Online Education

পরীক্ষা কাহাকে বলে

পরীক্ষার প্রশ্ন কেমন হওয়া প্রয়োজন, সেই বিবেচনা যে কোনও শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকা জরুরি। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি বড় অংশ কেবল ডিগ্রি বিক্রয়ের দোকান হিসাবেই থাকিয়া গিয়াছে। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০০:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি

অনলাইন ক্লাস চালু করিবার পাশাপাশি বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন পরীক্ষার দিকেও আগাইয়াছে। ঘরে বসিয়া পরীক্ষা, ফলে নজরদারি নাই, পাঠ্যবই খুলিতেও বাধা নাই। এমন ‘ওপেন বুক’ পদ্ধতি নূতন নহে। বহু উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানে তাহার প্রচলন আছে। এমন পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছাত্রের স্মৃতিশক্তির পরিমাপ নহে, তাহার চিন্তাশক্তির পরিমাপ। দুঃখের বিষয়, সব প্রতিষ্ঠান এখনও তেমন পরীক্ষা লইতে প্রস্তুত নহে। দিল্লির নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিকে সেই কারণে অপদস্থ হইতে হইল। অনলাইন গণিত পরীক্ষায় এমনই প্রশ্ন করা হইয়াছিল যে ইন্টারনেট সার্চ করিয়াই তাহার অধিকাংশের উত্তর মিলিয়াছে। ছাত্রছাত্রীরাও সে সুযোগ লইতে ছাড়ে নাই। এমন ভাবে বিব্রত হইবার আশঙ্কায় অনলাইন পরীক্ষা হইতে বিরত রহিয়াছে বহু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইনে পরীক্ষা না লইবার অপর যুক্তি হইল— কম্পিউটার এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা সকলের আয়ত্তে নাই, তাই বহু ছাত্রছাত্রী বৈষম্যের শিকার হইবে। এই যুক্তি অনস্বীকার্য। কিন্তু, খাতায়-কলমে পরীক্ষা ফিরিবার অপেক্ষায় না থাকিয়া উচ্চশিক্ষারত সকল ছাত্রছাত্রীর নিকট যথাশীঘ্র অনলাইন পাঠের প্রযুক্তি পৌঁছাইবার ব্যবস্থা করা বিধেয়।

Advertisement

পরীক্ষার প্রশ্ন কেমন হওয়া প্রয়োজন, সেই বিবেচনা যে কোনও শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকা জরুরি। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি বড় অংশ কেবল ডিগ্রি বিক্রয়ের দোকান হিসাবেই থাকিয়া গিয়াছে। তাহাদের পাঠদানের রীতি এবং পরীক্ষার পদ্ধতির সহিত ছাত্রছাত্রীর বোধ এবং অনুভূতির সম্পর্ক খুবই সামান্য। কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর উগরাইয়া দিবার ক্ষমতাটুকুই সেখানে পরীক্ষিত হয়। প্রশ্ন করিবার, বিতর্ক তুলিবার, নিজের মতো চিন্তা করিবার কোনও পরিসরই অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই। নম্বর-সর্বস্ব এই শিক্ষার সহিত ছাত্রদের মনের যোগ নাই। নিষ্প্রাণ, নিরানন্দ শিক্ষার এই পদ্ধতি দেখিয়াই রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করিয়াছিলেন, “আমাদের শিক্ষাকে আমাদের বাহন করিলাম না, শিক্ষাকে আমরা বহন করিয়াই চলিলাম...।”

এমন অসার শিক্ষাকে বহনের শক্তি সমাজের আর কত দিন থাকিবে? আজ অতিমারির প্রভাবে অর্থনীতি দুর্বল হইয়াছে, উচ্চশিক্ষার অর্থ জোগাইবার ক্ষমতা পরিবার ও রাষ্ট্র, উভয়েরই ক্ষয় হইয়াছে। কাজের বাজারের যেটুকু অবশিষ্ট রহিয়াছে, তাহা কেবল ‘ডিগ্রি’-নামধারী কাগজের টুকরার প্রতি আগ্রহী নহে। এমন কঠিন সময়েই চাল ও তুষ আলাদা করা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষার নামে মুখস্থ করিবার প্রবণতা বন্ধ হউক। চাকরি, স্বনিযুক্তি অথবা উচ্চতর গবেষণা, যে কোনও কাজই নূতন সমস্যার সম্মুখে দাঁড়াইয়া নূতন সমাধান দাবি করে। অর্থাৎ প্রয়োজন স্বকীয়তা। নিজের মতো চিন্তা করিবার ক্ষমতা। সেই শক্তি জাগ্রত ও পরিশীলিত করাই কি শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য নহে? বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা যদি সেই ক্ষমতা মাপিতে চাহে, তাহা হইলে ছাত্ররা বই অথবা ইন্টারনেট খুলিয়া পরীক্ষা দিতে বসিলেও ক্ষতি নাই। যে বস্তুটির পরিমাপ হইবে, তাহা কোনও বইয়েই মিলিবে না, মিলিবে কেবল পরীক্ষার্থীর মস্তিষ্কে। এমন পরীক্ষার শর্ত একটিই— শিক্ষকেরও স্বকীয় চিন্তা থাকিতে হইবে। নূতন যুগের শিক্ষায় শিক্ষক তাঁহার চিন্তার স্বাক্ষর রাখিবেন প্রশ্নপত্রে, ছাত্র উত্তরপত্রে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement