বিতর্কিত মন্তব্য মুখতার আব্বাস নকভির। —ফাইল চিত্র।
শাসক আসলে শাসকই হন। সব শাসকের চরিত্রই সম্ভবত একই। ইদানীং কালের ভারতীয় রাজনীতিকরা অন্তত সে রকম ধারণাই তৈরি করে দিচ্ছেন।
‘সাজানো ঘটনা’— এই শব্দবন্ধ যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে ন্যায়প্রার্থীর জন্য। পশ্চিমবঙ্গে হোক, বা বিহারে। রাজস্থানে ঘটুক বা ঝাড়খণ্ডে— কোনও ঘটনা শাসকের পক্ষে অস্বস্তিকর হলেই তাকে ‘সাজানো ঘটনা’ তকমা দিয়ে দেওয়া হবে। এ যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে উঠছে দিন দিন। কলকাতায় বসে থাকা শাসক হন অথবা দিল্লি দরবারের লোক, প্রবণতা সবারই এক।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে গণপ্রহার বা গণপ্রহারে হত্যার দুঃসংবাদ আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। গোরক্ষার নামে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। এক সম্প্রদায় আর এক সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করছে। এই সব ঘটনা যে ঘটছে, তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। দায়বদ্ধতা থেকে হোক অথবা প্রধানমন্ত্রী পদের ভাবমূর্তি রক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে— এই ধরনের ঘটনার নিন্দা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীসভারই সদস্য মুখতার আব্বাস নকভি বলে দিলেন, গণপ্রহারের অথবা গণপ্রহারে হত্যার অধিকাংশ ঘটনাই সাজানো, অধিকাংশ খবরই ভুয়ো। সৌভাগ্যক্রমে, নাকি দুর্ভাগ্যক্রমে জানা নেই, শুধু জানা আছে যে, এই নকভিই ভারতের সংখ্যালঘু উন্নয়ণমন্ত্রী। মাত্র কয়েকটা দিন আগেই এই নকভিই কিন্তু বলেছিলেন— জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো যায় না। কিন্তু বিহারে সম্প্রতি ফের গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনার অভিযোগ ওঠার পরে বিরোধী দলগুলো যখনই মুখ খুলতে শুরু করেছে, তখনই বয়ান বদলে ফেললেন নকভি।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বললে কম বলা হয়। নকভি যে মন্তব্য করেছেন, দায়িত্বশীল এবং সাংবিধানিক পদে বসে সেই ধরণের মন্তব্য করা আসলে অপরাধীদের পরোক্ষে প্রশ্রয় দেওয়া। রাজনীতিকদের ভূমিকায় এই রকম অসঙ্গতি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা থাকলে কোনও দিন পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। দিন দিন এই ধরণের অপরাধ বাড়তে থাকবে।
আরও পড়ুন: ‘সব সাজানো’, পিটিয়ে মারার ঘটনা নিয়ে এ বার বিতর্কিত মন্তব্য নকভির
গণপ্রহারের ঘটনার বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলেছেন ঠিকই। কিন্তু বিজেপি সত্যিই এ সব রুখতে চায় কি না, বিজেপি সত্যিই গণপ্রহারের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সংশয়টার নিরসনের দায় বিজেপি-কেই নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। দেশবাসী কিন্তু কোনও বিশৃঙ্খলা বা অরাজক প্রবণতার সমর্থনে বিজেপির পক্ষে এই রায় দেননি। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক কিন্তু সরকারের কাছ থেকে সুশাসন চান। আর সেই সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে দ্ব্যর্থহীন ভাবে এই সব অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। নকভিদেরও বুঝিয়ে দিতে হবে, একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যও মার্জনীয় নয়। সরকার কি নকভির মন্তব্যের সঙ্গে নিজের দূরত্ব তৈরি করবে? বিজেপি কি নকভির মন্তব্যের নিন্দা করবে? না করলে উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয়টা থেকেই যাবে।