—ফাইল চিত্র।
শহরাঞ্চলেও রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প শুরু করিবার প্রস্তাব বিবেচনা করিতেছে কেন্দ্র। এই প্রকল্প স্বাগত। অতিমারি-জনিত লকডাউনের ফলে কর্মহীনতা শহরের দারিদ্র কত তীব্র করিয়াছে, তাহার প্রমাণ অঢেল। যে সকল পরিযায়ী শ্রমিক দীর্ঘ পথ হাঁটিয়া ঘরে ফিরিলেন, তাঁহারা প্রতি পদক্ষেপে সাক্ষ্য দিয়াছেন, দৈনন্দিন রোজগার-নির্ভর মানুষ কাজ হারাইলে কত অসহায় হইয়া পড়েন। গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান প্রকল্প চালু হইয়াছে দীর্ঘ দিন। রূপায়ণে নানা ত্রুটি সত্ত্বেও এই প্রকল্পটি গ্রামীণ আয় বাড়াইতে, দরিদ্রের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করিতে সাহায্য করিয়াছে। কিন্তু শহরগুলির জন্য এমন কোনও প্রকল্প এত দিন ছিল না। সরকার ধরিয়া লইয়াছে যে, শহরে কাজের অভাব নাই, কিছু না কিছু জুটিয়া যাইবে। এই ধারণার বিপরীতে সাক্ষ্য দিতেছে বস্তিবাসী, ফুটপাতবাসীর কয়েক প্রজন্মের জীবনযাপনের মন্দ মান। অল্প ও অনিয়মিত রোজগার তাঁহাদের দারিদ্রকে দীর্ঘায়িত করিয়াছে। কৃষিকাজ ও জমিতে উৎপন্ন ফসলের কল্যাণে গ্রামে দরিদ্রের খাদ্য নিরাপত্তা অধিক, অধিকাংশ গ্রামবাসীর বাসস্থানও তাহাদের নিজস্ব। কিন্তু শহরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দরিদ্রের ঘরভাড়ার বৈধতা নাই, সহজেই উৎখাত সম্ভব। তদুপরি রোজগার না হইলে অন্নও জুটিবে না। দীর্ঘ লকডাউনে কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারা বিতরিত অন্নের জন্য কলিকাতার বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষদের ভিড়ে স্পষ্ট, খাদ্যাভাব তাঁহাদের কত দূর বিপন্ন করিয়াছিল।
এই প্রয়োজন বুঝিয়া কিছু রাজ্য লকডাউন শুরু হইবার পর শহরাঞ্চলে রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প চালু করিয়াছে। হিমাচল প্রদেশ ১২০ দিন কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়া মে মাস হইতে কাজ শুরু করিয়াছে। নাম নথিভুক্ত করিয়া কাজ না পাইলে দৈনিক ৭৫ টাকা ভাতা দিবার অঙ্গীকারও করিয়াছে। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশাও প্রত্যাগত শ্রমিকদের কথা চিন্তা করিয়া ১১৪টি পুরসভায় অন্তত সাড়ে চার লক্ষ পরিবারকে কাজ দিবার লক্ষ্যে প্রকল্প শুরু করিয়াছে এপ্রিল মাসে। এই দুইটি রাজ্যই জল নিকাশি ব্যবস্থা, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রভৃতি ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পের অধীনে নানা কাজে কর্মপ্রার্থীদের যুক্ত করিয়াছে। এ বিষয়ে আরও দীর্ঘ ও সুবিন্যস্ত অভিজ্ঞতা রহিয়াছে যে রাজ্যের, তাহা কেরল। এক দশকেরও অধিক সময় ধরিয়া কেরল শহরাঞ্চলে রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প চালাইতেছে। তাঁহাদের অধীনস্থ কাজের মধ্যে রহিয়াছে বড় জলাশয়গুলি হইতে পলি নিষ্কাশন, সহজে জলমগ্ন হইবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিকাশি, শহরাঞ্চলে পতিত জমির মানোন্নয়ন, অনুন্নত ‘কলোনি’ এলাকাগুলির সংস্কার, জঞ্জাল অপসারণ, প্রভৃতি।
এই কাজগুলির প্রয়োজন কম নহে। পুরসভাগুলির কাজের ক্ষমতা সীমিত, তাহাদের দায়িত্বও বাঁধা। কিন্তু শহরাঞ্চলে জনস্বাস্থ্য ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের ন্যূনতম প্রয়োজন মিটাইতে বহুবিধ কাজ করিবার প্রয়োজন। ওয়ার্ড অফিসগুলি কর্মী নিয়োগ করিয়া যদি স্থানীয় প্রয়োজন মিটাইতে পারে, বহু সমস্যার দ্রুত সমাধান হইবে। অপর পক্ষে, শহরের দরিদ্রও প্রয়োজন অনুসারে কাজ এবং ন্যূনতম পারিশ্রমিকের আশ্বাস পাইলে শঙ্কাহীন, সুস্থ জীবন যাপন করিতে পারে। এককালীন ভাতা দিবার পরিবর্তে রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পে বরাদ্দ অধিক কার্যকর হইবার সম্ভাবনাই অধিক।