পাঁচটি রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ আজ। কে কৃতকার্য, কে ব্যর্থ, কে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে সামান্য এগিয়ে গেলেন, কে একটু পিছিয়ে পড়লেন, দুপুরের মধ্যই স্পষ্ট হয়ে যাবে সে ছবি। তার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কিছুটা স্পষ্ট হয়ে যাবে জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ দৃশ্যপটটাও।
এই ভবিষ্যৎ দৃশ্যপটটা আজ আকাশের গায়ে ঠিক কী রঙে আর কী রেখায় ফুটে উঠতে চলেছে, মূলত উত্তরপ্রদেশই তা নির্ধারণ করে দেবে। গণতান্ত্রিক মাপকাঠিতে পাঁচটি রাজ্যের ফলাফলই সমান তাৎপর্যের। কিন্তু রাজনৈতিক মাপকাঠিতে উত্তরপ্রদেশের লড়াইটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হওয়ার সুবাদে লোকসভায় ৮০ জন প্রতিনিধি উত্তরপ্রদেশের। তাই ভারতীয় রাজনীতির প্রাচীন ও পরিচিত প্রবাদ বলে— দিল্লি পৌঁছনোর সব রাস্তা উত্তরপ্রদেশ হয়েই যায়। গোটা দেশের দৃষ্টি অতএব নিবদ্ধ থাকছে আজ উত্তরপ্রদেশের দিকেই।
২০১২ বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী প্লাবন ছিল। সেই প্লাবনে সওয়ার হয়ে লখনউয়ের মসনদে পৌঁছেছিলেন অখিলেশ যাদব। তার মাত্র দু’বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচন যখন কড়া নাড়ল, তখনও যদি উত্তরপ্রদেশে একই দাপট দেখাতে পারতেন মুলায়ম-অখিলেশরা, নরেন্দ্র মোদীর দিল্লি-যাত্রা কিন্তু কঠিন হয়ে পড়ত বেশ কিছুটা। অখিলেশরা পারেননি, পেরেছিলেন মোদী-রাজনাথ-অমিতরা। গেরুয়া ঝড় বয়ে গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের উপর দিয়ে। দিল্লি অতএব মোদীরই এখন। কিন্তু ২০১৪-র সেই গেরুয়া ঝড় কি এখনও বহাল গো-বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে? নাকি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মরা গাঙে ফের বান ডাকিয়ে দিয়েছে সপা? মায়াবতীর মায়া কি ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে উত্তরপ্রদেশে? নাকি চমকপ্রদ পুনরুত্থান ঘটিয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চলেছেন দলিত হৃদয়পুরবাসিনী? সব প্রশ্নের জবাব মিলছে আজই।
প্রায় সমস্ত বুথফেরত সমীক্ষায় উত্তরপ্রদেশে ফের গেরুয়া ঝড়ের ইঙ্গিত। সমীক্ষা যদি সত্য প্রমাণিত হয়, দিল্লির মসনদে নরেন্দ্র মোদীর কর্তৃত্ব আরও জমাট তো হবেই, ২০১৯-এর লড়াইয়ের জন্যও আগাম অনেকটা এগিয়ে থাকবেন তিনি। আর যদি বিহারের মতো চমকে দেয় উত্তরপ্রদেশের জনতাও, যদি সব সমীক্ষায় জল ঢেলে ধরাশায়ী হয় বিজেপি এবং বাজিমাৎ করে রাহুল-অখিলেশ জুটি, তা হলে কিন্তু দেশের বর্তমান শাসকদের ক্ষয় আর পূর্বতন শাসকের পুনরুত্থানের অনুচ্ছেদ লেখা শুরু হয়ে যেতে পারে।
রাহুল গাঁধীর জন্য ব্যক্তিগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের ফলাফল। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী অসুস্থতার কারণে নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে চান। কিন্তু তাঁর বিকল্প হিসেবে রাহুল কি আদৌ প্রস্তুত? প্রশ্ন রয়েছে ঘরে-বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে প্রথম বার রাহুল একা সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিলেন দলকে। ফল ভাল হলে, রাহুল গাঁধীর আগামী যাত্রাপথ অনেকটাই কুসুমাস্তীর্ণ হয়ে উঠবে। আর বিপর্যয়ের মুখ দেখতে হলে আরও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে যাবে কংগ্রেস সহ-সভাপতির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
কোনও কোনও বিশ্লেষকের মত, জাতীয় রাজনীতির দুই মহারথীই ধাক্কা খেতে চলেছেন গো-বলয়ে। আঞ্চলিক মহারথী অখিলেশ আর মায়াবতীর জয়ধ্বজা উড়তে চলেছে। কোনও সমীক্ষাতেই যদিও এমন সম্ভাবনার কথা উঠে আসেনি। তবুও যদি মিলে যায় এই পূর্বাভাস, তা হলে দিল্লির অলিন্দে আঞ্চলিক মহারথীদের দাপটের যুগ আবার ফিরে আসতে পারে ২০১৯-এ।
আশা-আশঙ্কা, চ্যালেঞ্জ-পাল্টা চ্যালেঞ্জ, আলো-অন্ধকারের এই আবহে আনন্দবাজার ডিজিটাল নজর রাখছে ভোট গণনার প্রতিটি মুহূর্তের দিকে, হাজির করছে লাইভ আপডেট, থাকছে বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ। ফলাফলের গতিপ্রকৃতি জানতে তাই আপনাদের নজর থাকুক আনন্দবাজার ডিজিটালে।