Parliament

অনাবশ্যক?

সরকার কেন কোনও বিকল্প পন্থার কথা না ভাবিয়া সরাসরি বাতিলের রাস্তাটি বাছিয়া লইল, এমন একটি প্রশ্নও কি অস্বাভাবিক?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১২
Share:

ছবি পিটিআই

বাতিল হইয়া গেল সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। অতিমারির আবহে হয়তো ইহা প্রথম দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু সরকার কেন কোনও বিকল্প পন্থার কথা না ভাবিয়া সরাসরি বাতিলের রাস্তাটি বাছিয়া লইল, এমন একটি প্রশ্নও কি অস্বাভাবিক? সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী জানাইয়াছেন, কোভিড-১৯ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া অধিবেশন বাতিলের পক্ষে মত দিয়াছে একাধিক বিরোধী দলও। কিন্তু বিষয়টি কি যথার্থই এতখানি সরল? নূতন কৃষি বিল প্রসঙ্গে সংসদের একটি ছোট অধিবেশনের প্রস্তাব করিয়া সরকারকে পত্র দিয়াছিলেন লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। পত্রপাঠ তাহা নাকচ হইয়াছে। বিলের বিরোধিতায় রাজধানীর রাজপথে বসিয়া আছেন কৃষকেরা। তৎসত্ত্বেও আইন লইয়া আইনসভায় আলোচনার কথা বিবেচনাতেও আনিতেছে না সরকার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান দেশের আইনকানুন স্থির করে, তাহা স্থগিত রাখা গণতন্ত্রের পক্ষে কোনও মতেই শুভ লক্ষণ নহে।

Advertisement

একই প্রশ্ন উঠিয়াছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা অধিবেশন বিষয়েও। ভোটপ্রচার কিংবা জনসভার ন্যায় অপরাপর রাজনৈতিক কার্যক্রম পুরাদমে জারি আছে, তবে বিধানসভা নহে কেন? বিহারে ভোট হইল যথারীতি। পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন হইতে মেলা, সবই জারি। আগামী বৎসর একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিও উচ্চগ্রামে। কেবল প্রতিনিধি-সভার উপরেই কোপ? তবে বিধানসভার তুলনায় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নটি অনেক গুরুতর। কেননা, এই বৎসর সংসদের অধিবেশন বসিয়াছে মাত্র ৩৩ দিন। অভূতপূর্ব বলা যাইতে পারে, কেননা ইতিপূর্বে ২০০৮ সালে ৪৬ দিনের হিসাবটি সর্বনিম্ন ছিল। বিগত দুই-তিন বৎসর যাবৎ সংসদ অধিবেশনের দিনসংখ্যা ক্রমশ কমিয়া আসিতেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতে সংসদের অধিবেশন বৎসরে অন্তত একশত কুড়ি দিন হওয়া বাঞ্ছনীয়। স্বাধীনতার পরে প্রথম দুই দশক তাহাই ঘটিয়াছিল। কিন্তু যত দিন গিয়াছে, তত গড় দিনসংখ্যা হ্রাস পাইয়াছে। শেষ দশকে— বিশেষ ভাবে।

উদ্বেগজনক। এই বারে অধিবেশন বাতিলের পশ্চাতে যুক্তি থাকিলেও বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রবণতাটি দুশ্চিন্তা জাগায়। দেশের আইনসভাকে সচল রাখা কেবল জরুরি নহে, জাতীয় কর্তব্য। সরকারের ক্রিয়াকলাপ বিচার করিবার দায়িত্ব আইনসভারই উপর— জনতা এই সভাতেই আপনার প্রতিভূ প্রেরণ করে। রাষ্ট্রের কার্যনির্বাহী শাখাটির সর্বেসর্বা হইয়া ওঠা রুখিতে তাই এই শাখার সক্রিয়তা জরুরি, তাহা ব্যতীত গণতন্ত্র রক্তহীন হইয়া পড়ে। অথচ সরকারের আচরণে যেন প্রতীয়মান হইতেছে, সংসদ একটি অপ্রয়োজনীয় বস্তু। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তো দূরত্ববিধি মানিয়াই আইনসভা চালু থাকিতেছে। ভারতেও কোভিড-বিধি মানিয়া সংসদ চালাইবার ব্যবস্থা ইতিপূর্বেই হইয়াছে, তদনুসারে যথাযথ ভাবে অধিবেশনও অনুষ্ঠিত হইয়াছে। তবে এ বারে অধিবেশন বাতিল হইল কেন? প্রশ্ন শুনিবার, প্রশ্নের উত্তর দিবার, সমালোচনা হজম করিবার ক্ষেত্রে শাসক দলের আত্যন্তিক অনীহাই প্রকৃত কারণ নহে তো? সন্দেহ স্বাভাবিক, সংসদ অধিবেশনের এই দুর্ভাগ্যজনক ধারাবাহিক ম্রিয়মাণতার পিছনে কোভিড-অতিমারিই হয়তো একমাত্র যুক্তি নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement