কুলভূষণ যাদব। ছবি: সংগৃহীত।
অত্যন্ত সঙ্কটের কাল। সঙ্কট বহুমুখী। এক ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তানে আজ প্রাণের সঙ্কটে। উপমহাদেশে শান্তি বহাল রাখার প্রক্রিয়া সঙ্কটে। ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও মহা-সঙ্কটে। তবে আশার আলো জ্বালিয়ে সঙ্কটকালে সমগ্র জাতি আবার ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়সঙ্কল্প।
ফিরে যেতে হচ্ছে ২০১৪ সালের ২৬ মে তারিখে। নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সাদরে ডেকে এনেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে নওয়াজ সে হাত ধরেওছিলেন। কিন্তু করমর্দনেই সম্ভবত সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে বন্ধুত্ব। তা না হলে ‘উপহার’ হিসেবে পঠানকোট, উরি, কাশ্মীরে নিরন্তর প্ররোচনা, মাসুদ আজহারকে প্রাণপণে আগলে রাখার চেষ্টা আর সব শেষে কুলভূষণ যাদবকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ আসতে পারে না।
কুলভূষণ গুপ্তচর, তিনি বালুচিস্তানে অশান্তি ছড়াচ্ছিলেন, তিনি নাশকতাকারী— ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান। শুধু অভিযোগেই থেমে থাকেনি, ভারতীয় নাগরিক তথা ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মীকে পাকিস্তান তাদের সেনা আদালতে অত্যন্ত দ্রুততা এবং তৎপরতার সঙ্গে দোষী সাব্যস্তও করেছে। তার পর প্রাণদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। কীসের ভিত্তিতে কুলভূষণ যাদবকে দোষী সাব্যস্ত করা হল? তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতা এবং গুপ্তচরবৃত্তির কী প্রমাণ মিলেছে? বিচার চলাকালীন ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে কেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি? গুচ্ছ প্রশ্ন রয়েছে। কোনও সদুত্তর নেই। সদুত্তর দেওয়ার সদিচ্ছাও নেই সম্ভবত।
বিচার প্রক্রিয়ায় যে ন্যূনতম স্বচ্ছতার প্রয়োজন হয়, তা মানা হয়নি কুলভূষণের ক্ষেত্রে। কারও বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চালানোর যে বুনিয়াদি রীতিনীতি রয়েছে, সে সবও লঙ্ঘিত হয়েছে। ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মীকে প্রাণদণ্ডের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আইন ও বিচার সংক্রান্ত যাবতীয় মূল্যবোধকে ধুলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ উঠছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ শুধু ভারত তুলেছে, এমন নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও সরব হয়েছে। পাকিস্তানের অন্দরেও সংশয়ের বাতাবরণ চাপা থাকছে না সম্ভবত। চোখ-কান খোলা রয়েছে যে পাক নাগরিকদের, নিজেদের সরকারের কাছে তাঁদের আর্জি, কুলভূষণ যাদবের বিরুদ্ধে যে সব প্রমাণ মিলেছে, সে সব প্রকাশ্যে আনা হোক। পাকিস্তান সে সাহসও দেখাতে পারেনি। শুধু সাহস করে কুলভূষণের প্রাণদণ্ডটা ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের কারাগারে বসে কুলভূষণ যাদব মৃত্যুর প্রহর গুণতে শুরু করেছেন কি না জানা নেই। কিন্তু ভারত তাঁর মৃত্যুর প্রহর গুণছে না। কুলভূষণের সঙ্কট আজ সমগ্র ভারতের সঙ্কট। তাঁর প্রাণদণ্ড রদ করানো আজ সমগ্র ভারতের সঙ্কল্প। সঙ্কটকালে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়, দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে হয়। ভারত সেই পথেই। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান যে সংসদ, সেই সংসদে দাঁড়িয়ে সম্মিলিত অঙ্গীকার সমগ্র জাতির— কুলভূষণকে রক্ষা করতেই হবে।
অক্ষয় হোক এই দাঢ্য। আঘাতের সামনে আত্মসমর্পণ করে না ভারত, হিমালয়ের মতো দুর্ভেদ্য এবং কঠিন হয়ে ওঠে বরং— বুঝিয়ে দেওয়া হোক প্রত্যেক অপশক্তিকে।