মুহুরি হিসাবে যখন প্রথম কাজে যোগ দিই তখন এবং তার পরে টাইপিস্ট হিসাবে যখন কাজ করছি, তখন দেখতাম বিভিন্ন মানুষ আমাদের কাছে আসতেন।...’ আদালত জীবনের অজানা সব তথ্য, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সূত্রে উঠে এসেছে মলয় মণ্ডলের কলমে: গাছতলার টাইপিস্ট/ আদালত জীবনের অজানা কথা (গাঙচিল, ২৭৫.০০)। গাঙচিল থেকেই দু’টি দেশভাগের স্মৃতি: গত শতকের কলকাতা তথা বাঙালি সমাজের অন্তরঙ্গ স্মৃতি-আখ্যান ছায়া দে’র ঝিনেদা, শ্যামবাজার এবং ছাপান্ন বছর (২৭৫.০০)। ছেচল্লিশের দাঙ্গা থেকে ওপারের ঘরবাড়ি ছেড়ে এপারে আসার ইতিবৃত্ত। অন্যটি পশ্চিম থেকে পূর্ববঙ্গে যাত্রা করা মুসলিম মানুষজনের দেশহারা-স্মৃতির সংকলন পশ্চিম থেকে পূর্ববঙ্গ/ দেশবদলের স্মৃতি (সম্পা: রাহুল রায়। ৩৫০.০০)।
সূত্রধর-এর দু’টি গ্রন্থিত স্মৃতি। রবীন্দ্রনাথ-শরত্চন্দ্র থেকে প্রফুল্লকুমার সরকারের কথা মন্মথনাথ ঘোষের স্মৃতি সুরভি-তে (সম্পা: অশোককুমার রায়। ২৫০.০০)। বিখ্যাত মানুষজনের সূত্রে উনিশ-বিশ শতকের বাঙালির মনন-চিন্তনেরও প্রকাশ। ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্মপ্রচেষ্টার ইতিহাস তাঁর দু’টি আত্মজীবনীমূলক রচনা সংকলনে: আভিধানিকের আত্মকথা (সম্পা: দেবাঙ্গন বসু। ১০০.০০)।
কথাশিল্পীরা যখন পেশার সূত্রে তীব্র টানাপড়েনের ভিতর দিয়ে কাটিয়েছেন তাঁদের আমলাজীবন, তখন কত-না অম্লতিক্ত মধুর অভিজ্ঞতা। বিচিত্র পরিস্থিতি ও মানুষ, রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের হাঁড়ির খবর তপন বন্দ্যোপাধ্যায় আর ভগীরথ মিশ্রের আমলাগাছি-তে (দে’জ, প্রতিটি ৩০০.০০)।
বড় হয়েছেন ইন্দিরা দেবীচৌধুরাণীর স্নেহচ্ছায়ায়, আর অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এস্রাজের তান শুনতে-শুনতে। নিসর্গের নিবিড় সান্নিধ্য আর ভিনদেশি সহপাঠী। সৌরকুমার বসু শান্তিনিকেতনে তাঁর পাঠভবনের স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন শান্তিনিকেতন ও নকশাল আমল (প্রিটোনিয়া, ২০০.০০)।
‘ভাবি নাই রবীন্দ্রবিহীন জগত্ দেখতে হবে।’ রবীন্দ্রনাথের বিদায়ের পরে লিখেছিলেন সুহৃত্ রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। কবির সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন লেখার সংকলন রবীন্দ্রনাথ (সম্পা: অর্ণব নাগ। সূত্রধর, ১৫০.০০)। পরিশিষ্টে ক্ষিতিমোহন সেনের ‘রবীন্দ্রনাথ ও রামানন্দবাবু’ অতি উত্কৃষ্ট।
গাঁধীবাদী নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের অনমনীয় চরিত্র চেনা যাবে তাঁর জীবন-স্মৃতির ভূমিকা-য় (তিতাস, ১৫০.০০)। কেবল ব্যক্তিস্মৃতি নয়, দ্রুত বদলে-যাওয়া রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিলচিত্রও।
‘এই বয়সে একটু ঘুম ঘুম পায়। কিন্তু... কাজই আমাকে জাগিয়ে রাখে।’ নব্বইয়ে দাঁড়িয়ে বলেন কে জি সুব্রহ্মণ্যন। তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাত্কার-এ (দেবভাষা, ১০০.০০) শান্তিনিকেতনে নন্দলাল-বিনোদবিহারী-রামকিঙ্করের সঙ্গে শিল্পগত সম্পর্কের কথা, এবং পরাধীন ভারতে কমিউনিস্ট ও গাঁধীজির আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কথা।
‘মন আসল পাখিরে’— এমন গান গাইতেন আব্বাসউদ্দীন। সুখবিলাস বর্মার গানের পাখি আব্বাস (সোপান, ৩০০.০০) ‘ওই মহত্ সংগীতগুণী বিষয়ক একটি কোষগ্রন্থ বিশেষ।’— পবিত্র সরকার জানিয়েছেন বইটির ভূমিকা-য়।
বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ-এর দু’টি স্মৃতিকথা। কবিতাকে জড়িয়ে নিভৃত আত্মকথন অনুরাধা মহাপাত্রের রুধিরপাত (১৫০.০০)। চলচ্চিত্র-নাটক-যাত্রা-সঙ্গীতের শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে আশিসতরু মুখোপাধ্যায়ের তারাদের কথা (২০০.০০)।
মেক্সিকোর শিল্পী ফ্রিদা কাহলো-র ব্যক্তিগত জগত্ কিংবা আয়নায় নিজেকে দেখা। ফ্রিদা কাহলো/ কিছু কথা ও ডায়েরির পাতা (রচনা অংশ ও অনুবাদ: জাকিয়া রহমান ঋতা। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, পরি: নয়া উদ্যোগ, ৫০০.০০)। শিল্পকলার ইতিহাসে নারীবাদী চর্চার আকরগ্রন্থ।
‘দ্বিমাসিক করার পরিকল্পনা অবশ্য নির্মাল্যর।’— নির্মাল্য আচার্য ও ‘এক্ষণ’ (১৯৬১-’৯৫) প্রসঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের দু’জনের সম্পাদনায় একদা এই পত্রিকার জন্ম, পরে নির্মাল্য একাই সম্পাদনা করতেন। তাঁর প্রয়াণের পর তাঁকে নিয়ে ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকার ক্রোড়পত্রের রচনাগুচ্ছে ছিল অশোক মিত্র শঙ্খ ঘোষ অশ্রুকুমার সিকদার প্রমুখের লেখা। একত্রে বেরল এক্ষণ ও নির্মাল্য আচার্য (সম্পা: অনিল আচার্য। অনুষ্টুপ, ২০০.০০)।