Editorial news

দলের স্বার্থে রাষ্ট্রের কাঠামোয় আঘাত!

দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দল? নাকি দলের স্বার্থে দেশ? দেশের প্রধান শাসকদলের কার্যকলাপ এবং কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে আরও একবার করতে হচ্ছে প্রশ্নটা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০২
Share:

অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।

দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দল? নাকি দলের স্বার্থে দেশ? দেশের প্রধান শাসকদলের কার্যকলাপ এবং কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে আরও একবার করতে হচ্ছে প্রশ্নটা। দেশ না দল— অগ্রাধিকার কাকে, বিজেপি সভাপতিকে এই প্রশ্নটা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

Advertisement

কেরলের শবরীমালা পাহাড়ে আয়াপ্পা স্বামীর মন্দিরে ঋতুযোগ্য নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখা হয়েছে দশকের পর দশক। সে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। জানিয়ে দিল, আয়াপ্পা স্বামীর মন্দিরে সবাইকে প্রবেশ করতে দিতে হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নেওয়া দূরের কথা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রকাশ্য বিরোধিতা শুরু করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এই ‘প্রতিবাদীদের’ হয়ে সুর ক্রমশ চড়াচ্ছে দেশের প্রধান শাসকদল বিজেপি। কোন বুদ্ধিতে এবং কোন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে বিজেপি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের রূপায়ণ আটকাতে পথে নামছে, তা বোঝা দুষ্কর।

কেরল শাসন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সরকার। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের রূপায়ণ ঘটানোর দায়িত্ব কেরলের সরকারেরই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দেশের সরকারের কোনও দায় নেই। কেরলের সরকার যদি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের রূপায়ণ ঘটাতে অক্ষম হয়, তাহলে দেশের সরকারকে কেরলের সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং শবরীমালার মন্দিরে সব বয়সের মহিলার প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু দেশের সরকার শবরীমালা সংক্রান্ত এই সঙ্কট নিয়ে টুঁ-শব্দটা করছে না। আর দেশের সরকারের চালক যারা, সেই বিজেপি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মুখ খুলছে। কেরলে গিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, শবরীমালা কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যাঁরা পথে নেমেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হলে, কেরলের সরকারকে টেনে নামানো হতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এত বড় হুমকি অমিত শাহ দেন কী ভাবে! তিনি দেশের শাসকদলের সভাপতি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোনও রায় দিলে এ ভাবে তার বিরোধিতা করার অধিকার কারও নেই। আর দেশের শাসকদলের সভাপতি হিসেবে অমিত শাহ তো এমনটা করতেই পারেন না। তাঁকে মানায় না এ সব। কিন্তু অমিত শাহ অক্লেশে এ সব করে চলেছেন এবং কেরলের সরকারে পতন ঘটানোর হুঁশিয়ারিও শুনিয়ে দিয়েছেন। অমিত শাহের তথা বিজেপির এই অবস্থানের কারণে কেরলে বিজেপির রাজনৈতিক লাভ হতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের কোনও রায়কে এ ভাবে অগ্রাহ্য করায় দেশের সংবিধান কী প্রচণ্ড ধাক্কা খাচ্ছে, তা অমিত শাহ বোঝেন না, এমন নয়। তা সত্ত্বেও শবরীমালা প্রশ্নে অমিত শাহদের অবস্থান যেন মারমুখী! দেশের তথা সাংবিধানিক কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয় হোক, বিজেপির রাজনৈতিক ফায়দাটা সুনিশ্চিত করতেই হবে— অমিত শাহরা কি তাহলে এই নীতি নিয়েই এগোচ্ছেন এখন?

আরও পড়ুন: ‘আয়াপ্পা-ভক্তদের পিছনে লাগলে মূল্য দিতে হবে’, হুঁশিয়ারি শাহের

কেরল থেকে অমিত শাহ সুপ্রিম কোর্টকে পরামর্শ দিয়েছেন। এমন রায় দেওয়া উচিত, যার রূপায়ণ সম্ভব— এমনই মন্তব্য করেছেন অমিত শাহ। ধর্মীয় বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ অথবা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত মেনে নেওয়া হবে না— এমনই বার্তা দিতে শুরু করেছে বিজেপি। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, তিন তালাক প্রথার অবলুপ্তির প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পক্ষে বিজেপি কী ভাবে দাঁড়ালো? ধর্মীয় বিধি মেনেই তো মুসলিমদের মধ্যে তিন তালাক প্রথার প্রচলন ছিল। ধর্মীয় পরিসরে হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট যদি মুসলিমদের কোনও কুপ্রথার বিলোপ সাধন করতে পারে, তাহলে হিন্দু ধর্মীয় পরিসরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ মানা হবে না কেন? এই সরলরৈখিক তথা অতি সাধারণ প্রশ্নটার সদুত্তর যতক্ষণ না অমিত শাহরা দিতে পারছেন, ততক্ষণ শবরীমালা প্রশ্নে অমিত শাহদের অবস্থানের কোনও যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ রাজ্য শাসক করছে যে দলটা, গোটা দেশ শাসন করছে যে দলটা, সেই দলের সভাপতি হয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা যায় কী ভাবে! দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ফের আদালতেই আবেদন জানানো যেতে পারে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে বা সে পথে না হাঁটতে পেরে রায়ের রূপায়ণের বিরুদ্ধে জনগণকে প্ররোচিত করা যেতে পারে কী ভাবে! শুধুমাত্র দলের স্বার্থ দেখতে গিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোর উপর ভয়ঙ্কর আঘাত হানা হচ্ছে। অমিত শাহদের এই আচরণ তথা অবস্থান নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement