Newsletter

এই বেলাতেই সতর্ক না হলে দিল্লির বিভীষিকা আমাদেরও অপেক্ষায়

দিল্লির এমন অবস্থা এই প্রথম বার হল, তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রতি বছরও দীপাবলির পরে দিল্লির বাতাস ভয়াবহ হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতি বছরই গোটা শীতের মরসুম জুড়ে রাজধানীর হাওয়া দূষণে ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share:

ধোঁয়াশায় ঢেকে রয়েছে দিল্লির জামা মসজিদ চত্বর। ফাইল চিত্র।

বিপদের উপসর্গগুলো টের পাওয়া যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই। অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদরে দিগন্ত বিস্তৃত ফাটল হোক বা গঙ্গোত্রীর নিরন্তর পশ্চাদপসরণ, উষ্ণায়ণের জেরে গোটা বিশ্বের আবহাওয়ায় অনবরত বদলের ইঙ্গিত হোক বা সমুদ্রের জলস্তরে ক্রমবৃদ্ধি— প্রকৃতির তরফ থেকে সতর্কবার্তা আসছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু সাময়িক উদ্বেগ আর আলঙ্কারিক সতর্কতাতেই শেষ হয়ে যায় আমাদের যাবতীয় প্রয়াস। শেষের সে দিনের কথা না হয় বাদই দিলাম, আজ থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে যে ভবিষ্যৎ, তা আমাদের জন্য কত বড় বিভীষিকা বয়ে আনতে পারে, দিল্লি সম্ভবত তার নমুনা দেখতে পাচ্ছে।

Advertisement

ভয়ঙ্কর, শ্বাসরোধী, মারণ ধোঁয়াশায় নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা ভারতের রাজধানী শহরের। দিশাহারা দশা প্রশাসনের। নানান পদক্ষেপ করে, বিধিনিষেধ আরোপ করে যত দ্রুত সম্ভব নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে দিল্লি। কিন্তু ধোঁয়াশার এই বিভীষিকা থেকে মুক্তি মিলবে ঠিক কোন পথে, জানা নেই যেন কারওরই!

দিল্লির এমন অবস্থা এই প্রথম বার হল, তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রতি বছরও দীপাবলির পরে দিল্লির বাতাস ভয়াবহ হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতি বছরই গোটা শীতের মরসুম জুড়ে রাজধানীর হাওয়া দূষণে ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কোনও বছরই শিক্ষা নিই না। আর প্রতি বছরই পরিস্থিতি আগের চেয়ে একটু একটু করে খারাপ হতে থাকে। এ বছর দেশের সর্বোচ্চ আদালত দিল্লিতে বাজি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল দীপাবলির আগে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল, তা গোটা দেশই দেখেছে। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আদালতের জারি করা নিষেধাজ্ঞাকে কোন কোন সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, ঠিক কী ধরনের মন্তব্য এবং মূল্যায়ণ আদালতের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয়েছে, তাও কারও অজানা নয়। সুতরাং দিল্লির এই শোচনীয় দশা নিয়ে অভিযোগ করার অধিকারও আমরা হারিয়েছি।

Advertisement

আরও পড়ুন:দূষণে কড়া কোর্ট, জারি তরজা

দিল্লি আজ যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, কাল বা পরশু বা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তার হাত থেকে দিল্লি রেহাই পাক, এমনটাই কাম্য। কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই জানি, একগুচ্ছ বিধিনিষেধ আর আপত্কালীন প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দিল্লিতে যে স্বাভাবিকতা ফেরানোর চেষ্টা চলছে, সেই স্বাভাবিকতা চিরস্থায়ী হওয়ার নয়। উনিশ থেকে বিশ হলেই আবার ফিরবে বিভীষিকা। চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস তথা জীবনযাত্রাতেই কিছু বদল আনা দরকার। আর সেই বদলগুলো শুধু দিল্লির মানুষের উপরে নয়, আমাদের প্রত্যেকের উপরেই প্রযোজ্য হওয়া জরুরি। নচেত্ দিল্লির বিভীষিকা ভিন্নতর রূপে কাল মুম্বইতে, পরশু কলকাতায়, তার পর দিন চেন্নাইয়ে হানা দিতে দ্বিধা করবে না।

উদ্যোগটা কিন্তু রাজনীতির উঠোন থেকেও গৃহীত হতে হবে। ভারতের মতো দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত উদ্যোগ পূর্ণতই নাগরিক জীবন থেকে আসবে, এমন আশা করা বৃথা। রাজনৈতিক প্রশাসনকেই সক্রিয় হতে হবে। শুধুমাত্র ভোটের কথা ভেবে রাজনীতি করেন যাঁরা, তাঁদের একটু উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। এ দেশে উন্নয়ন দেখিয়ে ভোট মেলে। দু’টাকা কিলো চাল বা উপহার-উপঢৌকন বিলিয়ে আরও বেশি ভোট মেলে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ করে বা মানবজাতির ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্য উষ্ণায়ণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ দেশে জনমতকে খুব প্রভাবিত করা যায়, এমনটা নয়। কারণ এ দেশের ভোটাররা উষ্ণায়ণের প্রভাব বা পরিবেশ সংক্রান্ত সঙ্কট নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে ভোট দিতে যান, এমনটা নয়। আমাদের রাজনীতিকদেরই তাই একটু উদার হতে হবে। ভোটের বাক্সে প্রতিফলন ঘটবে না বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিফলন ঘটবে জেনেও পরিবেশ রক্ষার্থে জরুরি পদক্ষেপগুলো করতে হবে। সমস্যাটা গোটা পৃথিবীর ঠিকই। কিন্তু সভ্যতার ইতিহাসে আরও অনেক ক্ষেত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও না হয় ভারতই পথ দেখাক, জীবনযাত্রায় জরুরি পরিবর্তনের সূচনাটা না হয় ভারত থেকেই হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement