাহাতে গৃহস্থ তাঁহাদের দাবি মিটাইতে বাধ্য হন। ঘটনাক্রম অতি পরিচিত, এবং রাজ্যের সব প্রান্তেই এই বিষয়ে মানুষের ক্ষোভ প্রবল। সেই ক্ষোভ অস্বাভাবিক নহে— কেহ যদি বাড়িতে চড়াও হইয়া গা-জোয়ারি টাকা আদায় করিয়া লইয়া যায়, তাহাকে ন্যায্য বলা মুশকিল। কিন্তু, শুধু ক্ষুব্ধ হইলেই দায় ফুরায় না। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা কেন হয় বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়া টাকা আদায় করেন, অথবা কেন ট্রেনে আর ট্রাফিক সিগনালে ভিক্ষাবৃত্তি করেন— কেন তাঁহাদের অন্য কোনও পেশায় কার্যত দেখাই যায় না, এই প্রশ্নগুলি না করা অবধি দায়িত্ব ফুরায় না। প্রশ্ন করা প্রয়োজন, ঔপনিবেশিক আমলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যে বৈষম্যের শিকার ছিলেন, স্বাধীনতার সাত দশক অতিক্রান্ত হইবার পরও রাষ্ট্র তাহা ঘুচাইতে পারিল না কেন? যে সুতীব্র সামাজিক অবজ্ঞা, ঘৃণা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে জন্ম হইতে মৃত্যু অবধি পথ হাঁটিতে হয়, তাহার প্রতিকার হইল না কেন?

Advertisement

এই প্রশ্নের উত্তরে দ্য ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (প্রোটেকশন অব রাইটস) বিল, ২০১৬-র কথা আসিবে। বিল পেশ করিবার দুই বৎসর পর, ২০১৮ সালে, লোকসভায় বিলটি পাশ হয়। ১৯৪৭ হইতে ২০১৮, ৭১ বৎসরব্যাপী এই শম্বুকগতিই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি রাষ্ট্রের মনোভাবের যথেষ্ট পরিচায়ক। বিলের সারাৎসারও সেই মনোভাবেরই প্রমাণ পেশ করিবে। প্রশ্ন হইল, যে সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ তীব্রতম সামাজিক বঞ্চনার শিকার, তাহার উন্নয়ন রাষ্ট্রের নিকট অগ্রাধিকার পাইবে না কেন? সেই সম্প্রদায়ের কোনও অর্থেই কোনও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নাই, ইহাই সম্ভবত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অতএব, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকার করিয়া লইয়াই রাষ্ট্র কার্যত হাত গুটাইয়া লইয়াছে। ইতিবাচক অধিকারের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পায় নাই। এই জনগোষ্ঠীর কথা সংসদীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে লইয়া আসিবার দায়িত্ব কি দেশের সব দলের, বিশেষত বিরোধী দলগুলির, নহে? তাঁহাদের জন্য সর্ব ক্ষেত্রে সংরক্ষণ, আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা, সামাজিক কলঙ্ক ভাঙিবার জন্য বিশদ প্রচার ইত্যাদির দাবি করিতে হইবে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা ভোটার হিসাবে অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু যে রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের অধিকাররক্ষার কথা বলে, তৃতীয় লিঙ্গকে ভুলিয়া থাকা তাহাদের পক্ষে চরম অন্যায়। কারণ, এই লিঙ্গের মানুষগুলি শুধুমাত্র তাঁহাদের লিঙ্গপরিচয়ের কারণেই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রান্তিকতম অবস্থানে থাকেন। সেই প্রান্তিকতা হইতে তাঁহাদের উদ্ধার করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। বহু শতাব্দী ধরিয়া তাঁহারা যে সামাজিক বৈষম্যের শিকার হইয়াছেন, তাহার প্রতিকার না করিতে পারিলে এই দেশকে কি ন্যায্য বলা চলে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement