প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর
জীবন সর্দার
৬০০.০০, ৯ঋকাল
“ওরা আছে বলে আমি আছি। আমরা আছি।” আর কত অপচয়ের পর মানুষ বুঝতে পারবে এই গভীর সত্য কথা?
প্রকৃতির কাছে গিয়ে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের পথ দেখিয়েছিলেন জীবন সর্দার। ১৯৬১ সাল থেকে তৃতীয় পর্যায়ের সন্দেশ পত্রিকায় প্রকৃতি নিয়ে এই মনোরম আলোচনা ধারাবাহিক ভাবে গাঁথা হত প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর শিরোনামে। তারই একটি নির্বাচিত সঙ্কলন প্রকাশ করে ঌঋকাল প্রকাশনা আমাদের শ্রদ্ধাভাজন হলেন।
প্রাণী ও প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ জীবন সর্দার এই কাজের নির্দেশ পেয়েছিলেন আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে। সন্দেশ পত্রিকার পাতায় এই কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন সত্যজিৎ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। আর এখন ‘এই মাটি, পাহাড়, জল, গাছ, পোকা, মাছ, হাওয়া, রোদ, পশু-পাখিরা... আর আছে কয়েকজন—কাঠুরে, জেলে, মালি, মাঝি ও চাষিরা’— এদের তিনি উৎসর্গ করলেন বইটি।
এটুকু দেখলেই বোঝা যায় তিনি বিশেষজ্ঞের মন নিয়ে লিখছেন না। প্রকৃতির প্রতিটি কণার সঙ্গে তাঁর নিবিড় আত্মীয়তা। ছোট ছোট শিক্ষানবিশের দল নিয়ে যাচ্ছেন পশুপাখি, পোকামাকড়, গাছ-লতা ইত্যাদির খবর জোগাড় করতে। তুচ্ছ প্রাণকেও অসীম মায়ায় বিশ্লেষণ করতে শিখছে এরা! শামুকখোল, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, খঞ্জন পাখি, পিঁপড়ের দল, মা-শামুক আর শিশু-শামুক থেকে জাভা দ্বীপের গন্ডার।
ছোটদের সঙ্গে আমরাও তাই ঘুরি জলপথে, স্থলপথে, রেললাইন ধরে, বনে, নদীতে, পাহাড়ে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আমেরিকার উইসকনসিন প্রদেশের নদী, হিমালয়ের তিনটি শাখা থেকে পূর্বঘাট পাহাড়ের শেষ ভাগে বিলিগিরি-রঙ্গনা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য বা পুরুলিয়ার মুরাডি পাহাড়ের গুহা, কোথায় না তিনি নিয়ে চলেন আমাদের। না গিয়েও গল্প শোনান অস্ট্রেলিয়ার জিবার মরুভূমির, যেখানে হাওয়া আর বালির ঘষায় পাথরখণ্ড গোল-গোল মসৃণ; কিংবা চিনের সিচুয়ান প্রদেশ, যেখানে ‘গোরাল’ নামের ছাগল চরে।
চলে যাওয়া শতকে চল্লিশ বছর ধরে এগুলি প্রকাশিত হয়েছিল সন্দেশ পত্রিকায়। এই শতকে তা যে আবার কিশোরদের কাছে ফিরে এল, এ শুধু আনন্দদায়ক নয়, প্রতীকীও কি? এতে গেঁথে রইল সতর্কবাণী: “সভ্যতা রাখার জন্য যে হারে আমরা প্রকৃতিকে নষ্ট করছি, এভাবে চললে, সভ্যতা কেন, মানুষই শেষে লোপ পাবে।”
আর এন কাও: জেন্টলম্যান স্পাইমাস্টার
নীতিন গোখলে
৫৯৯.০০, ব্লুমস্বেরি
গোয়েন্দাকে দেখতে কেমন? এই প্রশ্নের উত্তরে রামেশ্বর নাথ কাওয়ের ছবি মনে পড়বে না। কারণ সহজ— আর এন কাওয়ের ছবি পাওয়া দুষ্কর। ভারতে সরকারি ইন্টেলিজেন্স-এর আদি পুরুষ তিনি, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং অর্থাৎ র’-এর প্রতিষ্ঠাতা। পেশার শর্ত মেনেই পেশাদারি জীবনের তথ্য গোপন রেখেছিলেন কাও। সেই আর্কাইভস খুলে দিল র’। সাংবাদিক নীতিন গোখলে মূলত সেই আর্কাইভস-এর ভিত্তিতেই লিখেছেন ‘জেন্টলম্যান স্পাই-মাস্টার’ বইটি। গোয়েন্দা উপন্যাসে টানটান উত্তেজনা আশা করলে হতাশ হতে হবে। বরং, কাওয়ের গল্পে টের পাওয়া যায় অন্য আখ্যান— কী ভাবে সরকারি দীর্ঘসূত্রতাকে অতিক্রম করে, অন্যান্য খুচরো বাধাকে পাশ কাটিয়ে কাজ করতে হয় বাস্তবের গোয়েন্দাদের।
মূল তথ্যসূত্র কাওয়ের আর্কাইভস, এবং বহু ক্ষেত্রেই লেখক যেহেতু অন্য সূত্র থেকে সেই তথ্য যাচাই করে নেননি, ফলে বিশ্বাসযোগ্যতার একটা সমস্যা থেকেই যায়। কিন্তু, তার চেয়েও বড় সমস্যা হল, লেখক যদি তাঁর কাহিনির নায়কের প্রতি তুমুল শ্রদ্ধাকে লেখায় প্রকাশ করে ফেলেন, তবে আর আখ্যানটি জীবনী হয় না, প্রশস্তি হয়ে দাঁড়ায়।