Canada

অধিকার অনধিকার

এই রাগ সঙ্গত কি না, তাহাই প্রশ্ন। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আমরা বুঝিয়া লইব, এই ঘোষণাই শেষ কথা নহে। তাহার সহিত জড়াইয়া আছে রাষ্ট্রীয় নীতির প্রশ্ন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:২৩
Share:

—ফাইল চিত্র

রাগ হইয়াছে ভারত সরকারের। কৃষি আইন লইয়া দিল্লিতে কৃষকদের প্রতিবাদ আন্দোলন চলিতেছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাহা সমর্থন করিয়া বসিলেন, সেই কারণে। এক আন্তর্জাল-অনুষ্ঠানে ট্রুডো ভারতের কৃষকদের লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া বলিয়াছেন, তাঁহার দেশ চিরকাল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষায় তৎপর থাকিবে। তাঁহার দলের অন্য নেতা-মন্ত্রীরাও সরব হইয়াছেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক দিল্লিতে কানাডার হাইকমিশনারকে ডাকিয়া কড়া কথা শুনাইয়া দিয়াছে: কৃষক আন্দোলন ভারতের ঘরের ব্যাপার, তাহা লইয়া কানাডার মন্তব্য অনভিপ্রেত। এই রূপ চলিলে কূটনৈতিক সম্পর্ক টাল খাইবে। ট্রুডো তাহাতেও দমেন নাই। ইহার মধ্যেই ভারতের কৃষক আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন ও সহমর্মিতা জানাইয়াছেন কয়েক জন আমেরিকান রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক, উদ্বিগ্ন ৩৬ জন ব্রিটিশ এমপি-ও। এত শত ‘বহিরাগত’ মন্তব্য, রাগ হইবারই কথা।

Advertisement

এই রাগ সঙ্গত কি না, তাহাই প্রশ্ন। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আমরা বুঝিয়া লইব, এই ঘোষণাই শেষ কথা নহে। তাহার সহিত জড়াইয়া আছে রাষ্ট্রীয় নীতির প্রশ্ন। আন্দোলন যাহা লইয়া, সেই কৃষি আইন ভারতের নিজস্ব নির্মাণ ঠিক কথা, তেমনই তাহার কাঠামো ও অন্তর্বস্তু লইয়া আন্তর্জাতিক স্তরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাতেও চর্চা হইবে, তাহাও সত্য। অর্থাৎ, ইহা স্রেফ অভ্যন্তরীণ বিষয় নহে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এমনকি ভাবমূর্তি রক্ষারও ব্যাপার। আর সাত সাগর পারের অন্য দেশ বলিয়াই ভারতের ব্যাপারে মতামত দান নীতিকটু অনধিকার চর্চা, তাহাও নহে। এই বিশ্বায়িত পৃথিবীতে ভৌগোলিক দূরত্ব কোনও অন্তরায় নহে, নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দেশ হইতে পঞ্জাব-হরিয়ানার চাষিদের বিষয়ে কথা বলা যাইবে না— তাহাও হইতে পারে না। তাহা হইলে পাকিস্তান বা চিন লইয়া ভারতের মুহুর্মুহু মন্তব্য ও প্রতিবাদও খাটে না। যে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন লইয়া গত বৎসর কেন্দ্রীয় সরকার আদাজল খাইয়া লাগিয়াছিল, তাহার উদ্দেশ্য-বিবরণীতে প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের দুরবস্থার দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, তাহাকেও অনধিকার চর্চা বলিতে হয়। উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চিনের, বা রোহিঙ্গাদের প্রতি মায়ানমারের আচরণ লইয়া আমেরিকা বা বাংলাদেশের মন্তব্য কোনও অর্থে অসঙ্গত নহে।

তবে মন্তব্যের পশ্চাতে কোনও উদ্দেশ্য আছে কি না, তাহা লইয়া চর্চা হইতে পারে। ভারতের কৃষক আন্দোলনে কানাডার সমর্থন শর্তাতীত কি না, না কি তাহার পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থ আছে, তাহা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে পারে। উঠিয়াছেও। ট্রুডোর ক্যাবিনেটে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক জন শিখ, হাউস অব কমন্স-এ বেশ কয়েকটি নির্বাচনী আসনে শিখরা প্রভাবশালী জাতি গোষ্ঠী, আরও কয়েকটি অঞ্চলে শিখরা গুরুত্বপূর্ণ এশীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। গুরু নানকের জন্মদিনের এক অনুষ্ঠান হইতেই ট্রুডো পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গ তুলিয়াছিলেন। এই সমর্থন পক্ষান্তরে কানাডার শিখ ভোট ব্যাঙ্ক দখলের রাজনীতি কি না, সেই দিকে ভারত দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারিত। প্রশ্ন তুলিতে পারিত, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ভারতের কৃষি বিষয়ে কানাডার বিরোধিতার দিকে। বিদেশি আধিকারিককে তলব করিয়া বকুনি দেওয়া কূটনীতি বটে, তবে উহা অপেক্ষা অধিক কার্যকর কূটনৈতিক পথ রহিয়াছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement