News Letter

বার বার সতর্কবার্তা, তবু তৃণমূলই তৃণমূলের প্রতিপক্ষ কেন?

সাদা চোখে দৃশ্যমান ছিল রাজনৈতিক বাস্তবতাটা। সবাই সব জানতেন-বুঝতেন, তবে মুখ খুলতেন না অনেকেই। বেশির ভাগই একটু আবডাল রেখে আলোচনাটা করতেন। রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে অস্বস্তিকর সেই বাস্তবতাটা এ বার সব আবডাল খসিয়ে ফেলল।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:০১
Share:

সাদা চোখে দৃশ্যমান ছিল রাজনৈতিক বাস্তবতাটা। সবাই সব জানতেন-বুঝতেন, তবে মুখ খুলতেন না অনেকেই। বেশির ভাগই একটু আবডাল রেখে আলোচনাটা করতেন। রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে অস্বস্তিকর সেই বাস্তবতাটা এ বার সব আবডাল খসিয়ে ফেলল। ছাত্রনেতা সগর্বে স্বীকার করলেন, ময়দানে তৃণমূল ছাড়া অন্য কেউ নেই, সঙ্ঘাতও তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলেরই। সৌজন্যে চারুচন্দ্র কলেজ।

Advertisement

পরীক্ষা চলাকালীন আক্রান্ত হল কলেজটা। অবাধ ভাঙচুর, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলার ছবি উঠে এল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের লড়াইয়ের জেরেই যে এই বিশৃঙ্খলা, তা আর বিন্দুমাত্রও আড়ালে রইল না। বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে তাণ্ডবের অভিযোগ উঠল মন্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ তুললেন খোদ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। সংবাদমাধ্যমে হেঁকে বলে দিলেন, কলেজে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও সংগঠনের অস্তিত্বই নেই। মন্ত্রী এবং মন্ত্রী-পুত্র তৃণমূলের। ছাত্র সংসদ এবং ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও তৃণমূলের। মন্ত্রী-পুত্র দোষী, নাকি অন্য কেউ দায়ী, সে প্রমাণ-সাপেক্ষ হতে পারে। কিন্তু তৃণমূলই যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তৃণমূলই যে মারছে আর তৃণমূলই মার খাচ্ছে, তাতে আর কোনও সংশয় রইল না।

এই নৈরাজ্য কেন? বিরোধীরা কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরেও ছাত্র রাজনীতির পরিসরে এই রোজকার সঙ্ঘাত কেন? প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার সময় এসে গিয়েছে।

Advertisement

বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম রুখতে সক্রিয় হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রশ্ন উঠেছে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও একই ব্যবস্থার অধীনে আসবে না কেন? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, সরকারি হাসপাতালে নজরদারি চালানোর অধিকার তাঁর নিজেরই রয়েছে, তার জন্য আলাদা আইনের দরকার নেই।

বেসরকারি শিক্ষা ক্ষেত্রেও এ বার নজর দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, অবধারিত ভাবে প্রশ্ন উঠবে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সমস্যা মিটবে কোন পথে? মুখ্যমন্ত্রী তখনও বলতেই পারেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা মেটাতে প্রশাসনিক তৎপরতাই যথেষ্ট, আলাদা কোনও বন্দোবস্ত অপ্রয়োজনীয়।

তা-ই যদি হবে, তা হলে একের পর এক কলেজ থেকে দিনের পর দিন এই চূড়ান্ত নৈরাজ্যের খবর উঠে আসছে কেন? মুখ্যমন্ত্রীর নজরে কি আসছে না বিষয়গুলো? নিশ্চয়ই আসছে। আসছে বলেই, তিনি মাঝে-মধ্যেই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন, বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত না করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তবু থামছে না হানাহানি।

মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর হুঁশিয়ারিতেও কাজ হচ্ছে না কেন? সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কি কোনও গলদ থেকে যাচ্ছে? নাকি মারাত্মক কোনও রাজনৈতিক ভ্রান্তি এই মুষল পর্ব ডেকে আনছে? উত্তরটা তৃণমূল নেতৃত্বকেই খুঁজতে হবে। খুঁজে বার করতে হবে সমাধানটাও। না হলে, বেসরকারি শিক্ষা ক্ষেত্রকে নজরদারির আওতায় আনার যে সাধু উদ্যোগ মুখ্যমন্ত্রী নিচ্ছেন, সেই উদ্যোগ গ্রহণের নৈতিক অধিকারটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ পাবেন বিরোধীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement