গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের প্রতিবাদ। চেন্নাইয়ে পিটিয়াইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।
বার্তাই সার? ধমকেই শেষ? নাকি প্রতিকারের ইচ্ছা সত্যিই রয়েছে?
প্রশ্নগুলো খোদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে।
গো-ভক্তির নামে মানুষ খুনের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণেই মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কণ্ঠস্বরেও দৃঢ়তা ছিল যথেষ্টই। আশান্বিত হয়েছিল গোটা দেশ। স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের তাণ্ডবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যে ভাবে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনার খবর আসছিল, তাতে এ বার ছেদ পড়বে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ছেদ পড়ল কোথায়? প্রধানমন্ত্রী যে দিন দেশের পশ্চিম প্রান্তের এক রাজ্যে দাঁড়িয়ে গাঁধীর শরণ নিয়ে অহিংসার বার্তা দিচ্ছিলেন, সে দিনই দেশের পূর্ব প্রান্তের এক রাজ্যে গো-মাংস কেনার অভিযোগ তুলে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল। ধরে নেওয়া যাক গুজরাত থেকে দেওয়া বার্তা তখনও ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত পৌঁছয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও একটা অঘটন ঘটে গিয়েছিল। কিন্তু স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের তাণ্ডব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অবস্থান কী, সে কথা আজ তো আর গোটা দেশে কারও জানতে বাকি নেই। ‘গো-রক্ষক’রা জানেন, আক্রান্তরাও জানেন। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার জানে, বিরোধী দলগুলিও জানে। কেন্দ্রীয় সরকার জানে, রাজ্য সরকারগুলিও জানে। তা সত্ত্বেও গো-রক্ষার নামে প্রাণঘাতী হামলা বা আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চলছে কী ভাবে?
খুব দূরেও নয়, প্রধানমন্ত্রীর দরবারের প্রায় উঠোনেই ঘটে গিয়েছে সাম্প্রতিকতম অঘটনটা। খাস রাজধানীর বুকে আক্রান্ত হয়েছেন ছ’জন। ‘অপরাধ’? মোষ নিয়ে যাচ্ছিলেন কসাইখানায়। বৈধ কাগজপত্র দেখাতে চেয়েছিলেন আক্রান্তরা। ‘গো-রক্ষক’রা দেখতে চাননি, শুধু হামলা করতেই চেয়েছিলেন। করেওছেন। অতএব, সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তার কোনও প্রভাব স্বঘোষিত গো-রক্ষা বাহিনীর উপর পড়েনি। এ দেশ, এ রাষ্ট্র, এ শাসন ব্যবস্থা কি তা হলে এতই অসহায় আজ? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানও মূল্যহীন? নাকি প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো শুধু কথার কথা ছিল, কাজের কথা নয়?
শুধু উচ্চারণ দৃঢ় হলে হয় না, অবস্থানটাও দৃঢ় হতে হয়। তবেই অবস্থানটা মূল্যবান হয়। গো-রক্ষার নামে মানুষ খুনের বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন। আইন হাতে তুলে নেওয়া বরদাস্ত করা হবে না বলে খোদ প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার পরেও যদি না থামে এই বর্বরতা, তা হলে তো দেশের শাসন কাঠামোটাই নৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রান্ত যাঁরা হচ্ছেন, তাঁরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনই। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথার খেলাপ হওয়ায় সমগ্র ভারতীয় গণতন্ত্র নৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই অপরিসীম ক্ষতিটা কি প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করছেন? যদি করেন, তা হলে যথোচিত দৃঢ় ভঙ্গিতে পদক্ষেপটাও করুন। শুধু কথায় কিন্তু কাজ হবে না। গো-রক্ষার নামে হত্যালীলা আর আক্রমণ রুখতে যে প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর, তার প্রমাণ কাজেও দিতে হবে। নিজের পদের গরিমা রক্ষার জন্যই তা আজ অপরিহার্য নরেন্দ্র মোদীর কাছে।
আশা করি, নরেন্দ্র মোদী সেটুকু অন্তত বুঝেছেন।