যে জানো সন্ধান

আয়কর সংক্রান্ত যে কোনও ঘোষণাই এই দফায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিমাত্র, কারণ কার্যনির্বাহী অর্থমন্ত্রীই জানাইয়াছেন, আয়কর সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তই নূতন সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে থাকিবে। অর্থাৎ, ইহা গাজরমাত্র। কিন্তু প্রশ্ন হইল, সেই গাজর ঝুলাইবার সময়ও কি তাঁহারা ভাবিয়া দেখিয়াছেন, সাধারণ মানুষ এই প্যাঁচটি বুঝিয়া ফেলিবে কি না?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৩
Share:

—ছবি পিটিআই।

গোটা বক্তৃতা জুড়িয়াই টেবিল চাপড়াইয়াছেন শাসক দলের সাংসদরা। তবে, কার্যনির্বাহী অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল যখন বলিলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়া পাঁচ লক্ষ টাকা হইতেছে, তখন যেন ঝড় বহিয়া গেল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর টেবিল চাপড়ানি, হল জুড়িয়া ‘মোদী মোদী’ রব— বোঝা গেল, তুরুপের তাসটি এত ক্ষণে খেলিলেন গয়াল। বিরোধী বেঞ্চে নেতাদের তখন গালে হাত। বিরোধিতা করিলেও বিপদ, না করিলেও বিপদ— ফলে মুখের একটি রেখাও যেন না কাঁপে, চক্ষের পাতা যেন না পড়ে, তাঁহারা তখন সেই সাধনায় মগ্ন। আঁচ করা চলে, টেলিভিশন স্টুডিয়োয়, হরেক আলোচনাচক্রে বসিয়া থাকা বিশেষজ্ঞরাও একই রকম বিস্মিত। এক ধাক্কায় করমুক্ত আয়ের সীমা দ্বিগুণ! ভক্তরা উচ্ছ্বসিত, বিরোধীরা প্রতিযুক্তি হাতড়াইতেছেন। ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে পূর্বে কখনও এমন ঘটিয়াছে কি না তাহার খোঁজ চলিতেছে, তখন বোঝা গেল— ইহাও জুমলা। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ে নাই, আয়কর আইনের ৮৭এ ধারায় রিবেটের পরিমাণ ২,৫০০ টাকা হইতে বাড়িয়া ১২,৫০০ টাকা হইয়াছে মাত্র। অর্থাৎ, যাঁহাদের করযোগ্য আয় বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকার কম, তাঁহাদের প্রদেয় আয়করের পরিমাণ কার্যত শূন্য। যাঁহাদের আয় পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁহাদের লবডঙ্কা। বিজেপি সাংসদকুল হইতে রাহুল গাঁধী, টেলিভিশন-বিশেষজ্ঞ হইতে চায়ের দোকানের ভক্ত— কেহই যে গয়ালের বক্তৃতা শুনিয়া এই প্যাঁচটি বুঝিতে পারেন নাই, তাহাতে অবাক হইবার বিন্দুমাত্র কারণ নাই। বুঝিবার উপায় ছিল না। প্রসঙ্গত, শ্রীগয়াল নিজে বুঝিয়াছিলেন তো?

Advertisement

আয়কর সংক্রান্ত যে কোনও ঘোষণাই এই দফায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিমাত্র, কারণ কার্যনির্বাহী অর্থমন্ত্রীই জানাইয়াছেন, আয়কর সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তই নূতন সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে থাকিবে। অর্থাৎ, ইহা গাজরমাত্র। কিন্তু প্রশ্ন হইল, সেই গাজর ঝুলাইবার সময়ও কি তাঁহারা ভাবিয়া দেখিয়াছেন, সাধারণ মানুষ এই প্যাঁচটি বুঝিয়া ফেলিবে কি না? অন্তত, যাঁহাদের হাতে বিশ্লেষণ করিবার ভার, তাঁহারা মানুষকে বুঝাইয়া দিবেন কি না? দেখা গেল, বক্তৃতা শেষ হইবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই চালাকিটি ফাঁস হইয়া গেল। অর্থমন্ত্রী বা তাঁহার নেতা কি এই সম্ভাবনাটি ভাবিয়া দেখেন নাই? বিশেষত, যে সময়ে তাঁহাদের প্রতি ভক্তির সর্বভারতীয় পরিমাণ দ্রুত কমিতেছে, প্রতিটি সিদ্ধান্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ হইতেছে এবং চালাকিগুলি ধরা পড়িতেছে, তখন আরও এক বার সাধারণ মানুষকে বোকা বানাইবার চেষ্টায় রাজনৈতিক বিচক্ষণতা কতখানি? প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়, কৃষকের আয়বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান— এই বাজেট বক্তৃতাতেই প্রভূত অসঙ্গতি। আরও স্পষ্ট ভাষায় বলিলে, অনৃতভাষণ। আয়কর লইয়া আরও একটি জুমলার প্রয়োজন ছিল কি? আশঙ্কা হয়, নির্বাচনী সাফল্যের সম্ভাবনা যত ক্ষীণ হইতেছে, নরেন্দ্র মোদীদের ততই সব গুলাইয়া যাইতেছে। পাঁচ বৎসরে মানুষের কথা না ভাবিলে শেষ মুহূর্তে এই বিপদ উপস্থিত হয় বটে। এই বাজেটে তাঁহারা যে পরিমাণ প্রতিশ্রুতি বিলাইয়াছেন, তাহা পূরণ করিবেন কোন গৌরী সেন, সেই প্রশ্ন আপাতত তোলা থাকুক। কিন্তু, প্রতিশ্রুতি আর অনৃতভাষণের মধ্যে অনতিসূক্ষ্ম লক্ষ্মণরেখাটি যে তাঁহারা অতিক্রম করিতেছেন, গয়ালরা তাহা বুঝিয়াছিলেন তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement