প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্দেশ দিয়েছেন, রবিবার রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য বাড়ির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে বারান্দায় বা দরজায় দাঁড়িয়ে প্রদীপ, মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে হবে। কিন্তু, আগামিকাল শুধু ৯ মিনিটের জন্যই নয়, বরং রাত ৯টার আগে বা ৯টা বেজে ৯ মিনিটের পরেও বেশ খানিক ক্ষণ অন্ধকারে কাটাতে হতে পারে আমাদের।
দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউনের জেরে এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা একধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছে। তার উপর রবিবার দেশের সর্বত্র বসত বাড়ির আলো নেভানো হলে, গার্হস্থ্য বিদ্যুতের (domestic) চাহিদাও আচমকা অনেকটাই কমে যাবে।
এ ভাবে আচমকা চাহিদা বাড়লে বা কমলে বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সিও কমবে এবং বাড়বে। আমেরিকা এবং হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি স্থির রয়েছে। যেটা ৫০ হার্ৎজ। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং সমস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামই এই ফ্রিকোয়েন্সিতে চলে।
ভারতে যে পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়, তার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ‘দ্য পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশন লিমিটেড (পসোকো)’, যা কিনা ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের মাধ্যমে গোটা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। বিদ্যুতের ফ্রিকোয়েন্সি কতটা বাড়তে বা কমতে পারে তা এই সংস্থাই ঠিক করে দেয়।
আরও পড়ুন: ‘বেঁচে উঠবে ভাই’, দেহ আগলে দিদি, রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া ভবানীপুরে
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং সাবস্টেশনগুলিতে ওই সংস্থা নির্ধারিত ফ্রিকোয়েন্সি মেনেই সমস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরিচালিত হয়। ফ্রিকোয়েন্সি আচমকা ওঠানামা করলে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের ইউনিটগুলি হঠাৎ বসে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে তার সঙ্গে সংযুক্ত ট্রান্সমিশন প্রযুক্তিতেও। এর ফলে আচমকা ‘ব্ল্যাকআউট’ হতে পারে। বসে যেতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রিডও।
উৎপাদনকেন্দ্র থেকে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার যে পারস্পরিক সংযুক্ত প্রযুক্তি, তাকেই গ্রিড বলা হয়। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়াতে ভারতের প্রতিটি রাজ্যের গ্রিডই প্রতিবেশী রাজ্যের গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত। আবার একই অঞ্চলের কিছু রাজ্য মিলে আঞ্চলিক গ্রিড তৈরি হয়েছে, যেমন নর্দার্ন, ইস্টার্ন, ওয়েস্টার্ন, নর্থ-ইস্টার্ন এবং সাদার্ন গ্রিড তৈরি হয়েছে, যেগুলি মিলে তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল ইলেকট্রিসিটি গ্রিড। এর মধ্যে কোনও একটি বসে গেলে, তার সঙ্গে সংযুক্ত বাকি গ্রিডগুলিও একের পর এক বসে যেতে পারে, যাকে ‘ক্যাসকেড ট্রিপিং’ বলে।
২০১২-র জুলাই মাসে এমনই ‘ক্যাসকেড ট্রিপিং’য়ের সাক্ষী হয়েছিল ভারত, যার ফলে দেশ জুড়ে ব্ল্যাকআউট ঘটেছিল। সেইসময় নর্দার্ন গ্রিডে বিদ্যুতের চাহিদা আচমকা বেড়ে যাওয়ায় বাকি গ্রিডগুলির উপর চাপ বেড়ে গিয়েছিল। তাদের প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্রপাতি (আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলে)-গুলি হয়ে গিয়েছিল বিকল। তাতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আগামিকাল রাত ৯টায় যখন আমরা আলো নেভাব, আচমকা বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই কমে যাবে। তাতে ফ্রিকোয়েন্সি একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে। এর ফলে পাওয়ার গ্রিডের উপর যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, তার জন্য ৯টা বাজার কিছু ক্ষণ আগে থেকেই ধাপে ধাপে লোডশেডিং করতে হতে পারে। সেই সঙ্গে জেনারেটরের উৎপাদন শক্তিকে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলে এবং ডিএফ/ডিটি রিলেগুলিও যাতে সচল থাকে।
আরও পড়ুন: ইএমআই স্থগিত করলে সুদ গুণতে হবে, ব্যাঙ্কগুলির নির্দেশিকায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা
৯টা বেজে ৯মিনিটেই বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করা না-ও যেতে পারে। বরং সময় লাগতে পারে একটু। কারণ আচমকা বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়ে গেলে সাময়িক ভাবে ভোল্টেজও বেড়ে যাবে, তাতে ফ্রিকোয়েন্সি কমে যাবে। গ্রিডের স্থিতিশীলতাও নষ্ট হতে পারে। তাই বিদ্যুৎ আস্তে আস্তে ফেরত আনতে হবে। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা এবং ফের চালু করার প্রক্রিয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। একটু এদিক ওদিক হলেই গোটা দেশ ব্ল্যাকআউট হয়ে যেতে পারে। তাই গ্রিডের স্থিতিশীলতা নষ্ট না করে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ পুনরায় ফিরিয়ে আনার কাজটা করতে হবে স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারগুলিকে।
লেখক ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড পাওয়ার কনসালট্যান্ট।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)