Narendra Modi

নূতন মাত্রা

জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসের মুখোমুখি হইয়াও এই দেশ তাহার অতীত বিন্দুতে ফিরিল না, বরং বিপ্রতীপ একটি বিন্দুর অভিমুখে যাত্রার ইঙ্গিত রাখিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১২
Share:

—ফাইল চিত্র।

গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসা ছাড়া বাকি সমস্ত দিক দিয়া ফ্যাসিতন্ত্রই আপাতত এই দেশে কার্যকর— সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানাইয়াছেন রাষ্ট্রতত্ত্ববিদ প্রতাপ ভানু মেহতা। তাঁহার কথা যে কতটা প্রাসঙ্গিক, প্রমাণ করিয়া দিল ৩০ জানুয়ারি। মহাত্মা গাঁধীর নিধনবার্ষিকীর দিনটিতে, সেই রাজধানীতেই, নাথুরাম গডসের মতোই এক হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী বন্দুক হাতে ছুটিয়া আসিল নিরস্ত্র জনতার দিকে। না, বলা গেল না যে একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হইল। কেননা, সেই দিন গডসেকে দেখিয়া শিহরিয়া উঠিয়াছিল গোটা দেশ, বিহ্বল হইয়া পড়িয়াছিল নবজাত দেশের প্রশাসন, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেল দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ করিয়াছিলেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নিষিদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসের মুখোমুখি হইয়াও এই দেশ তাহার অতীত বিন্দুতে ফিরিল না, বরং বিপ্রতীপ একটি বিন্দুর অভিমুখে যাত্রার ইঙ্গিত রাখিল। ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন নিজের অবিচল নিষ্ক্রিয়তার ছাপ রাখিয়া গিয়াছে অকুস্থলেই। হিন্দু সন্ত্রাসবাদী যতটা আতঙ্কের শিহরন আনিয়াছে, তদপেক্ষা অনেক বেশি ভয় ছড়াইয়াছে আততায়ীর পিছনে সারি সারি দণ্ডায়মান পুলিশ, যাহারা বন্দুক-সহ এক জনকে জনতার দিকে ধাবিয়া আসিতে দেখিয়াও হাত গুটাইয়া দাঁড়াইয়াছিল! এহ বাহ্য। প্রকাশিত চিত্র সঙ্কেত দিয়াছে, তাহারা কেহ কেহ মোবাইল টেলিফোনে বা ক্যামেরায় ছবি তুলিতেছিল! স্বভাবতই সংশয় দেখা দিয়াছে, ইহা কি ভয়াবহ অন্যায়কে প্রশ্রয়, না প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক বেশি ভয়াবহ গভীর কোনও চক্রান্ত? এমনকি, ইহাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলা হইবে না কেন, কেহ সেই প্রশ্ন তুলিলে তাহা উড়াইয়া দেওয়া যায় কি? বিশেষত যখন এই ঘটনার দিন দুই আগে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ‘বিশ্বাসঘাতকদের গুলি মারিবার’ বিধানে প্রত্যক্ষ প্ররোচনা দিয়াছেন।

Advertisement

জামিয়ার ঘটনা আকাশ হইতে পড়িল না। গত কয়েক মাসে, দিল্লি পুলিশ ক্রমাগত নিরস্ত্র জনতার প্রতি মারমুখী হইয়াছে, প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের পিটাইয়া আধমরা করিয়াছে, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গুন্ডাবাহিনীর বীভৎস আক্রমণ নামিয়া আসিলেও নীরবে দাঁড়াইয়া থাকিয়াছে। নিজেদের নিষ্ক্রিয়তার বাহানা হিসাবে ‘অনুমতি নাই’ শুনাইয়াছে। নিজেদের অন্যায় ‘সক্রিয়তা’র যুক্তিগুলি ঢাকিতে মিথ্যা অভিযোগের বন্যা বহাইয়াছে। তবু এই সব সত্ত্বেও, বৃহস্পতিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিল্লি পুলিশের যে চেহারাটি দেখা গেল, তাহা এক নূতন মাত্রা সৃষ্টি করিয়াছে। নাগরিককে আতঙ্কে নিদ্রাহারা করিবার মতো চেহারা। ইহাই প্রশাসন? ইহার নাম নাগরিক নিরাপত্তা? এমন অন্যায়ের দায় দিল্লির পুলিশবাহিনীর নিয়ামক হিসাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উপর পূর্ণমাত্রায় বর্তায়। তাঁহারা অবশ্য সেই দায় স্বীকার করিবার কথা স্বপ্নেও ভাবিবেন না! রাজধর্ম বস্তুটি তাঁহাদের অভিধানে নাই, বোধ করি কস্মিন্‌ কালেও ছিল না।

বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রশাসন প্রমাণ দিয়াছে যে, দমন-পীড়নের ভাষাতেই তাহারা যে কোনও বিরোধিতাকে শায়েস্তা করিতে চাহে। ইহাই তাহাদের অসহিষ্ণু, বৈষম্যতান্ত্রিক, ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদের রাজনীতি, যে রাজনীতির চরিত্রটি এখন স্পষ্ট, প্রাঞ্জল। যে কোনও বিরোধীকে শাসকেরা রাষ্ট্রদ্রোহী বলিয়া দাগাইয়া দিতে সচেষ্ট, এবং সমর্থক, সে সন্ত্রাসবাদী হইলেও। তাঁহাদের তরফে হামলা চালাইবে সন্ত্রাসপন্থীরা, বক্তব্য পেশ করিবে আইটি সেল, এবং তাঁহারা নিজেরা রহিবেন নিরুচ্চার, নির্বিকার। ইহার পরেও যদি কাহারও মনে ফ্যাসিতন্ত্র কাহাকে বলে, সে বিষয়ে সন্দেহ থাকে, তবে হিন্দু মহাসভার মুখপাত্রের কথায় তাহা দূর হইবে। তিনি জামিয়া-কাণ্ডের ওই বন্দুকবাজকে ‘নাথুরাম গডসের মতো প্রকৃত জাতীয়তাবাদী’ বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। বৃত্ত সত্যই সম্পূর্ণ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement