Kaustubh Bagchi

খুবই ব্যয়বহুল প্রতিজ্ঞা, গভীর চিন্তায় আছি

এক বার মুড়োলেই যে অনন্তকালের জন্য ওই রকম ডিমের খোলার মতো মসৃণ এবং তকতকে মুন্ডু পাওয়া যাবে, তা নয়! নিত্য ক্ষৌরকর্ম করাতে হবে।

Advertisement

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩ ০৮:০০
Share:

নক্ষত্রেরা বিভিন্ন ছবির চরিত্রে অভিনয়ের প্রয়োজনে মাথা মুড়িয়ে থাকেন। আমাদের দেশে সকলের আগে চোখে পড়েছিলেন মডেল পারসিস খাম্বাট্টা। ছবি: গেটি ইমেজেস।

ন্যাড়া হওয়া খুব সহজ। কিন্ত ন্যাড়া থাকা?

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে গভীর চিন্তায় আছি। কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা কৌস্তুভ বাগচী আদালত থেকে জামিন পেয়ে সেখানেই নাপিত ডাকিয়ে মস্তক মুণ্ডন করিয়েছেন। এবং জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা থেকে উৎখাত না-করা পর্যন্ত তিনি মাথায় আর চুল রাখবেন না। মহতী ব্রত, সন্দেহ নেই। স্টাইল হিসেবেও মন্দ নয়। কিন্তু খুবই ব্যয়বহুল! চিন্তায় আছি।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যখন মাথার চুল দ্রুত কমতে শুরু করেছে, তখন এক বার সিরিয়াসলি ভেবেছিলাম ন্যাড়া হয়ে যাই। জীবনে বাঁশ থাকবে না। বাঁশিও বাজবে না। চিন্তা করে দেখেছিলাম, হলিউডে ব্রুস উইলিস, জেসন স্ট্যাথাম, জন ট্রাভোল্টা। অন্যতম প্রিয় টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসি। বলিউডে অনুপম খের। এঁরা সকলে তো দিব্যি আছেন ন্যাড়ামুন্ডি হয়ে। তা হলে আমার আর কী বেশি ক্ষতিটা হবে ছাই!

Advertisement

তার পরে ভেবেটেবে দেখলাম, এক বার মুড়োলেই যে অনন্তকালের জন্য ওই রকম ডিমের খোলার মতো মসৃণ এবং তকতকে মুন্ডু পাওয়া যাবে, তা নয়! এ হল দাড়ির মতো। কামালে আবার গজাবে। সে পরিমাণে যতই কম থাকুক না কেন। নরসুন্দর ডাকিয়ে নিত্য ক্ষৌরকর্ম করাতে হবে। পাড়ার সেলুনে খোঁজ নিলাম, এক বার ন্যাড়া হতে খরচ ১০০ টাকা। মানে দৈনিক কামালে মাসে ৩,০০০ টাকা! নতুবা নিজে মাথায় শেভিং ফোম লাগিয়ে রেজ়ার চালাতে হবে। কী আপদ!

ন্যাড়া সেলেবরা। বাঁ দিক থেকে ব্রুস উইলিস, জেসন স্ট্যাথাম, জন ট্রাভোল্টা, আন্দ্রে আগাসি এবং অনুপম খের। —ফাইল চিত্র।

দেখলাম, ন্যাড়া হওয়া খুব সহজ। কিন্তু ন্যাড়া থাকা নয়। ফলে ক্রমহ্রাসমান চুল নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাব স্থির করেছি। এমনিতেই যত্নের জিনিস সহজে ঝরে যায়। এ-ও তেমনই নিজে থেকে ঝরে গেলে গেল। নইলে যা আছে ঠিকই আছে।

আমাদের দেশে নক্ষত্রেরা বিভিন্ন ছবির চরিত্রে অভিনয়ের প্রয়োজনে মাথা মুড়িয়ে থাকেন (উদাহরণ: হালের ‘অগ্নিপথ’ ছবিতে সঞ্জয় দত্ত)। সকলের আগে চোখে পড়েছিলেন মডেল পারসিস খাম্বাট্টা। ১৯৭৯ সালে ‘স্টার ট্রেক’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ন্যাড়া হয়েছিলেন পারসিস। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সাহসের কাজ, সন্দেহ নেই।

কিন্তু ব্যক্তিজীবনে? মনে পড়ছে না। কারণ পরিপার্শ্বে ন্যাড়ামাথা হয়ে ঘুরতে ধক লাগে। ভারতের কোনও বড় তারকা সেটা করার হিম্মত দেখাননি। অন্তত চোখে পড়েনি সে ভাবে। বরং দ্রুত টাক পড়ে যাওয়ার আতঙ্কে কৃত্রিম উপায়ে মাথায় চুল গজিয়েছেন বা পরচুলা পরেছেন এমন উদাহরণই বেশি। তা বেশ করেছেন। চাকরি বাঁচাতে কত কিছু করতে হয়! অভিনয়ও তো এক প্রকার চাকরিই। মাইনেপত্তর অনেক বেশি, এই-ই যা। বলতে নেই, খাটুনিও বেশি। এক বার আলোচনাক্রমে শাহরুখ খানের প্রাইভেট জেট আছে, যখন-তখন যেখানে-সেখানে উড়ে যেতে পারে প্রাণ চাইলেই, কী আরাম আর বিলাসের জীবন ইত্যাদি বলে হা-হুতাশ করছিলাম। এক বন্ধু বোধিজ্ঞান লাভ করাল— ‘‘যে প্রাইভেট জেটের কথা বলছিস, তার জ্বালানি কিনতে কোথাকার ঘাম কোথায় কোথায় ফেলতে হয় সেটা ভেবে দেখেছিস?’’

ঠিকই। এটা ভেবে দেখিনি। যাকগে।

গত বছর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট কভার করতে গিয়ে বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে অনেকক্ষণ বসেছিলাম। অদূরে গঙ্গার উপর ‘মসান’ ছবিতে দেখা সেই বিখ্যাত রেলপুল। খানিক দূরে মণিকর্ণিকা ঘাটের পাশে চিতা জ্বলছে ধূ-ধূ করে। দশাশ্বমেধ ঘাটের বিখ্যাত ছাতাগুলোর তলায় সার দিয়ে বসে গুচ্ছ গুচ্ছ লোক ন্যাড়া হচ্ছে আর তার পরেই গঙ্গায় নেমে ঝুপঝুপ করে ডুব দিচ্ছে। নিরীক্ষণ করে দেখলাম, ন্যাড়া হওয়াটা খুব সহজ। কিন্তু ন্যাড়া করাটা একটা আস্ত স্কিল। মাথাটা জলে ভিজিয়ে চাঁদির কাছ থেকে ক্ষুর চালানো শুরু। তার পর দেখতে দেখতে সব ফক্কা! একেবারে চাঁছাপোঁছা মায়ের বাছা। বারাণসীর আকাশের মধ্য দুপুরের সূর্যের ঝিলিক চকচকে মাথায় পড়ে পিছলে পিছলে যাচ্ছে। সে এক মহাজাগতিক এবং অপার্থিব দৃশ্য। কিন্তু সে একেবারেই ধর্মীয় কারণে। তার সঙ্গে ফ্যাশনের কোনও সম্পর্ক নেই।

ফ্যাশন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন— ১. ন্যাড়ামাথা এবং ক্লিন শেভ্ন পুরুষেরা টেকো পুরুষদের চেয়ে কমবয়সি বলে সাধারণ্যে প্রতিভাত হন। ন্যাড়ামাথা এবং গোঁফ-দাড়ি কামানো ‘লুক’ তাঁদের বয়স অন্তত দশ বছর কমিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, এক বার ন্যাড়া হতে শুরু করলে টাক পড়ছে, টাক পড়ছে ভয়টা চলে যায়। স্নান করার সময়ে সময় কম লাগে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য যে অঢেল সময় ব্যয় করতে হয়, সেটাও লাগে না। তেল বা শ্যাম্পুরও বালাই নেই। কত সাশ্রয়!

মশকরা থাক। আপাতত গভীর চিন্তায় আছি।

বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে প্রতিদিন এ ভাবেই ন্যাড়া হয়ে ঝুপঝুপ গঙ্গায় ডুব দেন বহু মানুষ। ছবি: শাটারস্টক।

দেশ ও জাতির স্বার্থে কোনও কোনও রাজনীতিক মাথা মুড়িয়ে থাকেন। যতদূর মনে পড়ে, সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে কর্নাটকের বল্লারি লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়তে নেমে বিজেপির সুষমা স্বরাজ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সনিয়াকে হারাতে না পারলে মস্তক মুণ্ডন করাবেন। সুষমা হারেন। কিন্তু ন্যাড়া হননি। পরে শোনা গেল, তিনি নাকি বলেছিলেন, ইতালীয় বংশোদ্ভূত সনিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে সুষমা মাথা মোড়াবেন। সনিয়া প্রধানমন্ত্রী হননি। বরং ‘অন্তরাত্মার ডাক’ শুনে মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসান। সুষমাকে আর ন্যাড়া হতে হয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি অধুনাপ্রয়াত সুষমার কাজ এবং তাঁর মাতৃসুলভ ব্যক্তিত্বের ভক্ত ছিলাম। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ— দিল্লিতে কয়েক বছর কাজ করার সময় (বিজেপি তখন বিরোধী দল) সুষমার সঙ্গে একটা কাজ-চালানো গোছের আলাপ ছিল। তাঁকে মুণ্ডিতমস্তক কল্পনা করে মোটে ভাল লাগেনি।

বাংলার রাজনীতিতে মস্তকমুণ্ডনের ঘটনা চালু না-হলেও একেবারে বিরল নয়। তবে সে সবই হালফিলের।

আনন্দবাজার অনলাইনের খবর বলছে, ২০২০ সালে শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার মাথা মুড়িয়ে বিষ্ণুপুরে ষাঁড়েশ্বর মহাদেবের পুজো এবং যজ্ঞ করেছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। শপথ নিয়েছিলেন, সরকার থেকে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করবেন। সেই সময়ে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র দলীয় কর্মীদের হাতে হাতে ত্রিশূল তুলে দেওয়াও শুরু করেন। বিষ্ণুপুরের সাংসদ জানিয়েছিলেন, ৯০ হাজার ত্রিশূল বিলি করবেন। তবে দলের সমর্থন পাননি। সেই কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়। সৌমিত্রেরও চুল গজায়।

২০২১ সালে আবার ন্যাড়া হতে গিয়েছিলেন সৌমিত্র। শেষে দলীয় নেতৃত্বের ধমকে মাথা কামাতে যাননি তিনি। যুক্তি ছিল অবশ্য। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে গিয়েছিলেন। তার পরেই সৌমিত্র বলেন, ‘‘মোদীজিকে সঙ্গে নিয়ে সোনার বাংলা তৈরির অঙ্গীকার নিচ্ছি। বাংলার রাজনীতিতে তিনি (মুকুল) মিরজ়াফর। আমি মনে করি উনি মৃত। আমি মস্তক মুণ্ডন করব।’’ তবে দল তাঁকে নিরস্ত করে। সৌমিত্রের মাথার চুলের মতোই অতীতের অস্বস্তি যাতে ফিরে না আসে, সেই কারণেই বারণ। তবে সৌমিত্র তা বলেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দলের নির্দেশ নয়, আমার বাবা-মা এখনও জীবিত। সেই অবস্থায় ন্যাড়া হওয়া ঠিক নয় বলে বাবা আপত্তি করেন। তাই ঘোষণা করলেও আমি ন্যাড়া হইনি।’’

মাথা মুড়িয়েছিলেন ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস। তৃণমূল বাংলায় টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর আশিস প্রথমে ঘোষণা করেন, মা কালীর মন্দিরে পুজো দিয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবনের ‘বড় সিদ্ধান্ত’ নেবেন। তার পরেই তাঁর তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর কলকাতায় এসে কালীঘাটের মন্দিরে পুজোপাঠ করে আদিগঙ্গার পাশে বসে নিজের মাথা মুড়িয়ে ফেলেন আশিস। বিজেপিতে থাকার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করার পর যোগ দেন তৃণমূলে। তবে ছ’মাসেই ‘মোহভঙ্গ’ হয় আশিসের। ২০২২ সালের ২৭ মে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল ছাড়েন আশিস। তখন তাঁর মাথায় প্রায় আলুলায়িত কেশরাশি। যতদূর জানি, আশিস আর ন্যাড়া হননি।

তাই রাজনীতিক কৌস্তুভকে নিয়েও আপাতত চিন্তায় আছি।

কৌস্তুভ পেশায় আইনজীবী। এ দিক-ও দিক যা কানে এসেছে, কথা বলেন ভাল। সেই কারণেই সম্ভবত তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র। প্রদেশ কংগ্রেসে তাঁর সমসাময়িক বা তাঁর চেয়ে ঈষৎ সিনিয়রদের চেয়ে খানিক এগিয়েই আছেন বোধ করি (যদিও তৎসত্ত্বেও যে কেন তাঁকে সদ্যসমাপ্ত এআইসিসি-র রায়পুর প্লেনারিতে প্রতিনিধি তালিকায় রাখা হয়নি, কে জানে!)। মুন্নাভাইয়ের ভাষায়, যথেষ্ট ‘ডেয়ারিং’-ও। নইলে কি কলকাতা হাইকোর্টের চত্বরে চিদম্বরমের মতো ওজনদার দলীয় নেতা তথা আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কোট ধরে টান মারতে যান বা তাঁর চকচকে এবং সমীহ উদ্রেককারী গাড়ির বনেটের সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে হুঁশিয়ারি দেন! মোদ্দা কথায়, কৌস্তুভ অবামপন্থী রাজনীতির সারসত্যটি জানেন— খবরে থাকতে হবে।

সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর সেই বহুচর্চিত সাংবাদিক বৈঠকটিও ডাকা। সেখানে রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাষা এবং ভঙ্গিতে কৌস্তুভ আক্রমণ করেছেন, তা কোনও সুস্থমস্তিষ্কের মানুষ সমর্থন করতে পারবেন না। কিন্তু যে ভাবে পুলিশ গভীর রাতে কৌস্তুভের বাড়িতে গিয়ে জেরা করে পরদিন সকালে তাঁকে গ্রেফতার করল (বিবিধ পদ্ধতিগত ত্রুটিসমেত), তাকে অবিমৃশ্যকারিতা এবং সাম্প্রতিক কালে নজিরবিহীন প্রশাসনিক অপরিণামদর্শিতা বললে খুব ভুল হবে না।

প্রত্যেকেরই জীবনে একটা ‘ইট মোমেন্ট’ থাকে। সে তিনি রাজনীতিক হন বা সাধারণ মানুষ। আমির হন বা ফুটপাথবাসী। কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতারি সম্ভবত কৌস্তুভের এ যাবতের রাজনৈতিক জীবনের ‘ইট মোমেন্ট’ হয়ে রইল। যে মমতাকে তিনি কুৎসিত ব্যক্তিগত আক্রমণের রাস্তায় গিয়েছিলেন, সেই মমতার পুলিশই তাঁকে পাকেচক্রে নেতা বানাল, বীরের মতো যখন তিনি জামিন পেয়ে বেরোচ্ছেন, তখন তাঁর গলায় পরোক্ষে রজনীগন্ধার মালার ব্যবস্থা করে দিল এবং তাঁর নামে আর তাঁরই কারণে আদালতে কংগ্রেস-সিপিএমকে একজোট করাল!

বয়সে নবীন কৌস্তুভের কি এ সবেই মাথাটা ঘুরে গেল? এতটাই যে, আদালত চত্বরেই নাপিত ডাকিয়ে বসলেন! সেটা তা-ও ঠিক ছিল। সঙ্গে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা করে ফেললেন, মমতাকে বাংলা থেকে উৎখাত না-করা পর্যন্ত মাথায় চুল রাখবেন না!

হিসেব কষে দেখলাম, এটা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি। পরের বিধানসভা ভোট হতে হতে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি। তত দিন নাগাড়ে ন্যাড়া থাকবেন কৌস্তুভ? রোজ সকালে বাড়িতে নাপিত আসবে? মাসে ৩,০০০ টাকা। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অঙ্কের হিসেবে ২৭ মাসের খরচ ৮১,০০০ টাকা! কেলেঙ্কারি তো! প্রদেশ কংগ্রেস খরচ দেবে? অথবা এআইসিসি? যে গাজন গেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তাতে তো মাথায় দুব্বোঘাস গজালেও তৃণমূল রে-রে করে তেড়ে আসবে! সেদিকেও বিপদ। তবে কৌস্তুভ বুদ্ধিমান। দ্বিতীয় দিন থেকেই মাথায় তেরঙা পাড়ওয়ালা উত্তরীয় পাগড়ির মতো করে বাঁধতে শুরু করেছেন। অন্তত কয়েক দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি চুল ঢাকা দেওয়া যাবে।

কিন্তু শেষরক্ষা হবে কী করে! তা হলে কি কৌস্তুভকে সেই অধীর চৌধুরীই উদ্ধার করবেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে— এই পণ নিয়ে বসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের তরুণ এবং চটপটে সুযোগসন্ধানী মুখপাত্র। অধীর তাঁকে সেই প্রতিজ্ঞা থেকে মুক্তি দিয়েছেন (ভাগ্যিস দিয়েছেন)। বলেছেন, ব্যক্তি আক্রমণ করা চলবে না। দিদির সঙ্গে তাঁর লড়াই রাজনৈতিক। সেটা রাজনীতির ময়দানে হবে। আর কৌস্তুভও যেন ক্ষমা-টমা চাওয়ার দাবি আর না-তোলেন।

অতঃপর কি মমতাকে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে উৎখাত না-করা পর্যন্ত মাথায় চুল গজাতে না-দেওয়ার প্রতিজ্ঞা থেকেও কৌস্তুভকে মুক্ত করবেন অধীর? তা ছাড়া তো খুব একটা উপায় দেখছি না। কৌস্তুভও নিশ্চয়ই তত দিনে বুঝে যাবেন, ফট করে ন্যাড়া হওয়া খুব সহজ। কিন্তু একাদিক্রমে ন্যাড়া থাকা বেজায় কঠিন। যেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া খুব সহজ। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ততটাই কঠিন।

চিন্তায় আছি। গভীর চিন্তায় আছি।

(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement