দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
বিবাহের লগ্ন আসন্ন। ঘুম উড়ে গিয়েছে পাড়া-পড়শির। ভালয় ভালয় কী ভাবে মিটবে বিবাহ পর্ব, পড়শিদের ভাবনা তা নিয়েই। কিন্তু পাত্র-পাত্রীর মধ্যে কোনও উদ্বেগই নেই। এ রাজ্যের পথ নিরাপত্তা হালটা এখন এ রকমই।
রাজ্যে উদ্বেগজনক চেহারা নিয়ে নিয়েছে পথ দুর্ঘটনা। পথ নিরাপত্তা নিয়ে ঢালাও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে প্রশাসন, অঢেল খরচ করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হচ্ছেন, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগান তুলছেন, ট্রাফিক পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মহানগরের রাজপথে সচেতনতার মিছিল করছেন, নজরদারি বাড়াচ্ছেন, কাজের কাজ তবু হয় না। যাঁদের জন্য এত কিছু, তাঁরা বাইক চালানোর সময় হেলমেট পরার কথা বা গাড়ি চালানোর সময় গতি নিয়ন্ত্রণের কথা কিছুতেই মনে রাখতে পারেন না।
কলকাতায় তো বটেই, জেলাতেও একই ছবি। গত কয়েক দিনে একের পর এক দুর্ঘটনার খবর এল নানা প্রান্ত থেকে। সোমবার রাতে দুই বাসের রেষারেষিতে উল্টোডাঙার কাছে পিষে গেল দুই কিশোর প্রাণ। মঙ্গলবার রাতে ফের প্রায় একই জায়গায় বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু আর এক কিশোরের। একই রাতে এ জে সি বোস রোডে বাইক দুর্ঘটনা, হেলমেটবিহীন তিন আরোহীর দু’জনেই মৃত। অন্য দিকে মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা যাওয়ার পথেও দুর্ঘটনা। গাড়ি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ। মৃত্যু ৬ জনের।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এতগুলো প্রাণ চলে গেল। চলে গেল অকারণে, অযথা। শুধুমাত্র অবহেলা এবং অসতর্কতার কারণে প্রাণের এই অপচয়। দুর্ঘটনার প্রত্যেকটা খবর মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক তো বটেই। ছবিগুলো অসহনীয়ও। যে কোনও অকাল মৃত্যুই অনাকাঙ্খিত। অকালে ঝরে পড়া প্রাণগুলো যদি তরতাজা হয়, হৃদয় ছিঁড়ে আসতে চায় যন্ত্রণায়।
আরও পড়ুন: দিঘার পথে দু্র্ঘটনা, ৫ তৃণমূল নেতা-সহ মৃত ৬
এই বিপজ্জনক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর কত দিন? আমাদের প্রত্যেকের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ থাকলেই দুর্ঘটনাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। সরকার তথা প্রশাসন সচেতনতার জন্য যতখানি উদ্যোগী হয়েছে, তাতে এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্লোগান। তা সত্ত্বেও মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহরে এবং শহরের বাইরে যে সংখ্যক প্রাণ অকারণে ঝরে গেল সেই সংখ্যার দিকে তাকালে এক বারও মনে হয় না, পথ নিরাপত্তা নিয়ে এ রাজ্যের সরকার এমন নিবিড় সচেতনতা অভিযান চালিয়েছে। মনে হয় না, সরকারি সতর্কবার্তা রাজ্যবাসীর উপরে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পেরেছে। এই প্রবণতা জীবনের বিপ্রতীপে অবস্থান করছে। এত সতর্কবার্তা সত্ত্বেও সতর্ক না হওয়া বা হতে না পারা আসলে বহুমূল্য জীবনটারই অপমান। সে অপমানের ফলাফলই বোধহয় পেতে হচ্ছে হাতেনাতে।