Digital Revolution

ভাল লাগে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে? নাকি রিসেন্ট পোস্টের লাইক গুনতে?

স্কুলের বন্ধুদের বিভিন্ন প্রয়োজনে, কখনও অপ্রয়োজনে, হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপের ইনফো এত দিন বাবা-মায়ের ফোনে ঠাঁই পেত। যখন তখন ‘মা তোমার ফোনটা দাও’ বলে ফোন নিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা লক হত। লিখছেন শ্রীলেখা মিত্র

Advertisement

শ্রীলেখা মিত্র

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:০০
Share:

স্বপ্নের মায়াজাল। ইনসেটে শ্রীলেখা মিত্র। অলঙ্করণে তিয়াসা দাস।

মেয়েকে জন্মদিনে মোবাইল কিনে দিতে হল। আমার অলমোস্ট লক্ষ্মী মেয়ে। কখনও কিছু চায়নি আজ পর্যন্ত। উল্টে কী করে বাবা-মায়ের সাশ্রয় করা যায়, তার জন্য সদা সচেতন। অনেক দোষের মধ্যেও বাবা-মাকে কেউ কিপটে বলবে না বলে আমার ধারণা। এ হেন মেয়ের আবদার মেটানো উচিত, কি অনুচিত— এ বিষয়ে কিঞ্চিত্ দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়লাম। টেকনোলজির সো কলড অ্যাডভান্সমেন্টকে উপেক্ষা করিই বা কী করে?

Advertisement

স্কুলের বন্ধুদের বিভিন্ন প্রয়োজনে, কখনও অপ্রয়োজনে, হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপের ইনফো এত দিন বাবা-মায়ের ফোনে ঠাঁই পেত। যখন তখন ‘মা তোমার ফোনটা দাও’ বলে ফোন নিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা লক হত। আর মায়ের বুক ঢিপঢিপ করত। বাবার কী হত, বলতে পারব না যদিও। ইহাকেই বোধহয় মডার্নিটি কয়! ইনস্টাতে কেউ কাউকে ফলো করবে না— এই প্রতিশ্রুতিও তাকে দিতে হল। অর্থাত্ কেবলমাত্র হোয়াটস্অ্যাপই নয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটসের জাল তার নেটওয়ার্ক ছড়াল। আমার ঢিপঢিপানি আরও বাড়ল।

নেটফ্লিক্সে ‘ব্ল্যাক মিরর’ সিরিজটা যাঁরা আমার মতো গিলেছেন, তাঁরা হয়তো টেকনোলজি নামক এই ভিলেন বা এই অ্যান্টিহিরো নতুন নতুন আর কী খেল দেখাবে বা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে, তার আশঙ্কায় দিন গুনছেন। যদিও ‘ব্লু হোয়েল’, ‘মোমো’দের ভিড়ের মধ্যে কিন্তু #মিটু তার যথাযথ জায়গা করে নিয়েছে।

Advertisement

আজ আমার লেখাটার মধ্যে একটা পরিষ্কার অগোছালো ভাব রয়েছে, লিখতে লিখতে আমি নিজেই টের পাচ্ছি। পসিবলি এই বিষয়টা নিয়ে আমার ভেতরে যে অস্থিরতা কাজ করে, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট তারই প্রতিফলন। লাইফটাই যখন শালা একটা ভিসিয়াস সার্কেল, তখন আমরা বিভিন্ন কনস্পিরেসি থিওরির শিকার হব সেটা বলাই বাহুল্য।

আজকের এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোই কি তা হলে আমাদের ভবিষ্যতের ভূত? কই আমরা নাকি সোশ্যাল অ্যানিম্যাল? আক্ষরিক অর্থে সোশ্যাল শব্দটার সঙ্গে আপস করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে ঢুকে কেউ পিআর করি, কেউ নিজ নিজ ফেভার ব্যাঙ্ক তৈরি করি, কেউ নিজেদের সেক্সলেস ম্যারেজটাকে অব্যাহত রেখে প্রোফাইল চেক করে সো কলড হট ফোটো এডিটেড মহিলা বা পুরুষ খুঁজি। কেউ সেলফি তুলে ক্ষান্ত হই। কেউ বা অ্যানিম্যাল ভিডিয়ো লাইক বা শেয়ার করি। নো ম্যান ক্যান লিভ অ্যাজ অ্যান আইল্যান্ড জার্নিং থ্রু লাইফ অ্যালোন... ছোটবেলায় স্কুলে শেখা এই গানটা আজ বড় খোঁচা দেয়। আসলে এখন তো প্রত্যেকেই আমরা এক একটা লোন আইল্যান্ড। হাজার বা লক্ষাধিক ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডস দ্বারা পরিবেষ্টিত। যাদের প্রয়োজনে দেখা মেলে না। আর আমরাও হাত বাড়াই না। তাই না বন্ধু?

ভাল লাগে আজও স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে? মেঘলা দিনে নিষ্পলকে রামধনু খুঁজতে? নাকি সেই সময় ফেসবুক, ইনস্টাতে আপনার রিসেন্ট পোস্টের লাইক গুনতে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement