Pressure

চাপ-কাহিনি

অন্যতর গুরুতর তাপও অনেক আছে, যেগুলি সত্যই উদ্বেগজনক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৫০
Share:

চাপ অতি বিষম বস্তু। সে সর্বদাই মানুষকে বড় চাপে রাখে! কখন যে কোন ছিদ্রপথে কালান্তক রূপে সে ঢুকিয়া পড়ে এবং গোলমাল পাকাইয়া দেয়, তাহা বোঝা বা বোঝানোও বেশ চাপের। অতএব সেই চাপ না লইয়া আপাতত এই সত্যে উপনীত হওয়া যাউক যে, শৈশব হইতে বহু রূপে মানুষের সম্মুখে ও পশ্চাতে চাপ ওত পাতিয়াই রহিয়াছে। তাহা লেখাপড়ার চাপ হইতে পারে, জীবন-সংগ্রামে সাফল্য-লাভের চাপ হইতে পারে, সংসারে গৃহিণীর হাসিমুখ অটুট রাখিবার চাপ হইতে পারে কিংবা বাজারে আলু-পটলের মূল্যবৃদ্ধির চাপও হইতে পারে— মোট কথা চাপ কদাপি সঙ্গ ছাড়ে না। এমনকি দৈনন্দিন জীবনচর্যায় ‘চাপ’ বেমালুম স্বীয় অধিকার জাহির করিয়া থাকে বলিলেও অতিকথন হয় না। এক্ষণে যদি কেহ ভাবিয়া বসেন, নিত্যচর্চায় এই রূপ চাপের আনাগোনা মূলত প্রাতঃকালীন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার সহিত সম্পর্কযুক্ত, তবে তাহা খণ্ডদর্শন। ভাবিয়া দেখুন, বাঙালির জিহ্বাগ্রে ‘চাপ’ আরও কত ভাবে উপস্থিত। এখনকার কালে নিজস্ব আলাপচারিতায় ‘চাপ’ শব্দটি বিবিধার্থে ব্যবহৃত হয়। কথায় কথায় ‘কোনও চাপ নাই’, ‘চাপ লইয়ো না’ ইত্যাদি বলিতে আমরা অভ্যস্ত হইয়াছি। প্রেমে, পূর্বরাগে বা কোনও তন্বীর প্রতি চোরাদৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার প্রকাশেও ‘চাপ’ই সহায়। এ কালের নব্যদের মুখের ভাষায় যখনতখন ‘কেসটা চাপের’ হইয়া যায়! তবে এই সব হইল রসিক চাপ। তাহা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছাইলেও হৃদ্‌যন্ত্রে সচরাচর ঘা দেয় না।

Advertisement

তবে অন্যতর গুরুতর তাপও অনেক আছে, যেগুলি সত্যই উদ্বেগজনক। মনুষ্য-নিয়ন্ত্রণের বাহিরে প্রাকৃতিক চাপ যে কত ভয়ঙ্কর হইতে পারে, আমপান ঝঞ্ঝার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা তাহার চরম সাক্ষ্য দিতেছে। শরীরের ক্ষেত্রে আছে রক্তচাপ, হৃদ্‌যন্ত্রে চাপ, বুকে চাপ প্রভৃতি। এগুলি এতটাই গুরুতর যে, সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করিলে প্রাণসংশয়ও হয়। যাঁহারা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন, তাঁহাদের নিরন্তর লক্ষ্য থাকে রক্তচাপজনিত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা। অবশ্য তাহাতে সম্পূর্ণ চাপমুক্তি ঘটে, এমন নিশ্চয়তাও নাই। শরীরচর্চা পুরাদমে জারি রাখিয়াও যে এই রূপ চাপের শিকার হইতে হয়, তাহার প্রমাণ যথেষ্ট। চিকিৎসকদের সাধারণ অভিমত, অনেক সময় পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণেও মানসিক চাপ পুঞ্জিভূত হইয়া শরীরের নিজস্ব চক্রে অকস্মাৎ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিতে পারে। তখন রক্তের চাপ, হৃদ্‌যন্ত্রের চাপ সবই নেতিবাচক হইয়া উঠিতে পারে। সচেতনতা সর্বদা বাঞ্ছনীয়।

তবে চাপের হিসাব কষিতে গিয়া মনের প্রসঙ্গ যখন আসিয়াই পড়িল, তখন জানা-অজানা ভয়ের চাপও ভুলিলে চলিবে না। সেই ভয় ভূতের হইতে পারে, ভবিষ্যতেরও হইতে পারে। ভয় পাইবার হইতে পারে, ভয় পাওয়ানোরও হইতে পারে। পরিণাম কিন্তু একই। আর চাপ থাকিলে কিছু ক্ষেত্রে তাহার নিকট নতিস্বীকার করা, না-করার একটি প্রশ্নও সমান্তরাল ভাবে আসিয়া পড়ে। ত্রেতা যুগে অযোধ্যাপতি দশরথ তাঁহার পত্নী কৈকেয়ীর চাপে রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠাইয়াছিলেন। পাছে লোকে কিছু বলে, তা-ই রাবণের কবলমুক্ত সীতাকে অগ্নিপরীক্ষায় ঠেলিয়াছিলেন তাঁহার পতি পুরুষোত্তম রাম। অর্থাৎ তাঁহারা চাপের ঊর্ধ্বে উঠিতে পারেন নাই। আজ সে রামও নাই, অযোধ্যাও নাই। তবু ঘোর কলিতে নানা অবতারে চাপ কিন্তু বহাল!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement