উৎসব তো মানবতার উদযাপনের লক্ষ্যে।—নিজস্ব চিত্র।
দেবী দানবের দলনী। অশুভের নিধনেই আরাধনা তাঁর। কিন্তু অশুভের বা দানবের নিধন নয়, আলোর উৎসবকে ঘিরে দানবের আরাধনা শুরু হয়ে গেল যেন। শব্দ-দানবের দাপট কাঁপন ধরিয়ে দিল শ্যামা আরাধনার আগের রাতেই।
আচমকা কিন্তু আত্মপ্রকাশ ঘটেনি এই দৈত্যের। ফি বছরই দীপাবলিতে তার অত্যাচার সহ্য করতে হয়। ফি বছরই অমাবস্যা নিশির কয়েক রাত আগে থেকে ধীরে ধীরে তার দাপট বাড়তে থাকে। ফি বছর তা নিয়ে হইচই শুরু হয়, সতর্কবার্তা জারি হয়। এবং ফি বছরই সব সতর্কবার্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীপাবলি নিশিকে অতিষ্ঠ করে তোলে শব্দবাজি। পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রেখে এ বছরও শব্দের দাপট-লেখ দুর্বার গতিতে ঊর্ধ্বমুখী। পুলিশ-প্রশাসন যতারীতি ঠুঁটো। সামাজিক সচেতনতাও যথারীতি বিসর্জনে।
প্রশ্ন হল, এ ভাবেই কি চলতে থাকবে বছর বছর? এই নেতির পরম্পরা ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টা কোনও দিনই কি করব না? বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখানোর নিত্যনতুন পথ খোঁজার নামই কি উৎসব? শব্দবাজির বেচাকেনায় লাগাম পরানোর চেষ্টা হলে, আতসবাজিকেই শব্দ-দানব করে তুলব?
শব্দের কর্কশ উল্লাসে কত রকমের সমস্যা আসে, কী ধরনের বিপর্যয় আসে, নতুন করে সে চর্চা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় আজ। চর্চাটা হওয়া জরুরি সামাজিকতার বুনিয়াদি ধারণাগুলোকে নিয়ে। পাড়ায় পাড়ায় বা অলি-গলি-তস্য গলিতে পৌঁছে শব্দ দানবের উপর পাহারা বসানো পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু প্রশাসনিক অপারগতা রয়েছে বলে নাগরিকরাও সামাজিকতার বোধ বিসর্জন দেবেন! অন্যের অস্বস্তি এবং অশান্তির কারণ হয়ে উঠে নিজের উৎসবকে যে সর্বাঙ্গসুন্দর করা যায় না, সেই ন্যূনতম বিচারবুদ্ধিটুকুও কি আমাদের থাকবে না!
এ ত্রুটি নতুন নয় আমাদের। বহু দিনের কালিমা এ। কিন্তু উৎসব তো মানবতার উদযাপনের লক্ষ্যে। সে উদ্যাপন ত্রুটি আঁকড়ে থাকার জন্য নয়, বরং উত্তরণের পথ খুঁজে নেওয়ার জন্য। যে অমাবস্যা নিশিতে সে পথ খুঁজে নিতে পারব, উৎসব নির্মল হবে সে রাতেই।