গিরিশ কথা
সম্পাদক: ব্রাত্য বসু
৪০০.০০, মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র
সুকান্ত চৌধুরী খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন, গিরিশচন্দ্রের অনুবাদ বরাবর পাঠকদের মুগ্ধ করেছে, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে উৎপল দত্ত সকলকেই। শেক্সপিয়রের সঙ্গে বাঙালির যোগ বরাবরই কেতাবি, শেক্সপিয়রের নাটকের একের পর এক যে সব সংস্করণ বেরত, গিরিশচন্দ্র সেগুলি সংগ্রহ করে পড়তেন। ‘‘গিরিশচন্দ্রের ম্যাকবেথ-কে অনুবাদ বা অনুসরণ, অর্থাৎ আদতে পরাশ্রয়ী রচনা হিসাবে না দেখে দেখা উচিত একটি স্বকীয় নতুন সৃষ্টি হিসাবে, যার উদ্দেশ্য মূল ইংরেজির গঠন ও উপাদানগুলি বাংলায় রূপান্তর করে বাংলা ভাষা ও বাংলা নাটকের নতুন এক সম্ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলা।’’ সুকান্তবাবু লিখেছেন ‘গিরিশচন্দ্রের ম্যাকবেথ’ নিয়ে। আবার স্বপন চক্রবর্তী তাঁর রচনা শেষ করেছেন ভাববার মতো একটি বিষয় উস্কে দিয়ে: ‘‘হয়তো, গিরিশচন্দ্র নিজে যাই মনে করে থাকুন, তাঁর লোকযাত্রা-ঘেঁষা পথই বাংলা থিয়েটারের ভবিষ্যতের পথ।’’ গিরিশচন্দ্র ঘোষ-কে (১৮৪৪-১৯১২) নিয়ে এমন নির্মোহ অথচ বহুস্তরীয় ভাবনার গ্রন্থ এর আগে চোখে পড়েনি, বড় অভাব ছিল এ ধরনের সঙ্কলনের। বাঙালির আধুনিক সংস্কৃতির চর্চায় গিরিশচন্দ্রের মূল্যায়ন কতখানি জরুরি, সে কথার পাশাপাশি নিজস্ব নিবন্ধে ব্রাত্য বসু লিখেছেন, কোন ক্রান্তদর্শিতায় গিরিশচন্দ্র ‘‘থিয়েটারের প্রসার গোটা বাংলাদেশে ব্যাপ্ত করতে চাইছিলেন।’’ তাঁকে নিয়ে এ-গ্রন্থে এক দিকে যেমন লিখেছেন মনোজ মিত্র বিভাস চক্রবর্তী অশোক মুখোপাধ্যায়, অন্য দিকে তেমন বিষ্ণু বসু প্রভাতকুমার দাস ভবেশ দাশ আশীষ লাহিড়ী অসীম সামন্ত প্রমুখ। সৃজনপঞ্জি-তে গিরিশচন্দ্রের সৃষ্টির স্বাক্ষর। দুর্লভ ঐতিহাসিক চিত্রাবলি। মুদ্রণ পারিপাট্যে বিরল।
সূর্য গেল অস্তাচলে
সঙ্কলক: অনির্বাণ রায় ও কালাচাঁদ শর্মা
৩০০.০০, বর্ণময় (পরি: দে’জ)
‘‘বেলা তিনটের সময় একদল অচেনা লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে নিমেষে আমাদের সামনে থেকে সেই বরবেশে সজ্জিত দেহ তুলে নিয়ে চলে গেল। যেখানে বসেছিলাম সেইখানেই স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। শুধু কানে আসতে লাগল— ‘জয় বিশ্বকবির জয়, জয় রবীন্দ্রনাথের জয়, বন্দেমাতরম্।’’ রবীন্দ্রপ্রয়াণ দিবসের (৭ অগস্ট ১৯৪১) স্মৃতিচারণ করছেন নির্মলকুমারী মহলানবিশ। অথচ রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন তাঁর দেহ যেন শান্তিনিকেতনের মাটিতে মিশে যায়। তা হল না। তবে কবির ইচ্ছানুযায়ী তাঁর শ্রাদ্ধবাসর আয়োজিত হয়েছিল শান্তিনিকেতনে, ছাতিমতলার পাশেই। জীবনময় রায় লিখেছেন সে দিন মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট জনতার ‘শ্রদ্ধাগম্ভীর নিবিড় স্তব্ধতা’র কথা। রবীন্দ্রপ্রয়াণের ৭৫ বছর পূর্তিকে স্মরণে রেখেই আলোচ্য সঙ্কলনটি তৈরি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের শেষ রোগশয্যার দিনগুলি, শান্তিনিকেতন ছেড়ে শেষ বারের মতো কলকাতায় যাত্রা, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অস্ত্রোপচার ও প্রয়াণ, তার পর সারা পৃথিবী থেকে অজস্র শোকবার্তা, নানা স্মরণ-অনুষ্ঠান, কবিতা ও গদ্যে স্মরণাঞ্জলি— এই বইয়ের বিভিন্ন অংশে যথাযথ উৎসনির্দেশ-সহ সযত্নে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে সমকালে ও পরবর্তীতে বইতে ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রচনা ও রচনাংশের ভিত্তিতে। আছে অনেক দুর্লভ ছবি ও নথিচিত্রও।
সৈনিক-চিত্রকর নরেন্দ্রনাথ মল্লিক
জ্যোতিপ্রসাদ রায়
৪৫০.০০, দরগা রোড
সৈনিক-কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা সবারই জানা। কয়েক বছর আগে সৈনিক-লেখক বরেন বসুর রচনাবলি সম্পাদনা করে তাঁকে পাঠকসমাজে ফিরিয়ে এনেছিলেন জ্যোতিপ্রসাদ রায়। এ বার তাঁরই উজ্জ্বল উদ্ধার সৈনিক-চিত্রকর নরেন্দ্রনাথ মল্লিক (১৯১০-৮৫)। শুধু কি তাই, নরেন্দ্রনাথ ছিলেন সুলেখক, প্রকাশক এমনকি প্রচ্ছদশিল্পীও। জন্মশতবর্ষ অনেক দিনই অতিক্রান্ত, তাঁর ছবি বা লেখা সবই আজ দুষ্প্রাপ্য। স্কুলের পড়া শেষ করেই ভর্তি হন ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটিতে, শিল্পকলায় তাঁর দীক্ষা অবনীন্দ্রনাথের কাছে। গগনেন্দ্রনাথ, নন্দলাল, অসিত হালদারের সান্নিধ্যও পেয়েছেন তিনি। বরেন্দ্রনাথ বসু, নীরদ মজুমদার, কমলকুমার মজুমদার ও নরেন্দ্রনাথ মিলে গড়ে তোলেন সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র ‘বনীকন’। প্রকাশিত হয় ‘উষ্ণীষ’ পত্রিকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪২) জীবনদেখার কৌতূহলে বরেন-নরেন যোগ দেন ব্রিটিশ বাহিনীতে, যেতে হয় কোহিমা-সীমান্তে। ফিরে এসে দেশজ শৈলীর সঙ্গে পাশ্চাত্য ঘরানার যোগ ঘটিয়ে নরেন্দ্রনাথ তাঁর ছবি আর স্কেচে ফুটিয়ে তুললেন আন্দোলিত দেশকাল, সাধারণ মানুষের জীবন-বাস্তব। সমকালে অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। আজও তাঁর ছবি রয়েছে প্যারিসের লুভ্র ও লন্ডনের রয়্যাল আর্ট গ্যালারিতে, এ দেশের নানা সংগ্রহে তো বটেই। বেলতলা গার্লস স্কুলে শিল্পশিক্ষকতা করেছেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁর ছবির প্রতিটি পর্যায় নিয়ে এই বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন জ্যোতিপ্রসাদ। সংযোজিত হয়েছে তাঁর চিত্রকলার বহু নিদর্শন, তাঁর লেখা একটি শিল্পশিক্ষার বই, কয়েকটি অগ্রন্থিত প্রবন্ধ ও কবিতা।