delhi

দিল্লি ডায়েরি

সামাজিক দূরত্ব বড় বালাই! তার উপর লকডাউন। কী করেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু? ফোনে শতাধিক সাংসদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে একাধিক বার কুশল সংবাদ নেওয়াও হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী, অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০০:০৫
Share:

বটতলায় বেঙ্কাইয়া, দূরত্ব রেখে বৈঠক

Advertisement

কখনওই তাঁর মন ঘরে টেঁকে না। ভালবাসেন ভ্রমণ, দিলদরিয়া আড্ডা, মানুষের সঙ্গে আগল খুলে মিশতে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বড় বালাই! তার উপর লকডাউন। কী করেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু? ফোনে শতাধিক সাংসদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে একাধিক বার কুশল সংবাদ নেওয়াও হয়ে গিয়েছে। মৌলানা আজাদ রোডে তাঁর বাংলোয় রয়েছে সুবিশাল বাগান, জমি এবং একটি পেল্লায় বটগাছ। এ বার সেখানেই কর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করছেন তিনি, তবে একদম ঠিকঠাক দূরত্ব বজায় রেখে। সাধারণ অবস্থায় উপরাষ্ট্রপতির প্রোটোকল অনুযায়ী বাড়ির চেম্বারে বৈঠক হওয়ার কথা। এখন সেটাই সরে এসেছে একেবারে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে। সম্প্রতি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গেও বৈঠক করলেন বেঙ্কাইয়া, ওই বটতলায় বসেই। হইহই করে ভ্রমণ করা না হয় হল না, কিন্তু খোলা আকাশের নীচে, সারা ক্ষণের বদ্ধ ভাবটা তো কাটবে!


Advertisement

প্রাকৃতিক: বদ্ধ ঘরে নয়, খোলা বাগানে বৈঠকে ব্যস্ত উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু

ক্যাপ্টেনের যুক্তি

মদের দোকান খুললে করোনাভাইরাস ছড়াবে না— এ তত্ত্বের পক্ষে সবচেয়ে অভিনব যুক্তি কে দিয়েছেন? পুরস্কার অবশ্যই প্রাপ্য পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহের। তাঁর যুক্তি ছিল, মশাই, আনাজপাতি, ফলমূলের দোকান খোলা রয়েছে। ফলওয়ালা হাতে করে আপেল দিচ্ছেন, লোকে তা বাড়িতে এনে হাতে করে খাচ্ছেন। এ দিকে বিয়ার তো বোতলে বন্দি।

দোকান থেকে কিনে শুধু গলায় ঢালা। হাতের কোনও ছোঁয়াই নেই। কী করে ভাইরাস ছড়াবে শুনি? এই কথা মানলে অবশ্যই বলতে হয়, ফলের চেয়ে মদ খাওয়া এই করোনা-পরিস্থিতিতে অনেক নিরাপদ। হয়তো এ দেশের বহু নাগরিক এই যুক্তিতে খুব খানিক অনুপ্রাণিতও হবেন! তবে মনে রাখতে হবে, ‘মদের দোকান খুলে দিন’ বলে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই এক সুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে দাবি তুলেছিলেন। প্রকাশ্যে অবশ্য কয়েক জন ছাড়া বেশি কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। যদিও মদের দোকান খুললে রাজ্যের যে রাজস্ব বাড়বে তা সকলেরই জানা ছিল। ক্যাপ্টেন সেখানেও অকুতোভয় ছিলেন।


জিমখানা বনাম

মোদী সরকারের সঙ্গে দিল্লির তথাকথিত ‘খান মার্কেট গ্যাং’ বা শিক্ষিত, উদারবাদী, বামমনস্ক, বুদ্ধিজীবীদের বনিবনা নেই বললেই চলে। এ বার দিল্লির ‘এলিট’ শ্রেণির লোকেদের জিমখানা ক্লাবের সঙ্গেও মোদী সরকারের কলহ বেধেছে। জিমখানা ক্লাবে বেনিয়ম, টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে। ক্লাবের সদস্য হতে এক লক্ষ টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু বিশ-তিরিশ বছর কেটে গেলেও সদস্যপদ মেলে না। জমা টাকায় সুদও মেলে না। তাই কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক কোম্পানি আইন ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছে। নির্মলা সীতারামনের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক ক্লাবের কর্তৃত্ব হাতে নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জিমখানা ক্লাব। সদস্যদের ভাবটা হল, ‘সরকার শুধু লকডাউন ওঠার সময়টা দিক। তার পরে আমরাও কম যাইনে।’

চাকা: জিতিন প্রসাদ ও তাঁর ট্র্যাক্টর

জিতিনের চাকা

২০০৮ এর ২ নভেম্বর। শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কনভয় যখন ফেরার পথ ধরেছে, তখন সেই কনভয়ে মাওবাদীরা হামলা চালায়। কনভয়ে ছিলেন মনমোহন সরকারের ইস্পাত মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ। অক্ষত অবস্থায় ফিরলেও, সে দিনের গল্প এখনও প্রায়ই শোনা যায় জিতিনের মুখে। রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জিতিন, লকডাউনের বাজারে কী আর করেন, চাষ-আবাদে খুব মন দিয়েছেন। বাড়ির খামারের ট্র্যাক্টরের চাকা নিজেই বদলাচ্ছেন। জিতিনের মতে, গাড়ির চাকা বদলানো সকলের শেখা উচিত। জীবনে যে কোনও সময় কাজে লাগে। কিন্তু তাঁর সাত বছরের সন্তান এত বড় গাড়ির চাকা দেখে হতবাক।


ফ্রয়েডীয় চ্যুতি

প্রধানমন্ত্রী আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার পর থেকেই নিন্দুকেরা হিসেব কষছেন, সত্যিই কি ২০ লক্ষ কোটি টাকা মিলছে? না কি জল মেশানো রয়েছে? সরকার নিজে কত টাকা খরচ করছে? প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তা নিয়ে টুইট করেন। কিন্তু তাতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার বদলে ২০ লক্ষ টাকা লিখে ফেলেছিলেন। নির্মলা পরে ভুল শুধরেছেন বটে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এ হল ‘ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ’। সরকার যে বেশি খরচ করছে না, নির্মলা আসলে সেটাই বলে ফেলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement