চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

অবলীলায় তুলে আনেন নারীর দুঃখ ও আনন্দ

সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল মহিলা শিল্পীদের সম্মেলক প্রদর্শনী। দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ।মহিলা শিল্পীদের একমাত্র সংগঠন ‘দ্য গ্রুপ’। সম্ভবত সমগ্র ভারতেই একমাত্র। শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। তখন মীরা মুখোপাধ্যায়, শানু লাহিড়ী, করুণা সাহার মতো শিল্পীরা এই দলের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তী কালে অনেকে দল ছেড়েছেন, নতুন শিল্পী যোগ দিয়েছেন। দলের কার্যক্রম অব্যাহত থেকেছে। শিল্পকলার ক্ষেত্রে পুরুষ-নারী এরকম লিঙ্গ-ভিত্তিক বিভাজনের যৌক্তিকতা হয়তো নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০০:০১
Share:

মহিলা শিল্পীদের একমাত্র সংগঠন ‘দ্য গ্রুপ’। সম্ভবত সমগ্র ভারতেই একমাত্র। শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। তখন মীরা মুখোপাধ্যায়, শানু লাহিড়ী, করুণা সাহার মতো শিল্পীরা এই দলের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তী কালে অনেকে দল ছেড়েছেন, নতুন শিল্পী যোগ দিয়েছেন। দলের কার্যক্রম অব্যাহত থেকেছে। শিল্পকলার ক্ষেত্রে পুরুষ-নারী এরকম লিঙ্গ-ভিত্তিক বিভাজনের যৌক্তিকতা হয়তো নেই। কিন্তু ঘরে বাইরে জীবনের নানা দায় বহন করতে হয় বলে মেয়েদের ক্ষেত্রে নিমগ্ন শিল্প-সাধনায় অনেক সময়ই ব্যাঘাত ঘটে। একে প্রতিহত করতেই ৩১ বছর ধরে এই দলের শিল্পীরা কাজ করে যাচ্ছেন, এতে নিষ্ঠার পরিচয় থাকে।

Advertisement

সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল তাঁদের ৩১তম বার্ষিক প্রদর্শনী। এতে ১৪-জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। সকলে অবশ্য এই সীমায় সীমিত থাকেননি। ভাবনায় ও প্রয়োগে তাই বৈচিত্র এসেছে। দুর্বলতা আছে কারও কারও কাজে। যথেষ্ট অনুশীলনের অভাবও রয়েছে কোথাও। তবু সবটা মিলিয়ে একটা সুরের ঐকতান।

নীলিমা গোয়েল-এর ভাস্কর্যে আঙ্গিকগত স্বাতন্ত্র্য উল্লেখযোগ্য। অভিব্যক্তিবাদী ত্রিমাত্রিক আয়তনের মধ্যে তিনি বর্ণিল রেখায় কাজ করেছেন। ‘ফ্যামিলি-১’ ভাস্কর্যে পুরুষ নারী শিশু দাঁড়িয়ে থাকে নৈর্ব্যক্তিক অভিব্যক্তিতে, যা অনেকটা স্তব্ধতা সঞ্চার করে। অবয়বের ভিতর যখন বর্ণিল রেখার অলঙ্করণ আসে, তখন তা এক ধরণের জঙ্গমতার আভাস আনে। তাঁর এই আঙ্গিকটির মধ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দেয়ালে ঝুলন্ত কাঠের ফ্রেমে বিভিন্ন ধাতব বস্তু সংস্থাপন করে তিনি যে কাজটি করেছেন, সেটি অবশ্য তত নন্দনসমৃদ্ধ হতে পারেনি। বনশ্রী খান তাঁর কয়েকটি ব্রোঞ্জ-ভাস্কর্যে নিসর্গ নিয়ে কাজ করেছেন। ‘টু অ্যান্ড ফ্রো’ রচনাটিতে বনের আভাস এনেছেন। পাশ দিয়ে পথ। প্রচলিত ধারার মধ্যে নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি আছে।

Advertisement

শ্যামশ্রী বসু প্রবীণতমা শিল্পী। নিসর্গ থেকে ক্রমান্বয়ে বিমূর্ততার দিকে গেছেন তিনি। বর্ণের ঐকতানে গড়ে ওঠা সেই বিমূর্তায়নকে অভিব্যক্তিবাদী বিমূর্ততার অন্তর্গত বলে মনে করা যায়। ক্যানভাসের উপর অ্যাক্রিলিকে তিনি এঁকেছেন। ‘ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা’ শীর্ষক রচনাটিতে ফুল বা প্রকৃতির অন্য কোনও অনুষঙ্গ আলাদা করে শনাক্ত করা যায় না। বর্ণের সঙ্গীতময় ঝংকারটিই আবিষ্ট করে রাখে।

মধুশ্রী মুছল কাগজের উপর মিশ্র-মাধ্যমে নিরবয়ব ছবিই এঁকেছেন। উদ্ভাসিত আলোকিত বর্ণের সঙ্গে স্তব্ধ আঁধারলীন বর্ণের নাটকীয় সংঘাত তৈরি করেছেন। রেখায় গড়া কিছু জ্যামিতিক ক্ষেত্র সংস্থাপিত হয়েছে তাঁর ভিতর। সংবৃত নাটকীয়তা তাঁর বিমূর্তায়নের একটি বৈশিষ্ট্য। ভারতী চৌধুরী-র মোনোপ্রিন্টের ছবিতেও অবয়বের সামান্য আভাসকে আবৃত করে নিরবয়ব প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁর বুনোটের বিন্যাস ভাল। যদিও অভিব্যক্তিতে আরও একটু গভীরতার প্রয়োজন ছিল। একই কথা বলা যায় সান্ত্বনা দত্তের ছবি সম্পর্কেও। অবয়বকে তিনি অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকে বিশ্লিষ্ট করেছেন। পূর্ণ নিরবয়বের দিকে যাননি। সেই বিশ্লিষ্ট অবয়বের ভিতর থেকে মানবী অস্তিত্বের নিহিত সংকট পরিস্ফুট হয়। সীমা ঘোষ ভট্টাচার্যের বিমূর্ততার ধরন স্বতন্ত্র। তাঁর ক্যানভাসের শিরোনাম ‘বিয়ন্ড দ্য ডার্কনেস’। অন্ধকার একটি ঘরের মেঝে ও দেয়ালের আভাস অনুভব করা যায়। তার ভিতর এসে পড়েছে আয়তাকার এক ঝলক আলোকরশ্মি। বিমূর্তায়নের এক স্বতন্ত্র ধরন তৈরি করে। রীনা মুস্তাফির ক্যানভাসের উপস্থাপনাকেও নিসর্গ থেকে বিমূর্তায়িত বলা যেতে পারে।

অঞ্জলি সেনগুপ্ত আদিমতা-সম্পৃক্ত পুরাণ-প্রতিমা নিয়ে কাজ করেন। এই আঙ্গিকে আরও পরিশীলনের সুযোগ আছে তাঁর। আরতি দাস অভিনব এক বুনোট-পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রকাশে স্বাতন্ত্র্য এনেছেন। ‘কালারফুল ফিশ’ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মহুয়া ভট্টাচার্য অজস্র পাখির উপস্থাপনা দিয়ে নিসর্গ এঁকেছেন। তাঁর অভিব্যক্তির উপস্থাপনাও খুবই স্বাতন্ত্র্যময়। নারীর আনন্দ ও দুঃখকে নানাভাবে উপস্থাপিত করেছেন মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়, মিনতি নাথ ও সুদেষ্ণা দাস। তাঁদের ক্ষেত্রেও আরও পরিশীলনের সুযোগ রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement