ইশকুল ঘরগুলি জীবন্ত করে তুলল

আমরা দেখতে পেলাম দুষ্টুমিতে ভালো ছাত্র খারাপ ছাত্র কেউই কম যায় না, মারামারিতেও সবাই সমান ওস্তাদ, নতুন ছাত্র ভর্তি হলে পুরোনোরা কেউই পিছনে লাগার সুযোগ ছাড়ে না, মাস্টারমশাইয়ের মুদ্রাদোষ বা দুর্বলতা নিয়ে মজা করতেও সবারই সমান উৎসাহ।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০৯
Share:

সুবীর রায়চৌধুরী সংখ্যা
সম্পাদক: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
৪০০.০০
কোমল গান্ধার

Advertisement

সম্পাদনায় নিপুণতা তাঁকে প্রায় সম্পাদক হিসেবেই পরিচিত করে তুলেছিল, কিন্তু তাঁর কাজের পরিধি ছিল অপরিমেয়। বিবিধ বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা থেকে শুরু করে ছোটদের লেখা অবধি, সর্বত্রই ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ যাতায়াত, পাশাপাশি অনুবাদ, সর্বোপরি নিরন্তর গবেষণায় টের পাওয়া যেত তাঁর গভীর অনুসন্ধানী মন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অকালপ্রয়াত অধ্যাপক সুবীর রায়চৌধুরীকে (১৯৩৪-১৯৯৩) নিয়ে এই সঙ্কলনটিতে চেষ্টা করা হয়েছে তাঁর ‘‘ব্যক্তিত্ব ও কাজের প্রতিটি দিকেই তল্লাশ চালাতে। কিন্তু সেই সঙ্গে সবসময়ই মাথায় রাখা হয়েছে যত বেশি সম্ভব তাঁর নিজের লেখা ছাপার কথা।’’ জানিয়েছেন সম্পাদক। ‘সুবীর রায়চৌধুরীর নির্বাচিত রচনা’— একটি বিভাগই রাখা হয়েছে, তাতে যেমন যোগেশচন্দ্র বাগলকে নিয়ে লেখা, তেমনই মণীন্দ্রকুমার ঘোষকে নিয়েও। সুবীর লিখছেন, মণীন্দ্রকুমারকে দেখলে তাঁর মনে পড়ত: ‘‘বুদ্ধদেব বসুর ‘একটি জীবন’-এর নায়ককে। সেরকমই স্বধর্মে নিষ্ঠ, গৃহবদ্ধ কিন্তু গৃহবন্দী নন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি শিক্ষক হবেন ভেবেছিলেন কি না জানি না, তবে এই বৃত্তিকে তিনি আমরণ ভালোবেসেছিলেন। তাঁর কর্মক্ষেত্র বৃহৎ ছিল না এবং সেজন্যে কোনো আক্ষেপও তাঁর মধ্যে দেখিনি। আসলে কাজের ক্ষুদ্রত্ব-মহত্ব কর্মীর ওপরেই নির্ভর করে, কর্মের ওপরে নয়। তিনি কাজকে ভালোবেসেছিলেন— তার বিনিময়ে সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি আশা করেননি।’’ সুবীরের এই কথাগুলি তাঁর নিজস্ব নিষ্ঠ কর্মময়তা প্রসঙ্গেও প্রযোজ্য। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে নিয়ে এ-সঙ্কলনে শঙ্খ ঘোষ নবনীতা দেব সেন অমিয় দেব সৌরীন ভট্টাচার্য মীনাক্ষী দত্ত শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় রুশতী সেন প্রমুখের রচনাদি সে-সাক্ষ্যই বহন করে। আছে তাঁর গ্রন্থপঞ্জি ও রচনাপঞ্জিও। আর তাঁর নির্বাচিত রচনাদির মধ্যে এক দিকে ‘মার্কসবাদী রবীন্দ্র-সমালোচনার ইতিহাস’, অন্য দিকে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ নিয়ে আলোচনা: ‘‘পাগলা দাশুই প্রথম ইশকুল ঘরগুলি জীবন্ত করে তুলল। আমরা দেখতে পেলাম দুষ্টুমিতে ভালো ছাত্র খারাপ ছাত্র কেউই কম যায় না, মারামারিতেও সবাই সমান ওস্তাদ, নতুন ছাত্র ভর্তি হলে পুরোনোরা কেউই পিছনে লাগার সুযোগ ছাড়ে না, মাস্টারমশাইয়ের মুদ্রাদোষ বা দুর্বলতা নিয়ে মজা করতেও সবারই সমান উৎসাহ।’’

Advertisement

শিশির-সুবীরের সঙ্গে ভাষালাপ
মণীন্দ্রকুমার ঘোষ
৪০০.০০
প্যাপিরাস

মণীন্দ্রকুমার ঘোষ (১৮৯৮-১৯৮৯) ও শিশিরকুমার দাশের (১৯৩৬-২০০৩) পত্রালাপ শুরু হয় ১৯৭৭-এ, সেই চিঠিপত্রের একটি গুচ্ছ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’য়, নিত্যপ্রিয় ঘোষের সম্পাদনায়। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও বানান সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ চিঠিগুলির প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে যখন গ্রন্থিত করার সিদ্ধান্ত নেন প্রকাশক অরিজিৎ কুমার, তখন এ রকম আরও এক পত্রালাপ সংযোজনেরও প্রস্তাব আসে, ‘‘একই সময়কাল জুড়ে ওইরকমই ভাষালাপ চলেছিল মণীন্দ্রকুমার আর সুবীর রায়চৌধুরীর মধ্যেও। ভাবনাটিকে পূর্ণতর করবার গরজে সেগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়েছেন অভ্র ঘোষ।’’ জানিয়েছেন তিনি। আর নিত্যপ্রিয় জানিয়েছেন, ‘‘মণীন্দ্রকুমার ও শিশিরের রঙ্গকৌতুক করার স্বাভাবিক ক্ষমতা ছিল, ফলে তাঁদের আলাপ-আলোচনা ব্যাকরণ-বানান হলেও সরস হয়ে উঠত।’’ যেমন ১৯৭৯-র ২২ জানুয়ারি শিশিরকে এক চিঠিতে মণীন্দ্রকুমার লিখছেন ‘‘৮০ বৎসর পূর্তিতে রবীন্দ্রনাথকে যখন মহাত্মাজি আরও দীর্ঘায়ু কামনা জানিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ আশী বছর বাঁচাটাই ‘বেয়াদবি’ বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু অপারেশনের দেড় ঘণ্টা আগেও তিনি যে কবিতা রচনা করেছেন, তাকেও পণ্ডিতেরা উপেক্ষা করতে পারেন না।’’ একটি চিঠিতে মণীন্দ্রকুমারের ‘‘বানান স্থিতিশীল রাখার একমাত্র উপায় শব্দের উৎস সন্ধান।’’— এ-মন্তব্যের উত্তরে শিশিরকুমার প্রশ্ন তুলেছেন ‘‘বাংলা সংস্কৃত থেকে শব্দ নিয়েছে প্রচুর... কিন্তু বাংলাভাষা তো সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মে চলে না, কাজেই সেই নিয়ম মানবে কেন?’’ আবার সুবীর রায়চৌধুরীকে লিখেছেন মণীন্দ্রকুমার, ‘‘রবীন্দ্রযুগে এক সত্যেন দত্ত ছাড়া নূতন শব্দ সৃষ্টির প্রবণতা খুব বেশী লেখকের মধ্যে দেখি নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement