সম্পাদকীয় ২

অবাধ দূষণের পক্ষে

উন্নত দেশগুলি এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিবে, পূর্বে এমনই স্থির হইয়াছিল। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাস্তবিকই দূষণ প্রতিরোধের কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রণীর স্থান দিয়াছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share:

দূষণরহিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা বারাক ওবামা সরকার গ্রহণ করিয়াছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার তাহা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করিল। কেহ বিস্মিত হয় নাই। উষ্ণায়ন লইয়া চিন্তিত নহেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কয়লা বা তেল হইতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাইয়া সূর্যালোক, বায়ু বা জল ব্যবহার বাড়াইবার আগ্রহ তাঁহার নাই। কিন্তু তাই বলিয়া ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’ বাতিল? দূষণজনিত উষ্ণায়ন, এবং তজ্জনিত আবহাওয়ার পরিবর্তন যে ভয়ানক পরিণাম আনিতে পারে, তাহা একটি সম্ভাবনা হিসাবে তো অন্তত গ্রাহ্য হওয়া উচিত। বিভিন্ন মরশুমের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি, প্রবল ঝড়ের আধিক্য, এ সবই অশনিসংকেত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এ বার পরপর দুটি মারাত্মক ঝ়ঞ্ঝার মুখে প়ড়িয়াছে, হার্ভে এবং ইরমা। তাহার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলিতে চলিতেই নর্থ ক্যারোলাইনায় বিধ্বংসী দাবানল। দাবানল প্রকৃতির নিয়মেই ঘটিয়া থাকে, কিন্তু দীর্ঘ অনাবৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রার জন্য তাহা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করিতেছে, মনে করিতেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কথা ট্রাম্প সরকারের নিকট গ্রহণযোগ্য নহে। বরং পরিবেশ সুরক্ষার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সদর্পে ঘোষণা করিয়াছেন, কয়লার সহিত যুদ্ধের অবসান হইয়াছে। অর্থাৎ অবাধে কয়লা ও তেল ব্যবহার করিবার পক্ষপাতী মার্কিন নীতি।

Advertisement

ইহা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট নহে। উষ্ণায়ন ও তজ্জনিত আবহাওয়া পরিবর্তন রুখিতে চাহিলে সকল দেশকে সহমতের ভিত্তিতে একই পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হইবে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করিতে হইবে, দূষণকারী শিল্পের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করিতে হইবে। উন্নত দেশগুলি এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিবে, পূর্বে এমনই স্থির হইয়াছিল। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাস্তবিকই দূষণ প্রতিরোধের কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রণীর স্থান দিয়াছিলেন। তাঁহারই আগ্রহে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে সংস্কার আনিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে দূষণকারী গ্যাস বত্রিশ শতাংশ কমাইবার লক্ষ্য ধার্য হইয়াছিল। ট্রাম্প হাঁটিতেছেন বিপরীতে। প্যারিস চুক্তির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানই তাহা স্পষ্ট করিয়াছিল। পরিবেশ সুরক্ষায় অতি-সক্রিয়তা শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হইবে, ইহাই তাঁহার প্রধান যুক্তি। যদিও মার্কিন শিল্পমহল সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ প্রভৃতির উৎপাদনে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বিনিয়োগ করিয়াছে, এবং জ্বালানি সাশ্রয়কারী, দূষণরহিত যানবাহন, আবাস, শিল্প প্রভৃতি নির্মাণের প্রযুক্তিও গ্রহণ করিয়াছে। এই উদ্যোগ কেবল পরিবেশের স্বার্থে নহে, ব্যবসায়িক স্বার্থে। সাশ্রয়কারী, সুরক্ষিত প্রযুক্তি ব্যবহার না করিলে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা লাভজনক হইবে না।

আশার কথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পঞ্চাশটি রাজ্যের চৌদ্দটি ইতিমধ্যেই বলিয়াছে, ট্রাম্প সরকার না মানিলেও প্যারিস চুক্তির শর্তগুলি তাহারা মানিবে। অপরাপর উন্নত দেশগুলিও দূষণ প্রতিরোধের লক্ষ্য হইতে পিছাইয়া আসিতে রাজি নহে। যাহার অর্থ, দেশের মানুষকে অধিক কাজ দিবার আশ্বাস দিয়া সস্তায় বাজিমাত করিবার প্রতিযোগিতায় নামিতে তাহারা আগ্রহী নহে। পরিবেশ নীতির এই যুদ্ধ কি তবে গ্লোবাল দুনিয়ার নূতন যুদ্ধ হইতে চলিয়াছে? উষ্ণতার নামে যুদ্ধ?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement