মৈনাক বিশ্বাসের ‘গণনাট্য ও উত্তরাধিকার’ (১০-১) শীর্ষক নিবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু বক্তব্য। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ নির্মিত হয়েছিল রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে ২৫ মে, ১৯৪৩ সালে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সময় মূল সংগঠক ছিলেন পূরণচাঁদ জোশী, যিনি পি সি জোশী নামেই পরিচিত। তিনি সেই সময় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিরও সর্বভারতীয় সম্পাদক ছিলেন। সম্মেলনের সভাপতি হিসাবে নাম ছিল মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের। তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সভাপতির ভাষণ দেন হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনিও মার্ক্সীয় দর্শনের তাত্ত্বিক পণ্ডিত হিসাবে সুখ্যাত। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের প্রথম সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন বাম শ্রমিক নেতা এন এম জোশী, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন বাম কৃষক নেতা বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের প্রতীকটি অঙ্কন করেন বাম দৃষ্টিভঙ্গির চিত্রশিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। অতএব গণনাট্যের ক্রিয়াকর্মে যে বাম মতাদর্শ প্রতিফলিত হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
লেখকের ‘সাবেকি বাস্তববাদ’ কথাটা বোধগম্য হল না। বাস্তববাদ তো সব সময় আধুনিক, গতিশীল। অনড় নয়। বাস্তবতা নির্ণীত হয় সমসাময়িকতার নিরিখে। রাশিয়ায় যে সব সময় দমনমূলক রীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা বোধ হয় ঠিক নয়। কারণ লেনিনের কাছে টলস্টয় অতি প্রিয় ঔপন্যাসিক ছিলেন। নানা বিরোধ থাকা সত্ত্বেও গোর্কির উপন্যাস, নাটক লেনিনের কাছে মূল্যবান বলে মনে হয়েছিল। মার্ক্স প্রায়শই ইস্কাইলাস, শেক্সপিয়রের নাটক পড়তেন এবং তাঁর পড়তে ভাল লাগত। শুধু তা-ই নয়, এঁদের নাটকের মধ্যে বৈষম্য এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর খুঁজে পেয়েছিলেন।
এটা ঠিক যে এক সময় বাম রাজনৈতিক দল গণনাট্য এবং পার্টিকে এক করে ফেলেছিল। নির্বাচনের কাজে লাগিয়েছিল গণনাট্যকে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অতুল্য ঘোষের ক্যারিকেচার করে নাটক করতে অনাগ্রহী হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং বেরিয়ে এসেছিলেন। পার্টি এবং গণনাট্যকে সমার্থক করে বাম রাজনৈতিক দলই গণনাট্যকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। গণনাট্য ভেঙে গিয়েছিল।
কিন্তু গণনাট্যের আদর্শের মৃত্যু হয়নি। গণনাট্যের আদর্শকে পাথেয় করেই জেলায় জেলায় সারা বঙ্গে নির্মিত হয়েছিল অসংখ্য গ্রুপ থিয়েটার। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল, নাটকের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। বিজন ভট্টাচার্য বলতেন, সাংস্কৃতিক কর্মীরা ক্ষেত্র তৈরি করবে, তাতে রাজনৈতিক কর্মীরা ফসল ফলাবে।
লেখক আরও বলেছেন, ‘‘লোকশিল্পের পুনরুজ্জীবন এবং এক নতুন জনপ্রিয় সংস্কৃতি নির্মাণ হবে অন্যতম লক্ষ্য।’’ সুধী প্রধান গণনাট্যের পক্ষ থেকে গুটিকয়েক লোকশিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেনমাত্র। যেমন, মুর্শিদাবাদে বার কয়েক এসে গুমানি দেওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, আলকাপ সম্রাট ঝাকসুকে নিয়ে কোনও আগ্রহ দেখাননি, বা মুর্শিদাবাদের বোলান শিল্পী সতীশ বিশ্বাস, মদন বিশ্বাস প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগই করেননি।
তবু গণনাট্যের ঐতিহ্য, প্রভাব বাংলা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। গণনাট্যের উত্তরাধিকার শুধু গণনাট্যই নয়, অসংখ্য গ্রুপ থিয়েটার বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট।
দীপক বিশ্বাস
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
অদ্ভুত অভিজ্ঞতা
গত ৯ জানুয়ারি সপরিবার মুর্শিদাবাদ বেড়াতে গিয়ে রাজ্য পর্যটন দফতরের বহরমপুর টুরিস্ট লজে উঠেছিলাম। চেক-ইন করার সময়েই দেখেছিলাম, লজের মধ্যেই রিসেপশন কাউন্টারের ঠিক লাগোয়া অংশেই বিলাসবহুল শামিয়ানা টাঙানো হচ্ছে। ম্যানেজারবাবুর কাছে জানলাম, কোনও বিত্তশালী ব্যক্তির ষষ্ঠবর্ষীয় পুত্রের জন্মদিনের উৎসব পালন করা হবে।
সন্ধেবেলা মুর্শিদাবাদ বেড়িয়ে যখন লজে ফিরলাম, সেই শামিয়ানার মধ্যে দিয়েই লজের রিসেপশনে ঢুকতে হল। সাড়ে সাতটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই নিমন্ত্রিতরা আসতে শুরু করলেন, আর শুরু হল বিশালাকৃতি সাউন্ড বক্সে মিউজ়িক বাজানো। নিমন্ত্রিতদের সম্মানেই হয়তো, তাঁরা যত ক্ষণ ছিলেন তত ক্ষণ মিউজ়িক চলছিল একটু সহনীয় ভলিউমে। তাঁরা বিদায় নিতেই একেবারে ফুল ভলিউমে চালিয়ে দেওয়া হল।
আমরা সারা দিন ঘুরে ক্লান্ত, কিন্তু ঘুমোনোর উপায় নেই। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠায় রাত এগারোটা নাগাদ বাইরে বেরিয়ে এলাম। রিসেপশনে কারও দেখা না পেয়ে নিজেই প্রতিবাদ করব বলে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু অনুষ্ঠান আয়োজক ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গ্লাস হাতে উদ্দাম নাচতে দেখে, একলা প্রতিবাদ করতে সাহসে কুলালো না। রাত একটার সময় সেই উদ্দাম আওয়াজ বন্ধ হল।
তখন আরম্ভ হল ডেকরেটরের পালা। তিনি ট্রাঙ্ক আর লোকজন নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন রাতের মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলার জন্য।
প্রসঙ্গত জানাই, সে দিন লজটি সম্পূর্ণ ভর্তি ছিল, অন্তত সরকারি ওয়েবসাইট তাই বলছে। এই রকম অবস্থায় বেসরকারি হোটেলেও যে জিনিস আশা করা যায় না, সরকারি টুরিস্ট লজে সেই অত্যাচার কী ভাবে অনুমোদন করা হচ্ছে দেখে আশ্চর্য বোধ করছি।
ইন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
কলকাতা-১৫৬
জার্মানিতে
‘মন কি বাত’-এর ৫২তম সংস্করণে ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের সমস্ত চ্যানেল মারফত সম্প্রচারিত হল যে এই বিষয়ে মোদীই পথিকৃৎ। কথাপ্রসঙ্গে তিনি জানালেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও দেশবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রেডিয়োর কথা ভেবেছিলেন। দেশান্তরী হওয়ার পর নেতাজি বেতার মারফত দেশবাসীকে বার্তা দিতেন এবং একই পদ্ধতিতে অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। দেশান্তরী স্বাধীনতা সংগ্রামী আর প্রশাসনিক প্রধানের বেতার ভাষণের প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
‘মন কি বাত’ সম্প্রচারের অনেক আগেই, ১৯৩০-এর দশকে, স্বৈরাচারী হিটলারের আধিপত্যবাদী জার্মানিতে প্রশাসনের উদ্যোগে প্রশাসনিক প্রধানের বাণী দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল।
কাজেই প্রশাসনের প্রধান হিসেবে মনের কথা বলার বিষয়টিও নতুন কিছু নয়।
১৯৩৩-এর ১৮ অগস্ট জোসেফ গোয়েবেলস নাৎসি জার্মানির প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে আসার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা দানা বাঁধতে থাকে। প্ৰথমেই ১৯২৫-এ প্রতিষ্ঠিত রাইখ ব্রডকাস্টিং কোম্পানিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া হল। আর ১৯৩৮ থেকে জার্মানির সমস্ত বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত শুরু হল ফ্যুরারের ভাষণ সমৃদ্ধ অনুষ্ঠানের সম্প্রচার।
দেশের মানুষের কাছে সস্তায় রেডিয়ো সেট পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারি ভর্তুকি দিয়ে Volksempfanger রেডিয়ো সেট বানানোর কাজে Siemens ও Telefunken সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হল। বাজার দরের অর্ধেক দামে নতুন ধরনের রেডিয়ো সেট বিক্রি করা হত। তবে এই রেডিয়ো সেট মারফত শুধুমাত্র জার্মানির নিজস্ব ন’টি চ্যানেলের সম্প্রচার শোনা যেত।
দিনের বিভিন্ন সময় সব মিলিয়ে ১১ ঘণ্টা ধরে অর্কেস্ট্রা, অপেরার গান এবং ফ্যুরারের ভাষণ মেশানো এই অনুষ্ঠান শোনা বাধ্যতামূলক করা হয়। নাগরিকরা এই অনুষ্ঠান শুনছেন কি না তার ওপর চলত নিয়মিত নজরদারি।
১৯৪১-এর মধ্যে জার্মানির প্রায় ৬৫ শতাংশ বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল সরকারি ভর্তুকির রেডিয়ো সেট। পার্ক, প্লাজ়া, কলকারখানা ইত্যাদি জায়গায় সরকারের উদ্যোগে লাউডস্পিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়। বেতার ব্যবস্থাই তখন যোগাযোগের সেরা প্রযুক্তি বলে অন্য কোনও মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ ছিল না।
অমিতাভ রায়
দিল্লি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।