India

নূতন কৌশল

দুই প্রতিবেশীর অক্ষটি চির দিনই ভারতের নিকট অস্বস্তির। ইদানীং তাহা বৃদ্ধি পাইয়াছে। ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে সন্ত্রাসবাদ ব্যবহারের অভিযোগে ২০১৮ সালের জুন মাসে এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকাভুক্ত হইয়াছিল পাকিস্তান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ভারতের দুই প্রতিবেশী চিন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বটি পুরাতন। কালের সহিত তাহা পোক্ততর হইতেছে, এবং নূতন নূতন রূপে ধরা পড়িতেছে। ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স-এর (এফএটিএফ) বৈঠকের প্রসঙ্গই ধরা যাউক। কালো তালিকাভুক্তি এড়াইতে ইসলামাবাদের নিকট তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার সমর্থন নিশ্চিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনেরও আশা আছে, কিন্তু সর্বাধিক ভরসা বেজিংয়ের উপরেই। বস্তুত, চিনের সহিত অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সম্পর্কগুলিও পাল্টাইয়া যাইতেছে। বর্তমানে এই দেশ পশ্চিমের, বিশেষত আমেরিকার উপর আর আগের ন্যায় নির্ভরশীল নহে। চারটি জরুরি ক্ষেত্রে বেজিংয়ের সেনা-আনুকূল্যই তাহাদের প্রধান ভরসা— চিনা যুদ্ধাস্ত্র রফতানি, পারমাণবিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে সহায়তা ও যৌথ গোয়েন্দা ক্রিয়াকলাপ। চিনের তরফে চিরাচরিত যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের সূচনা ১৯৬০-এর দশকে, পারমাণবিক ক্ষেত্রে সহায়তা তাহার দুই দশক পর হইতে। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার পরস্পরকে সহায়তা করিবার ঘটনা সাম্প্রতিক, বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতর হইবার পর।

Advertisement

বিগত ছয় দশকের এই ক্রমবর্ধমান মিত্রতায় বেজিংয়ের লাভও কম নহে। পাকিস্তানের ন্যায় পরমাণু শক্তিধর দেশকে আপনার অঙ্গুলিহেলনে চালাইবার মাধ্যমে তাহারা বারংবার দক্ষিণ এবং পশ্চিম এশিয়ার ছোট দেশগুলির সম্মুখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে, যাহা অসীম কৌশলগত ও অর্থনৈতিক উচ্চাভিলাষের পাথেয়। ছয় দশক পূর্বে সম্পূর্ণত প্রতিরক্ষা সূত্রে দুই দেশের সম্পর্কের সূচনা হইয়াছিল, পরবর্তী কালে যাহা অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে প্রসারিত হয়। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের অর্থনীতির গতি মন্দ হইয়াছে, স্কন্ধে পর্বতপ্রমাণ ঋণ জমিয়াছে, কিন্তু চিনের সহায়তায় প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ স্থগিত করে নাই ইসলামাবাদ। যথা চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে চিনের লাভ অধিক হইলেও দেশের অভ্যন্তরে অবরোধ অগ্রাহ্য করিয়াছে পাকিস্তান। বন্ধুত্বের সম্পর্কটি লইয়া উভয়েই এতখানি যত্নবান।

দুই প্রতিবেশীর অক্ষটি চির দিনই ভারতের নিকট অস্বস্তির। ইদানীং তাহা বৃদ্ধি পাইয়াছে। ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে সন্ত্রাসবাদ ব্যবহারের অভিযোগে ২০১৮ সালের জুন মাসে এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকাভুক্ত হইয়াছিল পাকিস্তান। তাহারা যে সেই নীতি হইতে অপসৃত হইয়াছে, ইহার নিশ্চিত প্রমাণ নাই। তৎসত্ত্বেও বৈঠকে চিন যদি পাকিস্তানের পক্ষে জান লড়াইয়া দেয়, তাহাতে ভারতের চিন্তান্বিত হওয়াই স্বাভাবিক। বস্তুত, কয়েক দশক ধরিয়া চিনের নিরবচ্ছিন্ন অস্ত্র সরবরাহ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির সহিত ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধ চালাইবার শক্তিও জোগাইয়াছে। ভারতের প্রতিক্রিয়া বিষয়েও তাহাদের মাথা ঘামাইতে হয় নাই। স্মরণে আসিতে পারে, জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল হইবার পর পাকিস্তানের প্রতি চিনের সহানুভূতি লক্ষণীয় রূপে বাড়িয়া যায়, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদেও বারংবার কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বেজিং। অনুমান করা যায়, আপাতত কালের সহিত এই মিত্রতা শক্তিশালী হইবে। সুতরাং, তাহার সহিত যুঝিবার জন্য ভারতকেও প্রয়োজনীয় কৌশলগত প্রস্তুতি লইতে হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement