Editorial News

এই নেতৃত্বহীনতা শোভা পায় না

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৯
Share:

রাহুল গাঁধী। ছবি এএফপি।

এই অচলাবস্থা এ বার কাটা দরকার। দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল তথা বৃহত্তম বিরোধী দল এই ভাবে দিনের পর দিন নেতৃত্বহীন হয়ে থাকতে পারে না। ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষে এটা শুভ নয়।

Advertisement

সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই টানাপড়েনটা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের শীর্ষস্তরে। রাহুল গাঁধী কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দলের সর্বভারতীয় স্তরের অন্যান্য নেতানেত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল স্তরের কর্মী পর্যন্ত প্রায় কেউই রাহুল গাঁধীর এই প্রস্থান মানতে নারাজ। কংগ্রেসের সভাপতিত্বে তাঁরা রাহুলকেই চান। রাহুল যদি কিছুতেই রাজি না হন, তা হলে সনিয়া গাঁধী বা প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে চান। রাহুল নিজে সভাপতিত্বে ফিরতে অনড় তো বটেই। তাঁর পরিবারের কারও হাতেই কংগ্রেসের সভাপতিত্ব এ বারও থেকে যাক, এমনটাও রাহুল চান না। কিন্তু ভারতের গ্যান্ড ওল্ড পার্টির প্রবীণ থেকে নবীন সকলেই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রশ্নে ওই পরিবারের প্রতিই অনুগত থাকতে চান এখনও। টানাপড়েন তাই মিটছে না কিছুতেই।

পর পর দুটো লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বড়সড় বিপর্যয়ের মুখ দেখল, এ কথা ঠিক। দেশের রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি আগের বারের চেয়ে বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে নিজেদের ব্যবধান তারা আরও বাড়িয়ে নিয়েছে— এ কথা ঠিক। কিন্তু শুধু সংখ্যায় চোখ রেখে বসে থাকলে সবটা বোধ হয় বোঝা যায় না ভারতের রাজনীতিতে। প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর এক কথন মনে পড়ছে বরং— এ দেশের যে কোনও প্রত্যন্ত প্রান্তে চলে যান, সর্বত্রই অন্তত একটা পরিবার পাওয়া যাবে যেটা কংগ্রেসের পতাকা ধরার জন্য রয়েছে। এ দেশের রাজনীতিতে কংগ্রেসের শিকড় কতটা গভীরে এবং কংগ্রেসের গুরুত্ব কতখানি, প্রিয়রঞ্জনের ওই একটা কথাতেই তা সুন্দর ভাবে ধরা রয়েছে। এহেন কংগ্রেসের শীর্ষপদ দিনের পর দিন শূন্য অবস্থায় পড়ে থাকলে দৃষ্টিকটূ লাগে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের রাশ যাচ্ছে গাঁধী পরিবারের বাইরে, রাহুলের উত্তরসূরির দৌড়ে শিন্ডে-খড়্গে

কংগ্রেস নেতৃত্বের মনে রাখা উচিত যে, এ দেশের পাঁচটা রাজ্যে এখনও কংগ্রেসের সরকার চলছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের মনে রাখা উচিত যে, সংসদের দুই কক্ষেই কংগ্রেসই এখনও সর্ববৃহৎ বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতারা নিশ্চয় এটাও জানেন যে, শাসক দল যত বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে, গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা ততটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংসদের ভিতরে হোক বা বাইরে শাসক বিজেপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেওয়ার সক্ষমতা কিন্তু এখনও কংগ্রেসেরই রয়েছে। সেই সক্ষমতা কিন্তু কংগ্রেসকে এ দেশের জনগণই দিয়েছেন। সেই জনাদেশকে সম্মান জানিয়ে গণতান্ত্রিক কর্তব্যটা উপযুক্ত ভঙ্গিতে পালন করার দায়ও অতএব কংগ্রেসের রয়েছে। শীর্ষ স্তরে দিনের পর দিন অচলাবস্থা বহাল রেখে অন্তর্মুখী হয়ে থাকলে জনতার দেওয়া দায়িত্বের প্রতি কিন্তু সুবিচার হবে না। অতএব অবিলম্বে সভাপতিত্ব সংক্রান্ত সঙ্কটের অবসান ঘটানো জরুরি।

আবার বলছি, দেশের আইনসভায় যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন শাসকের দিকে রয়েছে, তাতে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করাটা আগের চেয়েও দুরূহ হয়ে উঠেছে। এই দুরূহ কাজ সুসম্পন্ন করে দেশের গণতান্ত্রিক পরম্পরাকে সুস্থ রাখার দায়টা কংগ্রেসের উপরে অনেকটাই বর্তায়। সেই দায়দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই নিজেদের সুসংহত করা এবং শক্তি সংহত করা কংগ্রেস নেতৃত্বের কর্তব্য। তাই অচলাবস্থা সরিয়ে অবিলম্বে সভাপতির পদ পূরণ করা হোক। রাহুল গাঁধী যদি ইস্তফার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, তা হলে অন্য কোনও উপযুক্ত ব্যক্তির উপর সভাপতিত্ব ন্যস্ত হোক। কিন্তু নেতৃত্বহীনতা অবিলম্বে কাটানো হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement