Book Review

হারিয়ে যাওয়া বই ফিরে এল বাংলা অনুবাদে

তারনাথের এই বই প্রায় দু’শো বছর হারিয়ে গিয়েছিল। পোতালা প্রাসাদের স্রষ্টা, প্রবল প্রতাপী পঞ্চম দলাই লামা তখন জোনাং ও কর্মপা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ০৬:৪৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ভূমিকায় জানা গেল, অতিমারির বন্ধদশায় এই বঙ্গানুবাদের সিংহভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তারনাথের বইটি ১৯৯০-এ লামা চিনপা ও অলকা চট্টোপাধ্যায়ের ইংরেজি অনুবাদে বেরিয়েছিল। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকাঋদ্ধ অনুবাদ, তারানাথ’স হিস্ট্রি অব বুদ্ধিজ়ম ইন ইন্ডিয়া। তুলনায় এই শিরোনামটি ভাল। বুদ্ধের দেশ ভারত তিব্বতি ভাষায় গ্যগর, সেখানকার লোকেরা গ্যগরপা। ইন্ডিয়া, বৌদ্ধধর্ম ইত্যাদি শব্দ মধ্যযুগের তিব্বত জানত না। মহাযান, বজ্রযান নির্বিশেষে বৌদ্ধধর্ম তার কাছে সদ্ধর্ম। ১৫৭৫ সালে তিব্বতে জন্মানো তারনাথ জোনাং সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ। তিনি যখন ষোলো, ইষ্টদেবতা স্বপ্নে বলেছিলেন, কুড়ি বছর বয়সের আগে তিনি যদি লাদাখে পৌঁছন, বহু জীবকে নির্বাণের পথে পৌঁছে দিতে পারেন। অলকাদের বইয়ে আছে, টানা তিন মাস তারনাথের নাক দিয়ে রক্ত পড়ায় তিনি ভারতে আসতে পারেননি। তারনাথ আত্মজীবনীতে জানান, ভারতের দুই যোগী পূর্ণানন্দ ও পরমানন্দ তাঁর কাছে এসে দশ দিন ছিলেন। তাঁদের সৌজন্যেই তাঁর রামায়ণ-মহাভারত আত্মস্থ করা; কালচক্রতন্ত্র, যোগ নিয়ে পাণ্ডুলিপি তৈরি।

Advertisement

তারনাথ-প্রণীত সদ্ধর্মচিন্তামণি: ভারতবর্ষে বুদ্ধ-শাসনের ইতিহাসসটীক বাংলা অনু: প্রিয়ঙ্কু চক্রবর্তী

৬৭৫.০০

Advertisement

ধানসিড়ি

তারনাথের এই বই প্রায় দু’শো বছর হারিয়ে গিয়েছিল। পোতালা প্রাসাদের স্রষ্টা, প্রবল প্রতাপী পঞ্চম দলাই লামা তখন জোনাং ও কর্মপা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধ। ১৬৩৪-এ তারনাথের মৃত্যু, তাঁর সঙ্গেই জোনাং সম্প্রদায়ের লেখাগুলি হারিয়ে যায়, মঠে তারনাথের পাণ্ডুলিপির ব্লকও নষ্ট করে দেওয়া হয়। প্রায় দু’শো বছর পর রুশ পণ্ডিত ভাসিলেভের হাতে হারিয়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপিটি আসে। সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদ, বিশ্বজয়। প্রিয়ঙ্কু বাংলা ভাষায় প্রায় সাতশো টীকা দিয়েছেন, মহাযান ও মন্ত্রযান নিয়ে আধুনিক গবেষণার উল্লেখ করেছেন। সেখানেই বাংলা বইটির জিত।

ভারতীয় নারী: ফুটবল মাঠে

পৌলমী ঘোষ

৪০০.০০

অহর্নিশ

শিল্পসাহিত্যে, ক্রীড়াঙ্গনেও লিঙ্গবৈষম্যের অনুযোগ-অভিযোগ কখনও এতটাই সীমা অতিক্রম করে যে আমরা শিউরে উঠি। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের নজির অনেক, সমস্যা কিন্তু মেটে না। তবু প্রগতির ধারা থেমে থাকে না, শত বাধার মুখেও কেউ কেউ তাঁদের যাত্রা ও লক্ষ্য থেকে চ্যুত হন না। এমনই এক সংগ্রামমুখর বিবরণের দলিল বইটি। লেখিকা সমাজবিদ্যার ছাত্রী, ক্রীড়া বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষক, এআইএফএফ-এর সূত্রে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের ফিটনেস বিশেষজ্ঞ রূপেও কাজ করেছেন। সেই সূত্রে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা লেখা এই বইয়ে। বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ভারতীয় মেয়েরা যে ফুটবল মাঠে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করছেন, অবরোধের অচলায়তন ভেঙে এগিয়ে চলেছেন, পাঠক জানতে পারবেন সে কথা। খেলা বা ফুটবল উপলক্ষ মাত্র, সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের বঞ্চনার ছবিটিই জেগে ওঠে। বিশেষ প্রাপ্তি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সক্রিয় মহিলা ফুটবলার ও রেফারিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ভাল লাগে বাংলার শান্তি মল্লিক, মণিপুরের বেমবেম দেবীর লড়াইয়ের আনুপূর্বিক বিবরণ।

সোমনাথ হোর: স্নেহ ও সান্নিধ্যস্বপন

কুমার ঘোষ

৩৫০.০০

বইওয়ালা বুক ক্যাফে

মিতায়তন বইটির মূল অংশটি এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, পঁচিশ বছর আগে একটি পত্রিকার জন্য যা নিয়েছিলেন স্বপন কুমার ঘোষ। ভারতশিল্পে— বিশেষত ছাপচিত্র ও ভাস্কর্যে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন শিল্পী সোমনাথ হোর, তাঁর দীর্ঘ কয়েক দশকের সঙ্গ পেয়েছেন লেখক, গ্রন্থশিরোনামে তাই ‘স্নেহ’ ও ‘সান্নিধ্য’ শব্দ দু’টি। প্রথমাংশে একটি প্রাঞ্জল গদ্যে সোমনাথ ও রেবা হোরের স্নেহময়তা তুলে ধরেছেন লেখক, সুরটি এখানে ব্যক্তিগত হলেও শিল্পী দম্পতির মানবিক আদর্শময় জীবনযাপনকে তুলে ধরে। আর সাক্ষাৎকারে লেখকের প্রশ্নগুলির উত্তরে অকপট সোমনাথ হোর তুলে ধরেছেন চট্টগ্রামে তাঁর শিকড়-কথা, শিল্পী চিত্তপ্রসাদের ‘মেন্টরিং’, কলকাতা-পর্ব, রাজনৈতিক ও কমিউনিস্ট সত্তা, কমিউন-বাস ও ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’-এর দিনগুলির কথা; পরে দিল্লি ও শান্তিনিকেতনে অধ্যাপনা ও শিল্পজীবনের নানা প্রসঙ্গ। শিল্প তো কালবিচ্ছিন্ন হতে পারে না, সোমনাথে হোরের শিল্পযাপনে তাই নানা চরিত্রের আনাগোনা: মুজাফ্ফর আহমেদ নন্দলাল বসু বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় রামকিঙ্কর বেজ জ্যোতি বসু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তারই গায়ে গায়ে রয়েছে ওঁর লালবাঁধে বাড়ি তৈরি করে থাকা, কোনও দিন বিদেশ যেতে না চাওয়া— ইত্যাদি জনকৌতূহল-উদ্রেককারী সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা, ওঁরই মুখে। বিশেষ প্রাপ্তি লেখকের সংগ্রহে থাকা শিল্পীর চিত্রকৃতির প্রতিলিপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement