Board examinations

মেঘ সরিয়ে উজ্জ্বল আজ অর্ধেক আকাশ

পরীক্ষায় কোনও ছাত্রীর প্রথম স্থান পাওয়ার তাৎপর্য কোনও ছাত্রের প্রথম হওয়ার চেয়ে আলাদা কেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাৎপর্য কিন্তু আলাদা নয়, আলাদা হওয়ার কথাও নয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০৪:৪০
Share:

মুখমিষ্টি: মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরে খুশিতে উদ্বেল ছাত্রীরা।—ফাইল চিত্র।

অনন্যা মাইতি, অন্বেষা পাইন— এক জন আইএসসি-র প্রথম স্থানাধিকারী, অন্য জন মাধ্যমিকের। দু’জনকেই অনেক অভিনন্দন। বাংলা মাধ্যম থেকে ইংরেজি মাধ্যম, কেউ দশম শ্রেণির পরীক্ষায়, কেউ দ্বাদশ শ্রেণির— শীর্ষ স্থানে মেয়েরা। বিশেষ অভিনন্দন অবশ্যই প্রাপ্য।

Advertisement

পরীক্ষায় কোনও ছাত্রীর প্রথম স্থান পাওয়ার তাৎপর্য কোনও ছাত্রের প্রথম হওয়ার চেয়ে আলাদা কেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাৎপর্য কিন্তু আলাদা নয়, আলাদা হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু আমাদের সামাজিক বাস্তবতাটা ঠিক যে রকম, তার প্রেক্ষিতে পরীক্ষায় প্রথম স্থানটি মেয়েদের দখলে যাওয়া সত্যিই বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ঠিক যে কারণে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে মাধ্যমিকে বাসন্তী কিস্কু বা অঞ্জলি মান্ডিদের সাফল্যও। অনেক অভিনন্দন আজ তাঁদের জন্যও।

সভ্যতা অনেকটা অগ্রসর হয়েছে, সমাজও অনেকখানি এগিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মেয়েদের এগনোর পথটা আমাদের সমাজে আজও পুরুষের পথের মতো মসৃণ হয়ে ওঠেনি। অনেক প্রতিবন্ধকতা, অনেক বিঘ্ন, অনেক বাধ্যবাধকতার সঙ্গে আপোস আজও নিত্যকার সঙ্গী মেয়েদের। কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য হন, কারও পড়া মাঝ পথে থামিয়ে দেওয়া হয়, কারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা শিকার হয় কটাক্ষ আর অবহেলার। অনন্যা, অন্বেষারা সে সব প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়তো হননি। হননি বলেই কৃতিত্বের অসামান্য স্বাক্ষরও রেখেছেন। কিন্তু বাসন্তী, অঞ্জলিদের কৃতিত্বও বোধ হয় কোনও অংশে লঘু নয়। ‘ডাইনি’ অপবাদে গ্রামছাড়া কেউ। কেউ সামাজিক বয়কটের শিকার নিজের অকাল-বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে। অবর্ণনীয় এবং অসহনীয় পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝেছেন তাঁরা, তার মাঝেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাটায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছেন। অনন্যা মাইতি, অন্বেষা পাইনের পঙ্‌ক্তিতেই তাই রাখতে হচ্ছে বাসন্তী কিস্কু, অঞ্জলি মান্ডিদের নামও।

Advertisement

আবার বলি, অনেক অভিনন্দন প্রত্যেককে। আরও উজ্জ্বল হোক অর্ধেক আকাশ। এতটাই উজ্জ্বল হোক, যাতে ভবিষ্যতে মেয়েদের প্রথম হওয়াকে অন্যতর তাৎপর্যের আলোয় দেখতে না হয় আর। তবে উজ্জ্বল আলোকবৃত্তে ইতিমধ্যেই যাঁরা, হাতটা তাঁদেরও বাড়াতে হবে অন্ধকার হাতড়ে এগিয়ে আসাদের দিকে। অনন্যা, অন্বেষাদের দায়িত্ব এখন অনেকখানি। বাসন্তী, অঞ্জলিদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা তাঁদেরও ভাবতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement