Jagdeep Dhankhar

পদের অমর্যাদা

মুখ্যমন্ত্রী মুসলমান তোষণ করিতেছেন কি না, তাহা অবশ্যই রাজনৈতিক তর্কের বিষয় হইতে পারে, কিন্তু সেই তর্কে রাজ্যপালের এক্তিয়ার নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share:

ছবি: পিটিআই।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তাঁহার পদের মর্যাদা বিষয়ে সচেতন, এই কথা বলিবার উপায় নাই। তিনি পদটির সীমাবদ্ধতা বুঝেন, তাহাও বলা চলিবে না। কোন কথাটি তাঁহার পক্ষে শোভন নহে, আর কোন কাজটি করিবার এক্তিয়ার তাঁহার নাই, কোনও বিবেচনাই জগদীপ ধনখড়ের প্রবল নহে। তবে, রাজভবনে প্রদীপ জ্বালাইয়া রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনার উদ্‌যাপন করা, তাঁহার অবিবেচনার মাপকাঠিতেও ব্যতিক্রমী। কেন, সেই কথাটি রাজ্যপালকে বুঝাইয়া বলিতে হইতেছে, তাহা অতি দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্যপাল হিসাবে তিনি বাঞ্চ অব থট্‌স বা উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড-এর নিকট শপথ গ্রহণ করেন নাই, করিয়াছিলেন ভারতীয় সংবিধান নামক গ্রন্থটির নিকট। সেই সংবিধান ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলিয়া স্বীকার করে। অতএব, একটি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে তাঁহার ন্যূনতম কর্তব্য সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা— অর্থাৎ, অন্তরে যদিও বা হিন্দুত্বের অখণ্ড সিংহাসন থাকে, তাহাকে গোপন রাখিয়া প্রকাশ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা। সেই দায়িত্ব পালনে শ্রীধনখড় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বস্তুত, ব্যর্থতা কথাটি এই ক্ষেত্রে অপ্রযুক্ত, কারণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখিবার কোনও চেষ্টাই তিনি করেন নাই।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সহিত তাঁহার অবাঞ্ছিত এবং অশোভন রাজনৈতিক দ্বৈরথকে শ্রীধনখড় আরও এক মাত্রা চড়াইয়া ঘোষণা করিলেন, তোষণের রাজনীতির স্বার্থেই মুখ্যমন্ত্রী রামমন্দির প্রসঙ্গে নীরব। মুখ্যমন্ত্রী মুসলমান তোষণ করিতেছেন কি না, তাহা অবশ্যই রাজনৈতিক তর্কের বিষয় হইতে পারে, কিন্তু সেই তর্কে রাজ্যপালের এক্তিয়ার নাই। মুখ্যমন্ত্রীকে কোনও পরামর্শ দেওয়ার থাকিলে তিনি একান্তে দিবেন, তাহাই শোভন, তাহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এক্ষণে বৃহত্তর প্রশ্ন হইল, মুখ্যমন্ত্রীর তোষণের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিতে রাজভবনে রামের প্রদীপ জ্বালাইবার প্রয়োজন পড়িল কেন? শ্রীধনখড় যাহা করিতেছেন, তাহা কোনও দলীয় নেতাকে যদি বা মানায়, রাজ্যপালের পক্ষে তাহা অতি বেমানান। তাঁহার এই তৎপরতা সম্ভবত স্বপ্রবৃত্ত নহে— যে নেতৃত্বের নির্দেশে তিনি রাজভবনকে ক্রমে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করিয়াছেন, তাহার অঙ্গুলিহেলনেই এই উৎসব ও বিষোদ্গার। দুর্ভাগ্য যে তিনি ভুলিয়াছেন, পদমর্যাদা রক্ষার দায়িত্বটি পদাধিকারীর উপরই বর্তায়— রাজ্যপালের আসনে বসিলে পূর্বাশ্রমের আনুগত্য বিস্মৃত হইতে হয়, ভবিষ্যতে লাভের প্রলোভনের বশ্যতা স্বীকার করিলেও চলে না। জগদীপ ধনখড়ের নামটি ইতিহাসের পাদটীকাতেও হয়তো থাকিবে না, কিন্তু দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রটির উপর যে আঘাত তিনি হানিতেছেন, সেই ক্ষতচিহ্নগুলি থাকিয়া যাইবে।

শ্রীধনখড় বলিতে পারেন, সংবিধানের এই অবমাননা তিনি একা করেন নাই। প্রতিবেশী রাজ্যের এক রাজ্যপাল সমাজমাধ্যমে বিষোদ্গার করাকে নিজের প্রাত্যহিকতার অঙ্গ করিয়া লইয়াছেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে শুধু রামভক্তিতেই সীমিত রাখেন নাই— জানাইয়াছেন, মসজিদের উদ্বোধনে আমন্ত্রিত হইলেও তিনি যাইবেন না, কারণ তিনি হিন্দু। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং রামলালার সম্মুখে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেন, জানান যে রামই দেশকে এক সূত্রে গাঁথিবেন— সেখানে অন্যদের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া কী লাভ, এই প্রশ্নটিও শ্রীধনখড়েরা করিতে পারেন। দেশের শাসকেরা ক্ষুদ্রতার সাধনায়, বিদ্বেষের সাধনায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য, সেখানে রাজ্যপালকে আলাদা করিয়া বলিবার কী আছে, তাহাও প্রশ্ন। দেশের সংবিধানকে, দেশের মৌলিক চরিত্র এতখানি অপমানিত আগে কোনও শাসক পক্ষের হাতে হয় নাই। অথচ সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা কিন্তু দেশের নাগরিকের প্রতিও দায়বদ্ধতা, নাগরিকের আস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শন!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement