জনধনের মূল কারিগর ইন্দিরাই, বলছেন অধীর। ছবি: অলংকরণে তিয়াসা দাস।
একটু ফিরে দেখা দরকার।ঠিক ৫০ বছর আগের একটা তারিখের দিকে তাকানো দরকার।সেই তারিখটা আজও সাধারণ ভারতবাসীর জীবনে কতটা প্রাসঙ্গিক, আগামী ৫০ বছর ধরেও কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে, বুঝে নেওয়া জরুরি।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী একটা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিলেন দেশে।দেশের ১৪টি ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ ঘটিয়েছিলেন ইন্দিরা।প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সেই পদক্ষেপ গোটা জাতির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সে দিন।
ইন্দিরা গাঁধী ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যন্ত ভারতে ব্যাঙ্ক ছিল ব্যক্তি মালিকানার। ব্যাঙ্কের উপরে সাধারণ মানুষের কোনও অধিকার ছিল না। কয়েকটা মাত্র পরিবারের দখলে ছিল সব কিছু।ব্যাঙ্কের উপরে সাধারণ মানুষের যে অধিকারটা আজ আমরা দেখি, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ওই জাতীয়করণের মাধ্যমেই। কোনও ছোটখাটো অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়, আবার বলছি, ইন্দিরা গাঁধীর ওই একটা পদক্ষেপ ভারতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের সূচনা করে দিয়েছিল।ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যক্তির সম্পত্তিকে তিনি সাধারণের সম্পত্তিতে পরিণত করেছিলেন।
সব কিছু খুব মসৃণ ভাবে হয়ে গিয়েছিল, এমনটা কিন্তু নয়।ইন্দিরা গাঁধীর প্রবল সমালোচনা করেছিলেন অনেকে।অনেক রকম ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।যাঁরা ব্যাঙ্কের মালিক ছিলেন, তাঁরা আদালতে গিয়েছিলেন।কিন্তু কোনও কিছুই টলাতে পারেনি ইন্দিরা গাঁধীর সিদ্ধান্তকে।সেই সুকর্মের ফল আমরা আজ ভোগ করি, গোটা দেশ ভোগ করে।ব্যাঙ্ক পরিষেবার মাধ্যমে ভারতবাসী আজ যত রকম সুযোগ-সুবিধা পান, সে সবই সম্ভব হয়েছে ৫০ বছর আগে ইন্দিরা গাঁধীর নেওয়া ওই পদক্ষেপটার উপরে দাঁড়িয়ে।
ইন্দিরা গাঁধী
আজ দেশে যে সরকার রয়েছে, তার কর্তারা জনধন যোজনা নিয়ে বড়াই করেন, ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন বা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের কথা বলেন।কিন্তু জনধন যোজনায় কী হয়েছে? শুধু কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টখোলানো হয়েছে।তা নিয়েই হইহইয়ের অন্ত নেই।আর ইন্দিরা গাঁধী কী করেছিলেন? ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদকে রাতরাতি সাধারণ জনতার সম্পদে পরিণত করেছিলেন।ব্যক্তিগত ধন রাতারাতি হয়ে উঠেছিল জনধন।
আরও পড়ুন: ছবির মতো সামনে এল কত কত বাদলবেলা
ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন বা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ শুরু হয়েছিল ৫০ বছর আগের সেই তারিখটায়।রাস্তা দিয়ে যে অগণিত বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি ছুটছে রোজ, সে সবের অনেকগুলোর গায়েই দেখবেন লেখা রয়েছে, ‘হাইপোথিকেটেড টু’অমুক ব্যাঙ্ক বা তমুক ব্যাঙ্ক।গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায় বা গলিতে যে অটোরিকশা বা টোটো বা রিকশা চলে, সে সবের গায়েও ওই কথাটা লেখা থাকে।অর্থাৎ যে ব্যাঙ্কের নাম লেখা রয়েছে, সেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ওই বাস বা ওই টোটো কেনা হয়েছে।অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ এটাকেই বলে।বড় ব্যবসায়ী থেকে গ্রামীণ রিকশাচালক— ব্যাঙ্ক পরিষেবায় সবার সমান অধিকার।এটা কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে? সম্ভব হচ্ছে ইন্দিরা গাঁধীর সেই বৈপ্লবিক পদক্ষেপটার কারণে।ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের সুফল তাই ৫০ বছর পরেও ইন্দিরা গাঁধীর প্রতি শ্রদ্ধায় আমাদের অবনত করে।
(লেখক লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা)