ছবি: পিটিআই।
আক্ষরিক অর্থেই অচল-অবস্থা। লকডাউন শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজপথে বাসের অভাব প্রকট। বেসরকারি বাসমালিকরা বলিতেছেন, ভাড়া না বাড়াইলে তাঁহাদের পক্ষে কম যাত্রী-সংখ্যায় বাস চালানো সম্ভব নহে। সরকারি বাস চলিতেছে, কিন্তু তাহা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে, অন্তত এখনও অবধি। ফলে, লকডাউনের শর্ত শিথিল হইলেও সাধারণ মানুষ— যাঁহাদের ব্যক্তিগত গাড়িঘোড়া নাই— কাজে যাইবেন কী ভাবে, সেই প্রশ্নটি তীব্র হইতেছে। বাসমালিকদের দাবিটি ভিত্তিহীন নহে। যদি ধরিয়াও লওয়া যায় যে পূর্বে, পূর্ণক্ষমতায় যাত্রী বহন করিয়া, তাঁহাদের যথেষ্ট লাভ হইত, যাত্রী-সংখ্যা এক ধাক্কায় দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়া গেলে সেই লাভ উবিয়া যাওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, অর্থনীতির ভাষায়, বাসে যাত্রী-বহনের ‘মার্জিনাল কস্ট’ শূন্য— যাত্রী-সংখ্যা যাহাই হউক, বাস চালাইবার খরচ স্থির। কর্মীদের বেতন, তেলের দাম, ঋণের কিস্তি, মেরামতির খরচ— বাসে যাত্রী ঝুলিয়াই যাউক আর তিনটি আসনে এক জন মাত্র যাত্রীই বসুক, সব অবস্থাতেই এই খরচগুলি অপরিবর্তনীয়। দুর্জনে বলিবে, প্রতি দিন পুলিশকে যে খাজনা দিতে হয়, তাহাও খরচের একটি বড় অংশ। অতএব, তাঁহারা বাস বন্ধ রাখিয়াছেন।
ভাড়া বাড়াইয়া তাহা যাত্রীদের উপর চাপাইয়া দেওয়া এই দুঃসময়ে উচিত হইবে না। অন্য একটি সমাধান হইতে পারে ভর্তুকি— বাসমালিকদের যে ঘাটতি হইবে, সরকার তাহা পুষাইয়া দিবে। কিন্তু, তাহাও একটি সমস্যাজনক নজির সৃষ্টি করিবে। কোন ভর্তুকি কেন চালু হইয়াছিল, সে কথা দ্রুত বিস্মৃত হওয়াই দস্তুর। স্মৃতিতে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে, তাহা সরকারি ভর্তুকির রাজনীতি। ফলে, কোভিড-১৯’জনিত বিপদ কাটিলেও ভর্তুকির রাজনীতিটি থাকিয়া যাইবে, তেমন আশঙ্কা প্রবল।
এই অবস্থায় একটিই পথ খোলা থাকে— যথাসম্ভব সরকারি বাস চালানো। ইহা সত্য যে রাজ্যে সাধারণত যত বাস চলে, সরকারি বাসের সংখ্যা তাহার এক-পঞ্চমাংশও নহে। কিন্তু, এখনও অবধি যাত্রী-সংখ্যা সীমিত, ফলে বাসের চাহিদাও তুলনায় কম। এই সময়ে সরকারি বাসের সিংহভাগ রাস্তায় নামিলেই প্রয়োজন মিটিবে। লকডাউন যত শিথিল হইবে, সংখ্যাও সেই অনুপাতে বাড়িবে। সেই সংখ্যক যাত্রী শুধুমাত্র সরকারি বাসের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হইতে পারে। কিন্তু, সাঁকোটি কী ভাবে পার হওয়া যাইবে, তাহা সাঁকোর সম্মুখে উপস্থিত হইবার পরই ভাবা বিধেয়। আপাতত লকডাউন শিথিলতার প্রাথমিক পর্যায়ে একাধিক সম্ভাবনা আছে। সরকার প্রয়োজনানুসারে বেসরকারি বাস সাময়িক ভাবে ধার লইয়া চালাইতে পারে। বেসরকারি বাসগুলিকে শর্তভিত্তিক ভর্তুকি দেওয়ার কথাও ভাবা যাইতে পারে। মোট কথা হইল, অর্থনীতিকে ছন্দে ফিরাইতে হইলে গণপরিবহণকেও ধাপে ধাপে চালু করিতে হইবে। তাহা সরকারের দায়িত্ব। তাহার জন্য যে টাকা খরচ করা প্রয়োজন, রাজকোষ হইতেই সেই ব্যবস্থা করিতে হইবে। সত্য যে কোভিড-১৯’এর মোকাবিলা করিতে রাজকোষের উপর প্রবল চাপ। ইহাও সত্য যে এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট যে সাহায্য প্রত্যাশিত ছিল, তাহা মিলে নাই। কিন্তু, গণপরিবহণ যে কোনও সরকারি খরচের নিকট অগ্রাধিকার দাবি করে— তাহাও সংশয়াতীত।