Jyotiraditya Scindia

ক্ষমতার টান

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিষয়ে প্রশ্ন উঠিবে বিপরীত দিক হইতেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০১:২৭
Share:

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। —ফাইল চিত্র

সপ্তাহ দুই আগে যে দলকে তীব্র আক্রমণ করিয়াছিলেন, এখন তাহারই আশ্রয় লইতে তিনি ব্যগ্র হইয়া উঠিলেন। দুই সপ্তাহ আগেও যে নেতার প্রতি নিজের পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করিয়াছিলেন, এখন তাঁহাকেই বেমালুম ত্যাগ করিলেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নিজের অবস্থানের সপক্ষে যুক্তি দিবার জন্য ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ কাহিনি হইতে মগনলাল মেঘরাজের প্রশ্নের উত্তরে ফেলুদার সেই অমোঘ বাক্যটি ধার করিতে পারেন— নিজেরই যখন মন, তিনি নিজে তাহা পরিবর্তন করিতেই পারেন। ঠিক, মন পরিবর্তনের অধিকার নাগরিকের থাকেই। কিন্তু তবু, প্রশ্ন উঠিতেছে, অধিকারের পিছনে যে দায়িত্ববোধ (কিংবা সেই বোধের অভাব)— তাহা লইয়া। এক জন রাজনীতিক এত দিন যে দলটির বিরুদ্ধে রাজনীতি করিয়াছেন, সেই পরিচয়ে একাধিক বার জনতার ভোট সংগ্রহ করিয়াছেন, এবং সেই ভোটের ভিত্তিতে একাধিক বার দেশের সংসদে জনপ্রতিনিধির ভূমিকা ও কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রীর ভূমিকা পালন করিয়াছেন, তিনি যদি অকস্মাৎ এক শত আশি ডিগ্রি ঘুরিয়া গিয়া বিপক্ষের দলটিতে যোগদান করেন, তাহা কি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিষয়ে কিছু বলে না? সিন্ধিয়ার আগে বহু রাজনৈতিক নেতা এমন করিয়াছেন বলিয়া সিন্ধিয়ার কাজটির অনৈতিকতা অপসারিত হয় না নিশ্চয়ই?

Advertisement

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিষয়ে প্রশ্ন উঠিবে বিপরীত দিক হইতেও। বিপক্ষ শিবিরের যে নায়ক বা মহানায়করা সিন্ধিয়াকে দলে টানিবার জন্য ব্যগ্র হইয়াছিলেন তাঁহারা জানেন, হাতে ক্ষমতা আছে বলিয়াই তাঁহারা ‘টানিবার’ কাজে সফল। বর্তমান বিজেপি জমানার ইহা একটি বিশেষ দিক। ক্ষমতা দিয়া তাঁহারা প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ ও হস্তপদবন্ধন করেন। অর্থের ছলাকলা ও ভীতিপ্রদর্শনের কৌশল, এই দুইয়ের ফাঁদে বিরোধী নেতারা একের পর এক বিজেপি পক্ষের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ঠিকই, ভারতীয় রাজনীতিতে ইহা নূতন কথা নহে। কিন্তু পূর্বসূরিদের তুলনায় নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ যে এই কৌশলকে সর্ববিহারী ও সর্ববিদারী করিয়া তুলিয়াছেন, বিজেপি সমর্থকরাও এক বাক্যে মানিবেন। গণতন্ত্র কি ইহারই নাম? যে কোনও ভাবে জনপ্রতিনিধিকে প্রলুব্ধ বা সন্ত্রস্ত করিয়া দলে লইয়া আসা, এবং তৎসূত্রে জনরাজনীতির সকল আদর্শকে তুচ্ছ করিয়া দেওয়া?

বস্তুত, সিন্ধিয়ার এই ‘মন-বদল’-এর পাশাপাশি, একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবে, মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে এক বড় রকমের টানাপড়েন চলিতেছে। শাসক কংগ্রেসের বিধায়কদের একটি অংশের দলত্যাগ এবং তাহার ফলে রাজ্য সরকারের পতন— পরিচিত চিত্রনাট্যটি অতিমাত্রায় প্রকট। অনুমান, অতঃপর দলত্যাগীরা কংগ্রেসি বিধায়কের পদে ইস্তফা দিবার ফলে উপনির্বাচন হইবে, সেই নির্বাচনে ওই সদস্যদের অনেকেই, হয়তো সকলেই প্রার্থী হইবেন— বিজেপির সদস্য হিসাবে। জয়ী হইলে তাঁহারা বিধায়ক হইবেন— বিজেপির বিধায়ক। ইতিমধ্যে যদি রাজ্যের সরকার উল্টাইয়া যায়, তবে তাঁহারা হয়তো মন্ত্রীও হইবেন— বিজেপির মন্ত্রী। এমন একটি ব্যবস্থা যে চলিতে পারে, চলিয়া আসিতেছে, তাহা কি অসঙ্গত নহে? আইনি আপত্তি না-ই থাকুক, এই ব্যবস্থা সম্পর্কে অবশ্যই নীতিগত আপত্তির কারণ আছে। যুক্তি আছে প্রতিকারের ব্যবস্থা খুঁজিবারও। কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মধ্যপথে বিপক্ষে যোগদান করিলে তাঁহার উপর কতকগুলি নিষেধ জারি করিবার কথা ভাবা চলে। যেমন, ন্যূনতম সময়কালের মধ্যে যাহাতে তিনি আবার ভোটে না দাঁড়াইতে পারেন, তেমন একটি ‘কুলিং অফ’ পর্বের ব্যবস্থা করা চলে। দায়িত্ব লইয়া মাঝপথে ছাড়িয়া দেওয়া যে এক শত শতাংশ লাভজনক নহে, কিছু ক্ষতিও তাহাতে থাকে, এইটুকু বার্তা অন্তত মহামান্য জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া দরকার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement