দৌরাত্ম্যের বন্দোবস্ত

বাম জমানা হইতেই ইহার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। বেশির ভাগ অটো ইউনিয়ন শাসক দলের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় চালকদের অধিকাংশই জানেন পুলিশ-প্রশাসনকে তোয়াক্কা করিবার দরকার নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ২৩:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলিকাতা শহরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করিয়া অটো নামক যানটির বেপরোয়া যাতায়াত এবং যথেচ্ছ ভাড়াবৃদ্ধির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি তাহার সঙ্গে জুড়িয়াছে বেলাগাম দুর্ব্যবহারের অভিযোগও। সম্প্রতি এক তরুণীকে চড় মারার অভিযোগ এক অটোচালকের বিরুদ্ধে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাঁহার গন্তব্যে পৌঁছাইবার জন্য ওই তরুণী নির্দিষ্ট রুটের অটোয় উঠিতে চাহিলে অটোচালক অসম্মত হন, এবং বচসার মধ্যেই তিনি তরুণীকে চড় মারেন। এই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই কামারহাটির কাছে অসুস্থ বাবা ও ছেলেকে মারধরের অভিযোগও উঠিয়াছে কতিপয় অটোচালকের বিরুদ্ধে। ‌ঘটনাগুলিকে বিচ্ছিন্ন বলা যাইবে না। প্রতি দিনই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত হইতে অটোচালকদের নানা দৌরাত্ম্যের খবর সংবাদ শিরোনাম হয়। অথচ প্রশাসনকে নালিশ করিয়া লাভ হয় না। রাজ্যের প্রশাসনে দৃশ্যত একটি বিশদ বন্দোবস্ত আছে যাহাতে অটোচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা যায় না।

Advertisement

এই বন্দোবস্ত নূতন নহে, তৃণমূল সরকারের নিজস্ব উদ্ভাবনও নহে। বাম জমানা হইতেই ইহার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। বেশির ভাগ অটো ইউনিয়ন শাসক দলের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় চালকদের অধিকাংশই জানেন পুলিশ-প্রশাসনকে তোয়াক্কা করিবার দরকার নাই। জানেন, অপরাধ করিলেও স্থানীয় নেতাদের স্নেহ হইতে তাঁহারা বঞ্চিত হইবেন না। এবং ভোট আসিলে এই স্নেহচ্ছায়ার উপযুক্ত প্রতিদান তাঁহারা দিবেন। এই দেওয়া-নেওয়ার মায়াবি সমীকরণের মধ্যে যদি যাত্রীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি যায়, তাহাতে স্বাভাবিক ভাবেই কাহারও মাথাব্যথা নাই। প্রচারমাধ্যমের হইচই এবং তজ্জনিত পুলিশি তৎপরতা তো কিছু দিনের ব্যতিক্রম, অব্যবস্থার বন্দোবস্ত আবার ফিরিতে বিশেষ সময় লয় না। চালকদের গুন্ডাগিরি রুখিতে অটোস্ট্যান্ডে অভিযোগের বাক্স ইত্যাদি দুই-চারিটি ব্যবস্থা যদি-বা দেখা যায়, যদি-বা কোনও ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক নেতা ইউনিয়নগুলিকে সতর্ক করেন, বৃহত্তর মিথোজীবিতার তাগিদে সে সব দ্রুত হারাইয়া যায়। স্পষ্টতই, যত ক্ষণ না ভোটবাক্সের তাগিদে নেতাদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় কমিবে, এই জুলুমবাজি চলিবে।

নাগরিক সমাজও তাই জুলুম মানিয়াই লইয়াছেন। অটোচালকদের দুর্ব্যবহার এমনই স্বাভাবিক ঘটনায় পর্যবসিত যে, পাশের যাত্রীটি নিগৃহীত হইলেও অন্যরা বিচলিত হন না। যাদবপুরের ঘটনাটিতেও প্রত্যক্ষদর্শীরা নিগ্রহের প্রতিবাদ করেননি। বস্তুত, অটোচালকদের দুর্বিনীত মনোভাব না জনসাধারণের এই নিস্পৃহতা, কোনটি অধিক ভয়ের, বলা মুশকিল। নিস্পৃহতার অর্থ তো নাগরিক কর্তব্যের বিস্মরণ, এবং আত্মকেন্দ্রিকতার প্রস্ফুরণ। পুলিশ-প্রশাসন যেখানে ব্যর্থ, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে নিমরাজি, সেখানে দীর্ঘ দিনের অনাচার রুখিতে জনসাধারণই ভরসা হইবার কথা ছিল। প্রসঙ্গত, কিছু দিন পূর্বে উল্টোডাঙায় অটোর জুলুম রুখিতে যাত্রীদের সমবেত প্রতিবাদ কিন্তু প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে। যে শহরে গণপরিবহণ প্রয়োজনের তুলনায় মোটেই পর্যাপ্ত নয়, সেখানে অটোর মতো পরিবহণমাধ্যম লইয়া নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক সমাজ, উভয়েরই আর একটু সংবেদন জরুরি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement