এই দিশাহীনতা আশ্চর্যজনক!

ভারতের সঙ্গে আমেরিকার পরমাণু চুক্তি হয়েছিল যখন, তুমুল বিরোধিতা করেছিলেন বামপন্থীরা। ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির চুক্তি আটকাতে ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে তাঁরা সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

ভারতের সঙ্গে আমেরিকার পরমাণু চুক্তি হয়েছিল যখন, তুমুল বিরোধিতা করেছিলেন বামপন্থীরা। ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির চুক্তি আটকাতে ইউপিএ-১ সরকারের উপর থেকে তাঁরা সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন। আমেরিকায় নিযুক্ত তদানীন্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রণেন সেন বিরোধীদের ‘হেডলেস চিকেন’ বা মুণ্ডহীন মুরগি বলে কটাক্ষ করেছিলেন। মুণ্ডহীন মুরগির যেমন তুমুল ছটফটানি থাকে কিন্তু দিশা থাকে না, বাম দলগুলির তথা ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিরোধী দলগুলির দিশাহীন এবং সমাধান সূত্রহীন হইচই সম্পর্কেই সম্ভবত ওই কটাক্ষ ছিল প্রবীণ ভারতীয় কূটনীতিকের।

Advertisement

পদস্থ সরকারি কর্তা হয়ে মাননীয় সাংসদদের সম্পর্কে ওই মন্তব্যের জেরে রণেন সেনকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। কিন্তু সে অন্য প্রশ্ন। আসলে এই মুহূর্তে অন্য একটি কারণে রণেন সেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। ভারত-পাক উত্তেজনা এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে রাজনৈতিক তরজা যে পথে যাচ্ছে, তাতে আবার রণেন সেনের দেওয়া সেই উপমার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

বার বার সন্ত্রাসে রক্তাক্ত হতে হতে প্রত্যাঘাতের পথ বেছে নিয়েছে ভারত। সফল প্রত্যাঘাত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে এটি অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং এই প্রশ্নে গোটা দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একমত হওয়া উচিত। কিন্তু, কোনও কোনও বিরোধী দলের আচরণ সত্যিই দিশাহীন এবং দুর্বোধ্য। কখনও আম আদমি পার্টির অববিন্দ কেজরীবাল সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ চাইছেন। কখনও কংগ্রেসের সঞ্জয় নিরুপম অভিযানের ফুটেজ প্রকাশ করার দাবি তুলছেন। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব পরমুহূর্তেই জানাচ্ছে, সঞ্জয় নিরুপমের মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। কংগ্রেস দল সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কোনও প্রমাণ চাইছে না। এর পর কয়েক রাত কাটতে না কাটতেই কংগ্রেস সহ-সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করছেন এবং তাঁকে ‘জওয়ানদের রক্তের দালাল’ বলে সম্বোধন করছেন। সেই মন্তব্যের জেরে যখন তুমুল সমালোচনার ঝড়, তখন ফের অবস্থান বদলে কংগ্রেস মুখপাত্ররা জানাচ্ছেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এই প্রথম নয়, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জমানাতেও হয়েছিল। ইউপিএ আমলের সেই অভিযান বেশি দুঃসাহসিক ছিল, না এ বারের অভিযান বেশি কঠিন, তা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনাও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কংগ্রেস নেতারা।

Advertisement

এ কোন কংগ্রেস! এত দিশাহীন দশায় এই দলকে আগে কখনও দেখা যায়নি। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সরকারের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল যে কংগ্রেস, সেই কংগ্রেসকেই তো ভারত চেনে। অটবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে ১৯৯৯ সালে যখন কার্গিলের পাহাড়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নামল ভারত, তখনও কংগ্রেস ঘোষিত ভাবে সরকারের পাশে ছিল। অবস্থান পরিবর্তন বা ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার কোনও চেষ্টা দেখা যায়নি সে দিনও। আজ হঠাৎ এ কোন পথে দেশের প্রধান বিরোধী দল? জাতীয় স্বার্থে যখন সংহতিই একমাত্র পন্থা, তখন সুপ্রাচীন পরম্পরা ভুলে কংগ্রেসে এতও দ্বিধাদ্বন্দ্ব, এত দিশাহীনতা কেন?

সমস্যা অবশ্যই নেতৃত্বের। সমস্যা চিন্তাভাবনার পরিসরেও। আত্মঘাতী এক পথে যেন ধাবিত দেশের প্রধান বিরোধী দল।

তবে সমস্যা কিন্তু সরকারের পক্ষেও রয়েছে। সেনা অভিযানের কৃতিত্বকে কপালের তিলক করে তুলতে চাইছে বিজেপি। সেনার সাফল্যকে দলের সাফল্য হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। পূর্বতন সরকারকে অপদার্থ প্রমাণ করার চেষ্টাও হচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারের তরফ থেকে।

অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় আরও বড় লড়াই লড়তে হয়েছিল ভারতীয় সেনাকে। কিন্তু যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর জয়কে বিজেপি তথা এনডিএ-র জয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়নি। অন্য প্রধানমন্ত্রীদের জমানাকে অপদার্থ প্রমাণ করার অপচেষ্টাও দেখা যায়নি।

এ কোন বিজেপি? এই প্রশ্নও উঠছে তাই।

রাজনৈতিক সংহতি আর সংযমের সময় এটা। দায়িত্বশীলরা সে কথা ভুলে যেতে পারেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement