এটিএমে এ দিনও ছিল লম্বা লাইন।
দেশবাসী ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, সহযোগিতার পথে হাঁটতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। বরং সমর্থন রয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সব পদক্ষেপে। কিন্তু সহযোগিতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যও ন্যূনতম প্রাণবায়ুটুকু দরকার। সেটুকু আসবে কোন বাতায়ন পথে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
মুদ্রা সঙ্কট যে দেশের রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা ডেকেছে, তা সুদূর প্রবাস থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে ফিরেই আবেগঘন বার্তা তাই। দশকের পর দশক ধরে যে লুঠতরাজ দেশে, তার শেষ এ বার দেখতেই হবে, নির্ঘোষ প্রধানমন্ত্রীর। সে সঙ্গে আশঙ্কাও, প্রতিহিংসার আশঙ্কা। এ লড়াইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের আকার দেওয়ার চেষ্টা করেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ভারতবাসীর থেকে আরও একটু সময় চাওয়া হয়েছে, আরও একটু ধৈর্যের প্রত্যাশা রাখা হয়েছে। আরও একটু সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ অনুরোধের প্রয়োজন সম্ভবত ছিল না। দেশবাসী সহযোগিতার পথেই হেঁটেছেন এ যাবৎ। আচমকা নেমে আসা সঙ্কটের আবর্তে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে হোঁচট এখন। তা সয়েও আসমুদ্রহিমাচল বলেছে, সঙ্গে আছি। কিন্তু এই অকুণ্ঠ সমর্থনের ন্যূনতম প্রতিদানটুকু তো জরুরি। না হলে ধৈর্য্যচ্যূতি অস্বাভাবিক নয়। প্রধানমন্ত্রী সেটুকু বুঝেছেন বলে মনে হল না।
আচমকা নোট বাতিলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব, তা মোকাবিলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি যে ছিল না, সে গত কয়েক দিনের অব্যবস্থাতেই স্পষ্ট। কিন্তু এ বার তো সামলে নেওয়ার সময় হয়েছে। এই অব্যবস্থা আর হোঁচট নিয়ে অনির্দিষ্ট কাল কাটানোর জন্য দেশ প্রস্তুত, এমন প্রত্যাশা কোনও তরফেই কাম্য নয়। মুশকিলটা এ বার কিছুটা আসান করতেই হবে। ন্যূনতম সমাধানসূত্র খুঁজে বার করতেই হবে। উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক, দিনের পর দিন ঘরে ঘরে হাঁড়ি চড়া আটকে যাওয়ার মূল্যে তার সাধন কোনও গ্রহণযোগ্য পন্থা হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীকে এবং তাঁর সরকারকে অবিলম্বে এই সত্য অনুধাবন করতে হবে।
উপলব্ধিটা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই, এমনই ভেবেছিল ভারত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সে উপলব্ধির কোনও প্রতিফলন দেখা গেল না। অতএব, পরিস্থিতি পূর্ববৎ মসৃণ নাও থাকতে পারে।
প্রশাসনের উদ্দেশ্য সাধু, সংশয় রাখছি না। কিন্তু মনে রাখা দরকার, দেশবাসীর স্বার্থেই প্রশাসনের অস্তিত্ব, প্রশাসনের জয়ধ্বনির মঞ্চ প্রস্তুত করার স্বার্থে দেশবাসীর অস্তিত্ব নয়।