কবে মিটবে এই দুর্ভোগ? ছবি: এএফপি
আবার একটা শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পঞ্চাশ দিনে শেষ নয়, আবার একটা শুরুই বরং।
৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে একটা লড়াই শুরু হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় যা কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই। পঞ্চাশ দিন সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ৩০ ডিসেম্বরের পরে সমস্ত দুর্ভোগে সম্পূর্ণ ইতি।
কিন্তু বড়দিনের প্রাকসন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটু অন্য রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন আবার। এ বার তিনি বলেছেন, পঞ্চাশ দিন কাটার পর দুর্ভোগটা কমতে শুরু করবে। অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে মুদ্রাজনিত কোনও সঙ্কট আর থাকবে না, এমন নয়। আসলে ওই দিনের পর থেকে সঙ্কটমোচন শুরু হবে।
যে কথাটা প্রধানমন্ত্রী গোটা করে বলেননি, আশঙ্কার রূপ নিয়ে সেই কথাটাই চর্চিত হচ্ছে সর্বত্র এখন— নতুন বছরেও কি সঙ্কট কাটছে না তা হলে? নগদের আকালে হাঁসফাঁস কি এর পরও চলবে? সরকারের তরফে স্পষ্ট করে এমন কিছু বলা হয়নি, কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ সূচকগুলো তেমন আভাসই দিতে শুরু করেছে। পুরনো বছরের সঙ্গে দুর্ভোগের দিনগুলোও অতীত হবে, আশায় ছিল দেশ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত, নতুন বছরে দুর্ভোগের শেষ নয়, দুর্ভোগ শেষের শুরু।
এক অসহায় যাত্রাপথের রূপক উঁকি দিচ্ছে আবার। গোটা দেশকে অতর্কিতে অন্ধকার, সঙ্কীর্ণ, শ্বাসরোধকর এক সুড়ঙ্গে ঠেলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সুড়ঙ্গের শেষে অভূতপূর্ব এক সকাল অপেক্ষায় রয়েছে। শোষণ, বঞ্চনা, দারিদ্র, দুর্নীতির কোনও ছায়া নেই সে স্নিগ্ধ সকালে। কতটা পথ হাঁটলে সে সকালে পৌঁছনো যাবে, তাও বলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ঘোষিত সেই গন্তব্যের খুব কাছে এসে আজ শোনা যাচ্ছে, সুড়ঙ্গের শেষটা এখানে নয়। এ এক নতুন বাঁক। এই বাঁক থেকে সঙ্কীর্ণ পথটা একটু প্রশস্ত হতে শুরু করবে মাত্র।
সকালটা ঠিক কোথায়? এখনও স্পষ্ট নয়। দেশবাসী আর সহযোগিতা করতে প্রস্তুত নন, আর ধৈর্য্য ধরতে রাজি নন, এমন নয় ঠিকই। কিন্তু ধৈর্য্যের নিরন্তর এবং অনির্দিষ্ট কালীন পরীক্ষাও যে নেওয়া যায় না, তাও বোঝা দরকার। বিশ্বাসযোগ্যতা বিষয়টি অত্যন্ত মূল্যবান এবং ভঙ্গুরও। ছোটখাট স্তর থেকে বিশ্বাসের ভিতে ঘা লাগলে তবু সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু রাষ্ট্রভাবনার সর্বোচ্চ স্তরটা থেকে সে আঘাতটা এলে গোটা ব্যবস্থার উপর থেকেই আস্থা লোপ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।