কাণ্ডজ্ঞানের জয়

স্পেনের প্রধান মধ্য-দক্ষিণপন্থী দল পার্তিদো পপুলার-এর (পিপি) আসনসংখ্যা গত নির্বাচনের তুলনায় অর্ধেকেরও নীচে নামিয়া আসিয়াছে। স্পষ্টতই, এই দলের সমর্থকদের একটি বড় অংশ ভক্সের শিবিরে সরিয়া গিয়াছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৯ ০০:২১
Share:

গত এক দশকে বা তাহার কিছু বেশি সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যখন উগ্র দক্ষিণপন্থীদের দাপট বাড়িতেছে, তখনও স্পেন ছিল ব্যতিক্রমী। তিন বছর আগে সেই দেশের নির্বাচনে অতি-দক্ষিণপন্থী ভক্স পার্টি এক শতাংশ ভোটও পায় নাই। কিন্তু সদ্যসম্পন্ন নির্বাচনে তাহাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি। এবং ২৪টি আসন দখল করিয়া তাহারা এই প্রথম দেশের আইনসভায় প্রবেশ করিতে চলিয়াছে। অর্থাৎ জার্মানির এএফডি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল র‌্যালি (ভূতপূর্ব ন্যাশনাল ফ্রন্ট), নেদারল্যান্ডসের এফভিডি ইত্যাদির পাশাপাশি স্পেনের ভক্সও জাতীয় রাজনীতিতে অগ্রণী। সম্প্রতি আন্দালুসিয়া প্রদেশের নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে এই বার জাতীয় নির্বাচনেও তাহারা সফল। স্পেনকে কি তবে আর ব্যতিক্রমী বলা চলিবে না? জেনারেল ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোর দীর্ঘ সামরিক শাসন হইতে মুক্তি পাইবার পরে মধ্যপন্থী সমাজতন্ত্রী এবং রক্ষণশীলরাই চার দশক সেখানে জনসমর্থন ভাগ করিয়া আসিয়াছে, কিন্তু এই বার সেই দেশেরও দক্ষিণায়ন শুরু হইল?

Advertisement

আশঙ্কা অবশ্যই আছে। স্পেনের প্রধান মধ্য-দক্ষিণপন্থী দল পার্তিদো পপুলার-এর (পিপি) আসনসংখ্যা গত নির্বাচনের তুলনায় অর্ধেকেরও নীচে নামিয়া আসিয়াছে। স্পষ্টতই, এই দলের সমর্থকদের একটি বড় অংশ ভক্সের শিবিরে সরিয়া গিয়াছেন। চরমপন্থা এ ভাবেই বিভিন্ন দেশে মধ্যবাদীদের আকর্ষণ করিয়া থাকে। তবে দুইটি কথা। এক, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের দক্ষিণপন্থীদের সহিত ভক্সের কিছু তফাত আছে। তাহারা প্রধানত ক্যাটালন বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে দেশের সংহতি রক্ষার ধ্বজাটিকে অন্য সব দল অপেক্ষা উঁচুতে তুলিয়া ধরিয়াই জনসমর্থন আদায় করিয়াছে। স্পেনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ক্যাটালনিয়া প্রদেশের স্বাধিকারের দাবি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। মানিতে হয় যে, ইউরোপের বিবিধ চরমপন্থী দলের মতো বিদেশি বা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের আগুন ছড়াইয়া লোক খেপাইবার নীতি ভক্স অনুসরণ করে নাই। কারণ, ওই ধরনের বিদ্বেষ এখনও স্পেনের সমাজে যথেষ্ট জনপ্রিয় নহে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

আজ নহে বলিয়া কাল জনপ্রিয় হইবে না, এমন কোনও নিশ্চয়তা নাই। দেশের রাজনীতিতে চরমপন্থার দাপট যাহাতে না বাড়ে, তাহা দেখিবার কাজ মধ্যবাদীদেরই। বিশেষত ক্ষমতাসীন এবং এই নির্বাচনে সর্বাধিক আসনে বিজয়ী সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দল (পিএসওই) ও তাহার নেতা, দেশের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেস-এর। বস্তুত, গত বছর পিপি-র নেতা মারিয়ানো রাহয়-এর পদত্যাগের পরে সংখ্যালঘু সরকার গড়িবার এক বছরের মধ্যে অন্তর্বর্তী নির্বাচন ডাকিয়া যে ঝুঁকি পেদ্রো সাঞ্চেস লইয়াছিলেন, তাহা সার্থক হইয়াছে— তাঁহার দলের আসনসংখ্যা অনেকখানি বাড়িয়াছে, যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখনও অধরা। এই সাফল্যের পিছনে প্রধান ভূমিকা লইয়াছে অল্প সময়ের মধ্যে তাঁহার অনুসৃত কিছু জনকল্যাণী নীতি, বিশেষত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি অনেকখানি বাড়াইয়া দিবার সিদ্ধান্ত। এই পথ কাণ্ডজ্ঞানের পথ। ইতিহাস বারংবার দেখাইয়াছে, কাণ্ডজ্ঞানই চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে সার্থক প্রতিরোধ গড়িবার শ্রেষ্ঠ উপায়। স্পেন সেই পথে ঠিক ঠিক চলিতে পারিবে কি না, বাকি ইউরোপের পক্ষে তাহা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাকি পৃথিবীর পক্ষেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement